ধম্মইনফোধম্মইনফোধম্মইনফো
Font ResizerAa
  • গৌতম বুদ্ধের জীবনী
  • সর্দ্ধম নীতি ও শিক্ষা
  • ইতিহাস
  • সংস্কৃতি
  • সাহিত্য
  • জীবনী
  • প্রবন্ধ
  • সংবাদ
আপনি অধ্যায়ন করছেন: বৌদ্ধ ধর্মে ভিক্ষুর পরিচয়
Share
ধম্মইনফোধম্মইনফো
Font ResizerAa
Search
  • গৌতম বুদ্ধের জীবনী
  • সর্দ্ধম নীতি ও শিক্ষা
  • ইতিহাস
  • সংস্কৃতি
  • সাহিত্য
  • জীবনী
  • প্রবন্ধ
  • সংবাদ
Have an existing account? সাইন ইন
আমাদের অনুসরণ করুন
© 2022 Foxiz News Network. Ruby Design Company. All Rights Reserved.
ধম্মইনফো > Blog > সাহিত্য > প্রবন্ধ > বৌদ্ধ ধর্মে ভিক্ষুর পরিচয়
প্রবন্ধ

বৌদ্ধ ধর্মে ভিক্ষুর পরিচয়

বরসম্বোধি ভিক্ষু
সর্বশেষ আপডেট: April 22, 2024 12:49 am
বরসম্বোধি ভিক্ষু
Share
SHARE

পালি সাহিত্যে দু’প্রকারের ভিক্ষুর পরিচয় পাওয়া যায়। বিনয় পিটকে ভিক্ষুর যে সংজ্ঞা পাওয়া যায় তা সুত্র পিটকে ভিন্নতর। যেমনঃ ‘উপসম্পন্নেন ভিক্খূনা মেথুনো ধম্মো ন পটিসেবিতব্বো’ । (কম্মবাচা প্রথম অকরণীয় বর্ণনা) অর্থাৎ উপসম্পন্ন ভিক্ষু কর্তৃক মৈথুন (কাম ) সেবন করা উচিত নয়। এখানে যে ভিক্ষুর উল্লেখ করা হয়েছে তাঁরা অবশ্যই মুণ্ডিত মস্তক, দাড়ি-গোপহীন, কাসায় বস্ত্রধারী, গৃহত্যাগী এবং সংঘ কর্তৃক বিধি সম্মতভাবে জ্ঞপ্তি চতুর্থ কর্মবাচা পাঠের মাধ্যমে উপসম্পন্ন ভিক্ষু। এভাবে সমগ্র বিনয় পিটকে সমস্ত বিধি নিষেধ যা আরোপিত হয়েছে সমস্তই বিনয়ানুসারে উপসম্পন্ন ভিক্ষুর জন্যই।

আরেক প্রকারের ভিক্ষুর উল্লেখ সুত্র পিটকে দেখা যায়। এখানে উল্লিখিত ভিক্ষু বিনয় বিধিমতে উপসম্পন্ন হতে হবে তেমন বাদ্যবাদকতা নাই। যিনি গৃহত্যাগী বা গৃহবাসী হয়ে ধ্যান-ভাবনার মাধ্যমে নিরন্তর লোভ-দ্বেষ-মোহ ক্ষয়ের সাধনায় সংসার দুঃখ হতে মুক্তি তথা নির্বাণ লাভের প্রচেষ্টায় রত আছেন তিনিই ভিক্ষু। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যে পাঁচজন ঋষিকে উপলক্ষ্য করে বারাণসীর সন্নিকটে সারনাথের ইসিপতনে বুদ্ধ যে তাঁর প্রথম ধর্ম ভাষন ‘ধর্মচক্র প্রবর্তন সুত্র’ দেশনা করেছেন তাঁরা কেহই দাড়ি-গোঁপহীন মুণ্ডিত মস্তক কিংবা বিনয় বিধি মতে উপসম্পন্ন ভিক্ষু ছিলেন না। তাঁরা ছিলেন জটা ধারী ও দাড়ি-গোপ বিশিষ্ট গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী। কিন্তু দেশনার শুরুতেই বুদ্ধ তাঁদেরকে ভিক্ষু বলে আন্তরিক সম্বোধন করলেন এভাবে – ‘দ্বে’মে ভিক্খবে অন্তা পব্বজ্জিতেন ন সেবিতব্বা’ ।অর্থাৎ ভিক্ষুগণ! প্রব্রজ্যিতদের দ্বারা দু’টি অন্ত (চরম পথ) সেবন করা উচিত নয়। ধর্মচক্র প্রবর্তন সুত্রে বর্ণিত পাঁচজন ঋষিকে বুদ্ধ কেন ভিক্ষু সম্বোধন করলেন? ইহার তাৎপর্য কি? এ সম্পর্কে আমাদেরকে গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করে দেখতে হবে। সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ ধর্মপদে ‘ভিক্ষু বর্গ’ নামে পৃথক একটি অধ্যায় রয়েছে। এ অধ্যায়ে সর্বমোট তেইশটি গাথা রয়েছে। সব ক’টি গাথায় বুদ্ধ ভিক্ষুর সংজ্ঞা প্রদর্শন করতে ইন্দ্রিয় সংযমী ও লোভ-দ্বেষ-মোহ ক্ষয়কারীকেই নির্দেশ প্রদান করেছেন। ভিক্ষুবর্গের প্রথম গাথায় উক্ত হয়েছে-

চক্খুনা সংবরো সাধু, সাধু সোতেন সংবরো

ঘাণেন সংবরো সাধু, সাধু জিহ্বায় সংবরো

- Advertisement -

কায়েন সংবরো সাধু, সাধু বাচায় সংবরো

মনসা সংবরো সাধু, সাধু সব্বত্থ সংবরো

সব্বত্থ সংবুতো ভিক্খু সব্ব দুক্খা পমুচ্চতি (৩৬০-৩৬১)

চোখের সংযম সাধু (উত্তম), কানের সংযম সাধু, নাকের সংযম সাধু, জিহ্বার সংযম সাধু। কায়ের সংযম সাধু, বাক্যের সংযম সাধু, মনের সংযম সাধু। সমস্ত ইন্দ্রিয়ের সংযম সাধন উত্তম। ভিক্ষু যিনি সর্ব ইন্দ্রিয়ের সংযম অভ্যাস করেন তিনি সর্ব দুঃখ হতে মুক্ত হন। এখানে বুদ্ধ ভিক্ষু বলতে আগারিক বা অনাগারিক যাঁরাই সাধনা-ভাবনায় নিরন্তর রত আছেন তাঁদেরকেই বুঝিয়েছেন। ধর্মট্ঠ বর্গে বুদ্ধ আরো পরিস্কারভাবে ভিক্ষুর স্বরূপ বর্ণনা করেছেন এভাবে-

ন তেন ভিক্খু (সো) হোতি যাবতা ভিক্খতে পরে

বিস্সং ধম্মং সমাদায় ভিক্খু হোতি ন তাবতা।

যো’ধ পুঞ্ঞঞ্চ পাপঞ্চ বাহিত্বা ব্রহ্মচরিযবা

সঙ্খায় লোকে চরতি স বে ভিক্খু’তি পবুচ্চতি। (২৬৬-২৬৭)

কেহ ভিক্ষাজীবি হলেই কেবল ভিক্ষু হয়না। বিসম ধর্ম অর্থাৎ লোভ-দ্বেষ-মোহ এবং ক্লেশাদি যুক্ত চীবরধারী হলেও ভিক্ষু হয়না। যিনি সাংসারিক পাপ-পুণ্যের ঊর্ধে উঠে ব্রহ্মচর্য হন এবং সংস্কার সমূহ পূর্ণরূপে জ্ঞাত হয়ে সংসারে বিচরণ করেন তিনিই প্রকৃত ভিক্ষুরূপে অভিহিত হন। যিনি নিজেকে চীবরে আবৃত করে মুণ্ডিত মস্তক হয়ে ভিক্ষাজীবি হন তিনি ভিক্ষু হন না। ততাঁদের ভিক্ষুত্ব কেবল নামমাত্র। আচার্য বুদ্ধঘোষ তাঁর বিরচিত সুবিখ্যাত গ্রন্থ ‘বিসুদ্ধি মার্গের’ শীল নির্দেশে ভিক্ষুর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন-সংসার ভয়ং ইক্খতি’তি ভিক্খু’ অর্থাৎ যিনি সংসারের ভয়কে দর্শন করেন তিনিই ভিক্ষু। এখানে সংসারের ভয় সমূহ কি? জন্ম-বৃদ্ধত্ব-ব্যাধি-মৃত্যু-প্রিয়ের বিয়োগ-অপ্রিয়ের সংযোগ-কাম্য বস্তর অলাভ এবং সংক্ষেপে পঞ্চ স্কন্ধের প্রতি আসক্তি জনিত যে দুঃখের সূচনা হয় এ দুঃখ-ভয় হতে পরিত্রান কামনায় যিনি অকুশল মূল (লোভ-দ্বেষ-মোহ) ধ্বংসের চেষ্টায় সর্বদা রত আছেন তিনিই ভিক্ষু পদবাচ্যে ভূষিত হন। অতএব এ সংজ্ঞানুসারে পঞ্চ ঋষিদের বুদ্ধের ভিক্ষু সম্বোধন যথার্থ। কোণ্ডাঞ্ঞো, বপ্প, ভদ্দিয়, অস্সজি ও মহানাম-এ পঞ্চ ঋষিগণ প্রত্যেকেই সংসার দুঃখের অবসান কামনায় গৃহত্যাগ করে নিরন্তর সাধনায় রত ছিলেন।

কোন কুলপুত্র যখন প্রব্রজ্যা প্রার্থনা করেন প্রথমেই বলে থাকেন ‘ভদন্ত! আমি সংসার দুঃখ নিরসন করে নির্বাণ সাক্ষাতের জন্য কাষায় বস্ত্র গ্রহণ করছি’। ইহা ব্যতীত অন্য কোন প্রার্থনা করে কেহ ভিক্ষু-শ্রামণ হয়না। অধিকাংশ ভিক্ষু-শ্রামণের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রার্থনার সাথে জীবন যাত্রার কোন সম্পর্ক নাই বা প্রায়ই থাকেনা। কামভোগী গৃহস্থদের ন্যায় গৃহী পেশায় বা গৃহীদের ন্যায় কামনা-বাসনায় জর্জরিত হয়ে ইন্দ্রিয়াদির আসক্তিতে নিজেদের ভাসিয়ে দেয়। পৌরহিত্য, চাকরিরুপ দাস্যবৃত্তি, ঝার-ফুক, তাবিচ-কবচ দেওয়া, হস্তরেখা গণনা, ভবিষ্যদ্বাণী বলা, অনাথদের মুখের ভাত কেড়ে বিলাস বহূল জীবন-যাপন, ঘটকালী ইত্যাদি হীন কর্মকে এখন অনেক ভিক্ষুরা পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ধর্ম-বিনয়ে অনভিজ্ঞ কোন কোন উপাসক-উপাসিকারাও এদের দ্বারা নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার মানসে দু’হাত তুলে তাঁদের গুণকীর্তন করে আরো অপকর্ম করতে উৎসাহিত করে যাচ্ছেন।

উপসম্পদার সময় সীমাতে (উপসম্পদার স্থান) সংঘ সম্মুখে যে কয়টি অন্তরায়কর ধর্ম (Stumbling Block) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় সে গুলোর অন্যতম হচ্ছে ‘তুমি রাজ ভৃত্য বা চাকরি জীবি কিনা’? (নহি রাজভটো?) উপসম্পদা প্রার্থী উত্তর দেন আমি রাজভৃত্য নই। আমরা সীমাকে এবং সংঘকে অত্যন্ত পবিত্র বলে গণ্য করি। এমনতর পবিত্র স্থানে সুপবিত্র সংঘ সম্মুখে যে স্বীকারোক্তি প্রদান করে উপসম্পদা গ্রহণ করি তার প্রতিও আমাদের কোন ভ্রূক্ষেপ নাই। আমাদের অনেকেই গৃহী পেশা দাস্যবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে সীমাকে যেমন কলঙ্কিত করছি তেমনি সংঘের প্রতিও চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করছি নয়কি? তাঁরা কি সংঘের প্রতারক ভিক্ষু নন? আজ তাঁদের অনেকেই আবার ধর্ম-বিনয়ের বয়ান করতে দেখা যায়। আপনি আচরি ধর্ম অপরে শেখালে তা অধিকতর ফলপ্রসু হয়।

উপসম্পদার সময় সীমাতে আরো প্রতিজ্ঞা করা হয় ‘রু্খমূলসেনাসনং নিস্সয় পব্বজ্জা তত্থতে যাবজ্জীবং উস্সাহো করণীযো । ……….( কম্মবাচা, ৩য় নিস্সয় বণ্ণনা) অর্থাৎ অতিরিক্ত লাভ হিসেবে কেহ দোচালা বিশিষ্ট বিহার, উচ্চ বহূতলা বিশিষ্ট ভবন, সমতল চাদ বিশিষ্ট প্রাসাদ, হর্ম্য, গুহা প্রভৃতি তৈরী করে দান না দিলে গাছের নীচেই হবে উপসম্পন্ন ভিক্ষুর আশ্রয় বা বাসস্থান। সীমায় সংঘ সম্মুখে করা এ শপথকেও বেমালুম ভুলে গিয়ে বর্তমান ভিক্ষুদের অনেকেই বসবাস করছেন ভারা গৃহে, কোয়াটার্সে, স্বনির্মিত বিহারে। তাঁদেরকে উপাসাক-উপাসিদের নির্মিত বিহারে চারি প্রত্যয় (আহার, বাসস্থান, বস্ত্র ও ঔষধ-পথ্য) দিয়ে থাকার অহবান জানালে তাঁরা বলে থাকেন আমরা দায়কদের বিহারে পরাধীন থাকতে চাইনা। আমরা স্বাধীন থাকব। ইহার অর্থ হচ্ছে স্বেচ্ছাচারিতা। দায়কদের বিহারে ইচ্ছামত আচার-আচরণ করতে পারবেনা, দুর্বিনয়-দুঃশীলতা দায়কের দৃষ্টি এড়াতে পারবেনা, সমালোচিত হবে। এ ভয়ে ইদানীং কালে ভিক্ষুদের অনেকের মধ্যেই ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

মহাকারুণিক বুদ্ধ ভিক্ষুদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন-‘ভিক্ষুগণ! তোমরা এমন কোন আচরণ করবে না যাতে শ্র্দ্ধাবানদের শ্রদ্ধা বিনষ্ট হয়, এবং এমন আচরণ করবে যেন শ্রদ্ধাবানদের শ্রদ্ধা উত্তরোত্তর বর্ধিত হয়’। বর্তমানের অনেক উপাসক-উপাসিকাদের আক্ষেপ করে বলতে প্রায়ই শোনা যায় কোন কোন ভিক্ষু এমন আচার-আচরণ করেন তাতে ভিক্ষুদের প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা-ভক্তি ধরে রাখতে কষ্ট হয়। তাঁরা বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাকে দুর্বলতা মনে করে উপাসক-উপাসিকাদের প্রতারণা করে থাকেন।

লোকালয়ে অবস্থানকারী ভিক্ষুদের অবিনয়াচার জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে অনেকে এখন অনুরক্ত হয়ে পড়েছেন বনে-জঙ্গলে, শ্মশানে-বৃক্ষমূলে, অরণ্যে বসবাসকারী অল্পাহার ও অল্পে তুষ্ট ভিক্ষুদের প্রতি। তবে ইহা কেবল এখন নয় বুদ্ধের সময়কাল হতে দেখা গিয়েছে গ্রন্থধূর থেকেও বিদর্শন ধূর অনুসরণকারী ভিক্ষুরা শ্রদ্ধা-সম্মান অধিকতর পেয়ে আসছেন। আর ইহারই কিছু সুযোগ নিয়ে এখন অনেক ভিক্ষুরা অল্প কয়েকমাস কিংবা কয়েক বছর অরণ্যাদিতে ধ্যান-ভাবনা করে মার্গলাভী, আর্য-শ্রাবক, আর্য পুদ্গল, অরহত, ষড়াভিজ্ঞা অরহত, শ্রাবক বুদ্ধ, অনুবুদ্ধ সহ বিবিধ অভিধায় আখ্যায়িত হয়ে বহাল তবিয়তে আত্ম প্রসাদে নিমগ্ন আছেন। অনেক সময় অন্যেরা যখন এদের সমাোলচনা করে থাকেন তখন তাঁরা বা তাঁদের ভক্তরা বলে থাকেন এগুলো তো অনুসারীরাই প্রচার করছেন। অনুসারীরা প্রচার করলেও যাঁদের উদ্দেশ্যে উপরোক্ত অভিধা সমূহ ব্যবহৃত হচ্ছে তাঁদের কেহ তো তাঁদের জন্য এ সমস্ত অভিধা প্রচার না করতে নিষেধ করেছেন বলে এযাবত লিখিত কিংবা মুখে বলে নিষেধ করেছেন কিনা আমার জানা নাই। অতএব, নীরবতা সম্মতির লক্ষণ বলে ধরে নেয়া হয়। ইহা আরেক প্রকারের প্রতারণা। প্রাতিমোক্ষে চতুর্থ পারাজিকা বর্ণনায় উক্ত হয়েছে-

‘যদি কোন ভিক্ষু ধ্যান-সমাধি লাভ না করেও অধিকতর শ্রদ্ধা-ভক্তি, লাভ-সৎকার ইত্যাদি পাওয়ার প্রত্যাশায় উপাসক-উপাসিকাদেরকে ধ্যান-সমাধি লাভ করেছে বলে মিথ্যা প্রচারে নিরত থাকেন তিনি ভিক্ষু ধর্ম হতে চ্যুত হন অর্থাৎ পারাজিকা প্রাপ্ত হন’। বিনয় পিটকে আরো বলা হয়েছে- ‘সম্পজানো মুসাবাদো খো পনাযস্মন্তো অন্তরাযিকো ধম্মো বুত্তো ভগবতা’ -সম্প্রজ্ঞান চিত্তে বা ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলাকে ‘অন্তরায়িক ধর্ম’ বলে বুদ্ধ কর্তৃক উক্ত হয়েছে। কিসের অন্তরায় হয়? ‘কিস্স অন্তরাযিকো ? পঠমস্স ঝানস্স……, দুতিযস্স ঝানস্স………., ততিযস্স ঝানস্স…………, চতুত্থস্স ঝানস্স………., বিমোক্খং……….., সমাধিং…………….,সমাপত্তিং…………..নেক্খম্মানং………….., নিস্সরানং বিবেকানং কুসলানং ধম্মানং অধিগমায অন্তরাযিকো’-অন্তরায় হয় প্রথম ধ্যান, দ্বিতীয় ধ্যান, তৃতীয় ধ্যান, চতুর্থ ধ্যান, ধ্যানের, বিমুক্তির, সমাধির, সমাপত্তির, নৈষ্ক্রম্যের, মোক্ষের, অনাসক্তির ও নির্বাণের’। (বিনয় ৩য় খণ্ড, বার্মিজ সংস্করণ, পৃ-১৪২)।

পালি সাহিত্যে দেখা যায় ভিক্ষু হোক কিংবা গৃহস্থ হোক যাঁরা মৈত্রী ভাবনা করেন, অহোরাত্রী মৈত্রী চিত্তে বিহার (বসবাস) করেন তাঁরা ইহ জীবনে যে দশটি সুফল লাভ করেন তার অন্যতম অর্থাৎ দশম সুফল হল তাঁরা সজ্ঞানে মৃত্যু বরণ করেন (অসম্মুল্হো কালং করোতি)। অঙ্গুত্তর নিকায়ের ‘মেত্তানিসংস সুত্ত’ দ্রষ্টব্য। সজ্ঞানে মৃত্যু বরণ করতে কোন মার্গফল লাভীর প্রয়োজন হয় না। মৈত্রী বিহারই যথেষ্ট। কিন্তু আমাদের দেশে অরহত বলে বহূল প্রচারিতকেও নির্বাক বা মুর্চা প্রাপ্ত হয়ে মৃত্যু হতে দেখে মনের মধ্যে সতঃই জিজ্ঞাসার উদয় হচ্ছে উক্ত অরহত কি তাহলে ক্রোধী বা অমৈত্রী পরায়ন ছিলেন? পালি সাহিত্যে আরো পরিলক্ষিত হয়-

জীবিতং ব্যাধি কালো চ দেহ নিকখেপনং গতি,

পষ্ণেতে জীবলোকস্মিং অনিমিত্তা ন ঞাযরে। (সারার্থ প্রকাশিনী, সংযুক্ত নিকায় অর্থকথা)

অরহত ব্যতীত জীবনের যে পাঁচটি বিষয় সাধারণ মানুষের জানা অসম্ভব সেগুলি হল কার আয়ু কতদিন আছে, কোন ব্যাধি কখন আক্রমণ করবে, দিবা-রাত্রির কোনভাগে মৃত্যু হবে, ঘরে কি বাহিরে অথবা জলে কি স্থলে কোথায় মৃত্যু হবে এবং মৃত্যুর পর কোথায় উৎপন্ন হবে। অরহতগণ এ বিষয় সমূহ সঠিক জেনে পূর্ব থেকে সবকিছুর যথাযথ দিন-ক্ষণ নিরুপন করে ঘোষণা করতে পারেন। উপরোক্ত বিষয়ে মৃত অরহতের পূর্ব ঘোষণা ছিল কি? যদি না থাকে অথবা বলতে অসমর্থ হন তাহলে এ প্রতারণা আর কতদিন চলবে? ধর্মের স্বার্থে এবং আত্ম ও পর কল্যাণে শীঘ্রই সত্যকে উম্মোচন করা উচিত।

আমরা অতীতের দিকে থাকালে দেখি, ভিক্ষুরা ভক্তদের কাছ হতে এত বেশী দান ও দানীয় সামগ্রী সংগ্রহ করেছিলেন এক একটি বিহার বা সংঘারাম প্রাচুর্যে ভরপুর হয়ে উঠেছিল। ভিক্ষুরাও এত বেশী ভোগ-বিলাস ও আরামপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন যে বহূ জনের হিতে ও কল্যাণে দিকে দিকে ধর্ম প্রচারের জন্যে ছড়িয়ে পড়ার বুদ্ধের যে নির্দেশ তার গুরুত্বই ভিক্ষুরা হারিয়ে ফেললেন। ঘরে ঘরে কিংবা গ্রামে গ্রামে বিচরণ করে পিণ্ডপাত সংগ্রহের মাধ্যমে ভিক্ষুত্ব জীবনের এ আবশ্যিক ব্রতও ভিক্ষুরা রক্ষা করতে না পারায় ধীরে ধীরে তাঁরা জনসংযোগও হারিয়ে ফেলেন। গৃহস্থদের ন্যায় ভিক্ষুরাও অতি মাত্রায় ইন্দ্রিয়াসক্ত হয়ে পড়লে তাঁরা ভক্তদের শ্রদ্ধা-ভক্তির আকর্ষণ ধরে রাখতে পারলেন না। ভিক্ষুগণ ধ্যান-সমাধির মাধ্যমে আত্ম শুদ্ধি করে ভিক্ষু কর্তব্য সম্পাদনের পরিবর্তে পরনিন্দা ও পরচর্চায় অধিকতর সময় ক্ষেপন করতে লাগলেন। নানা মত ও দলে বিভক্ত হয়ে পড়লেন ভিক্ষু সংঘ। সংঘ শক্তি আর অবশিষ্ট থাকল না। সম্পদের প্রাচুর্যে ভরপুর বিহার ও আরামপ্রিয় ভিক্ষুরা শত্রুদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলে তাঁদের রক্ষার জন্য তেমন উৎসাহ বা উদ্যোগ ভক্তদের কাছ হতে আসেনি। ফলে ঝর-তুফানে নড়বড়ে ভিতের যে অবস্থা সে অবস্থাই আমরা দেখতে পেয়েছি জন্মভূমি হতে সদ্ধর্মের তিরোধানের কারণরূপে।

ইতিহাস হতেও আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি না। বর্তমানে অধিকাংশ ভিক্ষুরা মনে করেন, যে কোন প্রকারে নানা জন হতে অর্থ আদায় করে একটা আকর্ষনীয় দৃষ্টি নন্দন এক বা একাধিকতল বিশিষ্ট বিহার নির্মাণ করাই ভিক্ষু কর্তব্য। এ কর্তব্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ভিক্ষুর নাওয়া-খাওয়ার ঠিক থাকেনা, বিরাম- বিশ্রাম থাকেনা। যে ভিক্ষু তা করতে সমর্থ হন ধর্ম-বিনয়ে অনভিজ্ঞ দায়ক-দায়িকারা তাঁর প্রশংসায় পষ্ণমুখ থাকেন। আর যে ভিক্ষুগণ বিনয়ানুকুল জীবন-যাপন করতে গিয়ে ছল-চাতুরীর আশ্রয় না করে আপন ধ্যান-সাধনায় নিমগ্ন থাকেন তাঁরা নিন্দুকদের দ্বারা নিষ্কর্মা বা অকর্মণ্য বলে সমালোচিত হন। ভিক্ষুদের অনেকে এখন ধর্ম-বিনয় অধ্যয়নের চেয়ে পার্থিব অর্থকরী শিক্ষায় আগ্রহী বেশী দখা যায়। বর্তমান বস্তুবাদ ও ভোগবাদের যুগে ভিক্ষুরাও এখন ইহার থাবা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারছেন না। অনেকে এখন বস্তু ও ভোগবাদের নিত্য নতূন শিকারে আক্রান্ত। তাঁদের হূ-হূ করে বেড়ে উঠা চাহিদা পুরণ করতে আধুনিক উপায়ে নানাভাবে বস্তু দানের মাহাত্য প্রচারে নিরত থাকতে দেখা যাচ্ছে ভিক্ষুদেরকে। সুরম্য বিহার ও আনুসাঙ্গিক বস্তু সামগ্রীর সমন্বয়ে রাজকীয় প্রাসাদোপম ভবনে বসবাসের স্বাদ পেয়ে ভিক্ষুরা আত্ম ও ইন্দ্রিয় সংযমের পরিবর্তে অধিকতর ইন্দ্রিয়াসক্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। যা ভিক্ষুত্ব জীবনের পরিহানীর অন্যতম প্রধান কারণ। যেখানে ভিক্ষুদের শীল-সমাধি-প্রজ্ঞা অনুশীলনের ও ধর্ম শাস্ত্র অধ্যয়ন বা গবেষনা করার প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা সেখানে প্রতিযোগিতা হচ্ছে কার থেকে কে বেশী সুন্দর ও বড় বিহার করতে পারে এবং কে বেশী পার্থিব ভোগ সম্পদের মালিক হতে পারে। ইহা করতে অসমর্থ হলে মনে করেন যেন সাধনায় অকৃতকার্য।

কোন কোন ভিক্ষুরা মনে করেন যজমান ও পৌরহিত্য করাই তাঁদের করণীয়। এ সমস্ত কর্ম সম্পাদনের জন্যই তাঁদের ভিক্ষুত্ব জীবন। তাঁদের না আছে ধ্যান চর্চা না আছে শাস্ত্র চর্চা। ইদানীংকালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যে ভিক্ষুরা শাস্ত্র ও ধ্যান আয়ত্ব করে গৃহস্থদের শিক্ষা দেবেন সে ক্ষেত্রে এখন অধিকাংশ ধ্যান কেন্দ্রে ধ্যান শিক্ষা দিচ্ছেন বা অনুশীলন করছেন গৃহীরা। ভিক্ষুরা প্রায় নাই বললেই চলে। আবার অনেক ধ্যান কেন্দ্রের আচার্য গৃহস্থ। ভিক্ষুরা তাঁদের কর্তব্য কর্ম হতে যে কত দূরে অবস্থান করছেন উপরোক্ত কয়েকটি উদাহরণই যথেষ্ট।

বর্তমান ভিক্ষুদের যে সমস্ত চিত্র এখানে তুলে ধরা হল তা কোন মতেই কাউকে হেয় করার উদ্দেশ্যে নয়। সেরকম মানসিকতাও আমার নাই। ডাক্তার যেমন প্রথমে রোগীর ক্ষত অংশের দিকেই দৃষ্টিপাত করেন তেমনি একই লক্ষ্যে কতিপয় বিষয় এখানে আলোচনা করা হয়েছে। ক্ষতহীন সুস্থ্ ভিক্ষু জীবনই আমাদের কাম্য।

বৌদ্ধ ধর্মে ভিক্ষুর পরিচয় ডঃ বরসম্বোধি ভিক্ষু | পালি সাহিত্যে দু’প্রকারের ভিক্ষুর পরিচয় পাওয়া যায়। বিনয় পিটকে ভিক্ষুর যে সংজ্ঞা পাওয়া যায় তা সুত্র পিটকে ভিন্নতর। যেমনঃ ‘উপসম্পন্নেন ভিক্খূনা মেথুনো ধম্মো ন পটিসেবিতব্বো’ । (কম্মবাচা প্রথম অকরণীয় বর্ণনা) অর্থাৎ উপসম্পন্ন ভিক্ষু কর্তৃক মৈথুন (কাম ) সেবন করা উচিত নয়। এখানে যে ভিক্ষুর উল্লেখ করা হয়েছে তাঁরা অবশ্যই মুণ্ডিত মস্তক, দাড়ি-গোপহীন, কাসায় বস্ত্রধারী, গৃহত্যাগী এবং সংঘ কর্তৃক বিধি সম্মতভাবে জ্ঞপ্তি চতুর্থ কর্মবাচা পাঠের মাধ্যমে উপসম্পন্ন ভিক্ষু। এভাবে সমগ্র বিনয় পিটকে সমস্ত বিধি নিষেধ যা আরোপিত হয়েছে সমস্তই বিনয়ানুসারে উপসম্পন্ন ভিক্ষুর জন্যই। আরেক প্রকারের ভিক্ষুর উল্লেখ সুত্র পিটকে দেখা যায়। এখানে উল্লিখিত ভিক্ষু বিনয় বিধিমতে উপসম্পন্ন হতে হবে তেমন বাদ্যবাদকতা নাই। যিনি গৃহত্যাগী বা গৃহবাসী হয়ে ধ্যান-ভাবনার মাধ্যমে নিরন্তর লোভ-দ্বেষ-মোহ ক্ষয়ের সাধনায় সংসার দুঃখ হতে মুক্তি তথা নির্বাণ লাভের প্রচেষ্টায় রত আছেন তিনিই ভিক্ষু। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যে পাঁচজন ঋষিকে উপলক্ষ্য করে বারাণসীর সন্নিকটে সারনাথের ইসিপতনে বুদ্ধ যে তাঁর প্রথম ধর্ম ভাষন ‘ধর্মচক্র প্রবর্তন সুত্র’ দেশনা করেছেন তাঁরা কেহই দাড়ি-গোঁপহীন মুণ্ডিত মস্তক কিংবা বিনয় বিধি মতে উপসম্পন্ন ভিক্ষু ছিলেন না। তাঁরা ছিলেন জটা ধারী ও দাড়ি-গোপ বিশিষ্ট গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী। কিন্তু দেশনার শুরুতেই বুদ্ধ তাঁদেরকে ভিক্ষু বলে আন্তরিক সম্বোধন করলেন এভাবে – ‘দ্বে’মে ভিক্খবে অন্তা পব্বজ্জিতেন ন সেবিতব্বা’ ।অর্থাৎ ভিক্ষুগণ! প্রব্রজ্যিতদের দ্বারা দু’টি অন্ত (চরম পথ) সেবন করা উচিত নয়। ধর্মচক্র প্রবর্তন সুত্রে বর্ণিত পাঁচজন ঋষিকে বুদ্ধ কেন ভিক্ষু সম্বোধন করলেন? ইহার তাৎপর্য কি? এ সম্পর্কে আমাদেরকে গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করে দেখতে হবে। সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ ধর্মপদে ‘ভিক্ষু বর্গ’ নামে পৃথক একটি অধ্যায় রয়েছে। এ অধ্যায়ে সর্বমোট তেইশটি গাথা রয়েছে। সব ক’টি গাথায় বুদ্ধ ভিক্ষুর সংজ্ঞা প্রদর্শন করতে ইন্দ্রিয় সংযমী ও লোভ-দ্বেষ-মোহ ক্ষয়কারীকেই নির্দেশ প্রদান করেছেন। ভিক্ষুবর্গের প্রথম গাথায় উক্ত হয়েছে- চক্খুনা সংবরো সাধু, সাধু সোতেন সংবরো ঘাণেন সংবরো সাধু, সাধু জিহ্বায় সংবরো কায়েন সংবরো সাধু, সাধু বাচায় সংবরো মনসা সংবরো সাধু, সাধু সব্বত্থ সংবরো সব্বত্থ সংবুতো ভিক্খু সব্ব দুক্খা পমুচ্চতি (৩৬০-৩৬১) চোখের সংযম সাধু (উত্তম), কানের সংযম সাধু, নাকের সংযম সাধু, জিহ্বার সংযম সাধু। কায়ের সংযম সাধু, বাক্যের সংযম সাধু, মনের সংযম সাধু। সমস্ত ইন্দ্রিয়ের সংযম সাধন উত্তম। ভিক্ষু যিনি সর্ব ইন্দ্রিয়ের সংযম অভ্যাস করেন তিনি সর্ব দুঃখ হতে মুক্ত হন। এখানে বুদ্ধ ভিক্ষু বলতে আগারিক বা অনাগারিক যাঁরাই সাধনা-ভাবনায় নিরন্তর রত আছেন তাঁদেরকেই বুঝিয়েছেন। ধর্মট্ঠ বর্গে বুদ্ধ আরো পরিস্কারভাবে ভিক্ষুর স্বরূপ বর্ণনা করেছেন এভাবে- ন তেন ভিক্খু (সো) হোতি যাবতা ভিক্খতে পরে বিস্সং ধম্মং সমাদায় ভিক্খু হোতি ন তাবতা। যো’ধ পুঞ্ঞঞ্চ পাপঞ্চ বাহিত্বা ব্রহ্মচরিযবা সঙ্খায় লোকে চরতি স বে ভিক্খু’তি পবুচ্চতি। (২৬৬-২৬৭) কেহ ভিক্ষাজীবি হলেই কেবল ভিক্ষু হয়না। বিসম ধর্ম অর্থাৎ লোভ-দ্বেষ-মোহ এবং ক্লেশাদি যুক্ত চীবরধারী হলেও ভিক্ষু হয়না। যিনি সাংসারিক পাপ-পুণ্যের ঊর্ধে উঠে ব্রহ্মচর্য হন এবং সংস্কার সমূহ পূর্ণরূপে জ্ঞাত হয়ে সংসারে বিচরণ করেন তিনিই প্রকৃত ভিক্ষুরূপে অভিহিত হন। যিনি নিজেকে চীবরে আবৃত করে মুণ্ডিত মস্তক হয়ে ভিক্ষাজীবি হন তিনি ভিক্ষু হন না। ততাঁদের ভিক্ষুত্ব কেবল নামমাত্র। আচার্য বুদ্ধঘোষ তাঁর বিরচিত সুবিখ্যাত গ্রন্থ ‘বিসুদ্ধি মার্গের’ শীল নির্দেশে ভিক্ষুর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন-সংসার ভয়ং ইক্খতি’তি ভিক্খু’ অর্থাৎ যিনি সংসারের ভয়কে দর্শন করেন তিনিই ভিক্ষু। এখানে সংসারের ভয় সমূহ কি? জন্ম-বৃদ্ধত্ব-ব্যাধি-মৃত্যু-প্রিয়ের বিয়োগ-অপ্রিয়ের সংযোগ-কাম্য বস্তর অলাভ এবং সংক্ষেপে পঞ্চ স্কন্ধের প্রতি আসক্তি জনিত যে দুঃখের সূচনা হয় এ দুঃখ-ভয় হতে পরিত্রান কামনায় যিনি অকুশল মূল (লোভ-দ্বেষ-মোহ) ধ্বংসের চেষ্টায় সর্বদা রত আছেন তিনিই ভিক্ষু পদবাচ্যে ভূষিত হন। অতএব এ সংজ্ঞানুসারে পঞ্চ ঋষিদের বুদ্ধের ভিক্ষু সম্বোধন যথার্থ। কোণ্ডাঞ্ঞো, বপ্প, ভদ্দিয়, অস্সজি ও মহানাম-এ পঞ্চ ঋষিগণ প্রত্যেকেই সংসার দুঃখের অবসান কামনায় গৃহত্যাগ করে নিরন্তর সাধনায় রত ছিলেন। কোন কুলপুত্র যখন প্রব্রজ্যা প্রার্থনা করেন প্রথমেই বলে থাকেন ‘ভদন্ত! আমি সংসার দুঃখ নিরসন করে নির্বাণ সাক্ষাতের জন্য কাষায় বস্ত্র গ্রহণ করছি’। ইহা ব্যতীত অন্য কোন প্রার্থনা করে কেহ ভিক্ষু-শ্রামণ হয়না। অধিকাংশ ভিক্ষু-শ্রামণের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রার্থনার সাথে জীবন যাত্রার কোন সম্পর্ক নাই বা প্রায়ই থাকেনা। কামভোগী গৃহস্থদের ন্যায় গৃহী পেশায় বা গৃহীদের ন্যায় কামনা-বাসনায় জর্জরিত হয়ে ইন্দ্রিয়াদির আসক্তিতে নিজেদের ভাসিয়ে দেয়। পৌরহিত্য, চাকরিরুপ দাস্যবৃত্তি, ঝার-ফুক, তাবিচ-কবচ দেওয়া, হস্তরেখা গণনা, ভবিষ্যদ্বাণী বলা, অনাথদের মুখের ভাত কেড়ে বিলাস বহূল জীবন-যাপন, ঘটকালী ইত্যাদি হীন কর্মকে এখন অনেক ভিক্ষুরা পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ধর্ম-বিনয়ে অনভিজ্ঞ কোন কোন উপাসক-উপাসিকারাও এদের দ্বারা নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার মানসে দু’হাত তুলে তাঁদের গুণকীর্তন করে আরো অপকর্ম করতে উৎসাহিত করে যাচ্ছেন। উপসম্পদার সময় সীমাতে (উপসম্পদার স্থান) সংঘ সম্মুখে যে কয়টি অন্তরায়কর ধর্ম (Stumbling Block) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় সে গুলোর অন্যতম হচ্ছে ‘তুমি রাজ ভৃত্য বা চাকরি জীবি কিনা’? (নহি রাজভটো?) উপসম্পদা প্রার্থী উত্তর দেন আমি রাজভৃত্য নই। আমরা সীমাকে এবং সংঘকে অত্যন্ত পবিত্র বলে গণ্য করি। এমনতর পবিত্র স্থানে সুপবিত্র সংঘ সম্মুখে যে স্বীকারোক্তি প্রদান করে উপসম্পদা গ্রহণ করি তার প্রতিও আমাদের কোন ভ্রূক্ষেপ নাই। আমাদের অনেকেই গৃহী পেশা দাস্যবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে সীমাকে যেমন কলঙ্কিত করছি তেমনি সংঘের প্রতিও চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করছি নয়কি? তাঁরা কি সংঘের প্রতারক ভিক্ষু নন? আজ তাঁদের অনেকেই আবার ধর্ম-বিনয়ের বয়ান করতে দেখা যায়। আপনি আচরি ধর্ম অপরে শেখালে তা অধিকতর ফলপ্রসু হয়। উপসম্পদার সময় সীমাতে আরো প্রতিজ্ঞা করা হয় ‘রু্খমূলসেনাসনং নিস্সয় পব্বজ্জা তত্থতে যাবজ্জীবং উস্সাহো করণীযো । ……….( কম্মবাচা, ৩য় নিস্সয় বণ্ণনা) অর্থাৎ অতিরিক্ত লাভ হিসেবে কেহ দোচালা বিশিষ্ট বিহার, উচ্চ বহূতলা বিশিষ্ট ভবন, সমতল চাদ বিশিষ্ট প্রাসাদ, হর্ম্য, গুহা প্রভৃতি তৈরী করে দান না দিলে গাছের নীচেই হবে উপসম্পন্ন ভিক্ষুর আশ্রয় বা বাসস্থান। সীমায় সংঘ সম্মুখে করা এ শপথকেও বেমালুম ভুলে গিয়ে বর্তমান ভিক্ষুদের অনেকেই বসবাস করছেন ভারা গৃহে, কোয়াটার্সে, স্বনির্মিত বিহারে। তাঁদেরকে উপাসাক-উপাসিদের নির্মিত বিহারে চারি প্রত্যয় (আহার, বাসস্থান, বস্ত্র ও ঔষধ-পথ্য) দিয়ে থাকার অহবান জানালে তাঁরা বলে থাকেন আমরা দায়কদের বিহারে পরাধীন থাকতে চাইনা। আমরা স্বাধীন থাকব। ইহার অর্থ হচ্ছে স্বেচ্ছাচারিতা। দায়কদের বিহারে ইচ্ছামত আচার-আচরণ করতে পারবেনা, দুর্বিনয়-দুঃশীলতা দায়কের দৃষ্টি এড়াতে পারবেনা, সমালোচিত হবে। এ ভয়ে ইদানীং কালে ভিক্ষুদের অনেকের মধ্যেই ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মহাকারুণিক বুদ্ধ ভিক্ষুদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন-‘ভিক্ষুগণ! তোমরা এমন কোন আচরণ করবে না যাতে শ্র্দ্ধাবানদের শ্রদ্ধা বিনষ্ট হয়, এবং এমন আচরণ করবে যেন শ্রদ্ধাবানদের শ্রদ্ধা উত্তরোত্তর বর্ধিত হয়’। বর্তমানের অনেক উপাসক-উপাসিকাদের আক্ষেপ করে বলতে প্রায়ই শোনা যায় কোন কোন ভিক্ষু এমন আচার-আচরণ করেন তাতে ভিক্ষুদের প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা-ভক্তি ধরে রাখতে কষ্ট হয়। তাঁরা বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাকে দুর্বলতা মনে করে উপাসক-উপাসিকাদের প্রতারণা করে থাকেন। লোকালয়ে অবস্থানকারী ভিক্ষুদের অবিনয়াচার জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে অনেকে এখন অনুরক্ত হয়ে পড়েছেন বনে-জঙ্গলে, শ্মশানে-বৃক্ষমূলে, অরণ্যে বসবাসকারী অল্পাহার ও অল্পে তুষ্ট ভিক্ষুদের প্রতি। তবে ইহা কেবল এখন নয় বুদ্ধের সময়কাল হতে দেখা গিয়েছে গ্রন্থধূর থেকেও বিদর্শন ধূর অনুসরণকারী ভিক্ষুরা শ্রদ্ধা-সম্মান অধিকতর পেয়ে আসছেন। আর ইহারই কিছু সুযোগ নিয়ে এখন অনেক ভিক্ষুরা অল্প কয়েকমাস কিংবা কয়েক বছর অরণ্যাদিতে ধ্যান-ভাবনা করে মার্গলাভী, আর্য-শ্রাবক, আর্য পুদ্গল, অরহত, ষড়াভিজ্ঞা অরহত, শ্রাবক বুদ্ধ, অনুবুদ্ধ সহ বিবিধ অভিধায় আখ্যায়িত হয়ে বহাল তবিয়তে আত্ম প্রসাদে নিমগ্ন আছেন। অনেক সময় অন্যেরা যখন এদের সমাোলচনা করে থাকেন তখন তাঁরা বা তাঁদের ভক্তরা বলে থাকেন এগুলো তো অনুসারীরাই প্রচার করছেন। অনুসারীরা প্রচার করলেও যাঁদের উদ্দেশ্যে উপরোক্ত অভিধা সমূহ ব্যবহৃত হচ্ছে তাঁদের কেহ তো তাঁদের জন্য এ সমস্ত অভিধা প্রচার না করতে নিষেধ করেছেন বলে এযাবত লিখিত কিংবা মুখে বলে নিষেধ করেছেন কিনা আমার জানা নাই। অতএব, নীরবতা সম্মতির লক্ষণ বলে ধরে নেয়া হয়। ইহা আরেক প্রকারের প্রতারণা। প্রাতিমোক্ষে চতুর্থ পারাজিকা বর্ণনায় উক্ত হয়েছে- ‘যদি কোন ভিক্ষু ধ্যান-সমাধি লাভ না করেও অধিকতর শ্রদ্ধা-ভক্তি, লাভ-সৎকার ইত্যাদি পাওয়ার প্রত্যাশায় উপাসক-উপাসিকাদেরকে ধ্যান-সমাধি লাভ করেছে বলে মিথ্যা প্রচারে নিরত থাকেন তিনি ভিক্ষু ধর্ম হতে চ্যুত হন অর্থাৎ পারাজিকা প্রাপ্ত হন’। বিনয় পিটকে আরো বলা হয়েছে- ‘সম্পজানো মুসাবাদো খো পনাযস্মন্তো অন্তরাযিকো ধম্মো বুত্তো ভগবতা’ -সম্প্রজ্ঞান চিত্তে বা ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলাকে ‘অন্তরায়িক ধর্ম’ বলে বুদ্ধ কর্তৃক উক্ত হয়েছে। কিসের অন্তরায় হয়? ‘কিস্স অন্তরাযিকো ? পঠমস্স ঝানস্স……, দুতিযস্স ঝানস্স………., ততিযস্স ঝানস্স…………, চতুত্থস্স ঝানস্স………., বিমোক্খং……….., সমাধিং…………….,সমাপত্তিং…………..নেক্খম্মানং………….., নিস্সরানং বিবেকানং কুসলানং ধম্মানং অধিগমায অন্তরাযিকো’-অন্তরায় হয় প্রথম ধ্যান, দ্বিতীয় ধ্যান, তৃতীয় ধ্যান, চতুর্থ ধ্যান, ধ্যানের, বিমুক্তির, সমাধির, সমাপত্তির, নৈষ্ক্রম্যের, মোক্ষের, অনাসক্তির ও নির্বাণের’। (বিনয় ৩য় খণ্ড, বার্মিজ সংস্করণ, পৃ-১৪২)। পালি সাহিত্যে দেখা যায় ভিক্ষু হোক কিংবা গৃহস্থ হোক যাঁরা মৈত্রী ভাবনা করেন, অহোরাত্রী মৈত্রী চিত্তে বিহার (বসবাস) করেন তাঁরা ইহ জীবনে যে দশটি সুফল লাভ করেন তার অন্যতম অর্থাৎ দশম সুফল হল তাঁরা সজ্ঞানে মৃত্যু বরণ করেন (অসম্মুল্হো কালং করোতি)। অঙ্গুত্তর নিকায়ের ‘মেত্তানিসংস সুত্ত’ দ্রষ্টব্য। সজ্ঞানে মৃত্যু বরণ করতে কোন মার্গফল লাভীর প্রয়োজন হয় না। মৈত্রী বিহারই যথেষ্ট। কিন্তু আমাদের দেশে অরহত বলে বহূল প্রচারিতকেও নির্বাক বা মুর্চা প্রাপ্ত হয়ে মৃত্যু হতে দেখে মনের মধ্যে সতঃই জিজ্ঞাসার উদয় হচ্ছে উক্ত অরহত কি তাহলে ক্রোধী বা অমৈত্রী পরায়ন ছিলেন? পালি সাহিত্যে আরো পরিলক্ষিত হয়- জীবিতং ব্যাধি কালো চ দেহ নিকখেপনং গতি, পষ্ণেতে জীবলোকস্মিং অনিমিত্তা ন ঞাযরে। (সারার্থ প্রকাশিনী, সংযুক্ত নিকায় অর্থকথা) অরহত ব্যতীত জীবনের যে পাঁচটি বিষয় সাধারণ মানুষের জানা অসম্ভব সেগুলি হল কার আয়ু কতদিন আছে, কোন ব্যাধি কখন আক্রমণ করবে, দিবা-রাত্রির কোনভাগে মৃত্যু হবে, ঘরে কি বাহিরে অথবা জলে কি স্থলে কোথায় মৃত্যু হবে এবং মৃত্যুর পর কোথায় উৎপন্ন হবে। অরহতগণ এ বিষয় সমূহ সঠিক জেনে পূর্ব থেকে সবকিছুর যথাযথ দিন-ক্ষণ নিরুপন করে ঘোষণা করতে পারেন। উপরোক্ত বিষয়ে মৃত অরহতের পূর্ব ঘোষণা ছিল কি? যদি না থাকে অথবা বলতে অসমর্থ হন তাহলে এ প্রতারণা আর কতদিন চলবে? ধর্মের স্বার্থে এবং আত্ম ও পর কল্যাণে শীঘ্রই সত্যকে উম্মোচন করা উচিত। আমরা অতীতের দিকে থাকালে দেখি, ভিক্ষুরা ভক্তদের কাছ হতে এত বেশী দান ও দানীয় সামগ্রী সংগ্রহ করেছিলেন এক একটি বিহার বা সংঘারাম প্রাচুর্যে ভরপুর হয়ে উঠেছিল। ভিক্ষুরাও এত বেশী ভোগ-বিলাস ও আরামপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন যে বহূ জনের হিতে ও কল্যাণে দিকে দিকে ধর্ম প্রচারের জন্যে ছড়িয়ে পড়ার বুদ্ধের যে নির্দেশ তার গুরুত্বই ভিক্ষুরা হারিয়ে ফেললেন। ঘরে ঘরে কিংবা গ্রামে গ্রামে বিচরণ করে পিণ্ডপাত সংগ্রহের মাধ্যমে ভিক্ষুত্ব জীবনের এ আবশ্যিক ব্রতও ভিক্ষুরা রক্ষা করতে না পারায় ধীরে ধীরে তাঁরা জনসংযোগও হারিয়ে ফেলেন। গৃহস্থদের ন্যায় ভিক্ষুরাও অতি মাত্রায় ইন্দ্রিয়াসক্ত হয়ে পড়লে তাঁরা ভক্তদের শ্রদ্ধা-ভক্তির আকর্ষণ ধরে রাখতে পারলেন না। ভিক্ষুগণ ধ্যান-সমাধির মাধ্যমে আত্ম শুদ্ধি করে ভিক্ষু কর্তব্য সম্পাদনের পরিবর্তে পরনিন্দা ও পরচর্চায় অধিকতর সময় ক্ষেপন করতে লাগলেন। নানা মত ও দলে বিভক্ত হয়ে পড়লেন ভিক্ষু সংঘ। সংঘ শক্তি আর অবশিষ্ট থাকল না। সম্পদের প্রাচুর্যে ভরপুর বিহার ও আরামপ্রিয় ভিক্ষুরা শত্রুদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলে তাঁদের রক্ষার জন্য তেমন উৎসাহ বা উদ্যোগ ভক্তদের কাছ হতে আসেনি। ফলে ঝর-তুফানে নড়বড়ে ভিতের যে অবস্থা সে অবস্থাই আমরা দেখতে পেয়েছি জন্মভূমি হতে সদ্ধর্মের তিরোধানের কারণরূপে। ইতিহাস হতেও আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি না। বর্তমানে অধিকাংশ ভিক্ষুরা মনে করেন, যে কোন প্রকারে নানা জন হতে অর্থ আদায় করে একটা আকর্ষনীয় দৃষ্টি নন্দন এক বা একাধিকতল বিশিষ্ট বিহার নির্মাণ করাই ভিক্ষু কর্তব্য। এ কর্তব্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ভিক্ষুর নাওয়া-খাওয়ার ঠিক থাকেনা, বিরাম- বিশ্রাম থাকেনা। যে ভিক্ষু তা করতে সমর্থ হন ধর্ম-বিনয়ে অনভিজ্ঞ দায়ক-দায়িকারা তাঁর প্রশংসায় পষ্ণমুখ থাকেন। আর যে ভিক্ষুগণ বিনয়ানুকুল জীবন-যাপন করতে গিয়ে ছল-চাতুরীর আশ্রয় না করে আপন ধ্যান-সাধনায় নিমগ্ন থাকেন তাঁরা নিন্দুকদের দ্বারা নিষ্কর্মা বা অকর্মণ্য বলে সমালোচিত হন। ভিক্ষুদের অনেকে এখন ধর্ম-বিনয় অধ্যয়নের চেয়ে পার্থিব অর্থকরী শিক্ষায় আগ্রহী বেশী দখা যায়। বর্তমান বস্তুবাদ ও ভোগবাদের যুগে ভিক্ষুরাও এখন ইহার থাবা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারছেন না। অনেকে এখন বস্তু ও ভোগবাদের নিত্য নতূন শিকারে আক্রান্ত। তাঁদের হূ-হূ করে বেড়ে উঠা চাহিদা পুরণ করতে আধুনিক উপায়ে নানাভাবে বস্তু দানের মাহাত্য প্রচারে নিরত থাকতে দেখা যাচ্ছে ভিক্ষুদেরকে। সুরম্য বিহার ও আনুসাঙ্গিক বস্তু সামগ্রীর সমন্বয়ে রাজকীয় প্রাসাদোপম ভবনে বসবাসের স্বাদ পেয়ে ভিক্ষুরা আত্ম ও ইন্দ্রিয় সংযমের পরিবর্তে অধিকতর ইন্দ্রিয়াসক্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। যা ভিক্ষুত্ব জীবনের পরিহানীর অন্যতম প্রধান কারণ। যেখানে ভিক্ষুদের শীল-সমাধি-প্রজ্ঞা অনুশীলনের ও ধর্ম শাস্ত্র অধ্যয়ন বা গবেষনা করার প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা সেখানে প্রতিযোগিতা হচ্ছে কার থেকে কে বেশী সুন্দর ও বড় বিহার করতে পারে এবং কে বেশী পার্থিব ভোগ সম্পদের মালিক হতে পারে। ইহা করতে অসমর্থ হলে মনে করেন যেন সাধনায় অকৃতকার্য। কোন কোন ভিক্ষুরা মনে করেন যজমান ও পৌরহিত্য করাই তাঁদের করণীয়। এ সমস্ত কর্ম সম্পাদনের জন্যই তাঁদের ভিক্ষুত্ব জীবন। তাঁদের না আছে ধ্যান চর্চা না আছে শাস্ত্র চর্চা। ইদানীংকালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যে ভিক্ষুরা শাস্ত্র ও ধ্যান আয়ত্ব করে গৃহস্থদের শিক্ষা দেবেন সে ক্ষেত্রে এখন অধিকাংশ ধ্যান কেন্দ্রে ধ্যান শিক্ষা দিচ্ছেন বা অনুশীলন করছেন গৃহীরা। ভিক্ষুরা প্রায় নাই বললেই চলে। আবার অনেক ধ্যান কেন্দ্রের আচার্য গৃহস্থ। ভিক্ষুরা তাঁদের কর্তব্য কর্ম হতে যে কত দূরে অবস্থান করছেন উপরোক্ত কয়েকটি উদাহরণই যথেষ্ট। বর্তমান ভিক্ষুদের যে সমস্ত চিত্র এখানে তুলে ধরা হল তা কোন মতেই কাউকে হেয় করার উদ্দেশ্যে নয়। সেরকম মানসিকতাও আমার নাই। ডাক্তার যেমন প্রথমে রোগীর ক্ষত অংশের দিকেই দৃষ্টিপাত করেন তেমনি একই লক্ষ্যে কতিপয় বিষয় এখানে আলোচনা করা হয়েছে। ক্ষতহীন সুস্থ্ ভিক্ষু জীবনই আমাদের কাম্য।

বরসম্বোধি ভিক্ষু
বরসম্বোধি ভিক্ষু
Subscribe to Our Newsletter

Subscribe to our newsletter to get our newest articles instantly!

ধম্মইনফো এর সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

এই ধম্মইনফোটি শেয়ার করুন
টুইটার ইমেইল লিং কপি করুন প্রিন্ট
পূর্বের ধম্মইনফো নারী আমরা মেয়েরা কেমন আছি
পরবর্তী ধম্মইনফো বিশ্ব ধরিত্রী দিবস World Earth Day 2024: কেন পালিত হয় বিশ্ব ধরিত্রী দিবস?
আপনার ভাবনা শেয়ার করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বাধিক পঠিত ইনফো

প্রবারণা ও ফানুস
ধর্মীয় বিষয়কে উৎসবে পরিণত করার নেতিবাচক প্রভাব: প্রবারণা পূর্ণিমা ও ফানুস উড়ানো
প্রবন্ধ
নিউইয়র্ক
নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসে বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিকাণ্ড: দুইজনের মৃত্যু
সংবাদ
বাংলাদেশ
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি: ধর্মনিরপেক্ষতার সংকট ও সহিংসতার পুনরাবৃত্তি
নির্বাচিত
লুম্বিনী হাতে আঁকা ম্যাপ
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান যেভাবে খুঁজে পান এক বাঙালি
ইতিহাস ঐতিহ্য নির্বাচিত
বৌদ্ধ ভিক্ষু
বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নিরাপত্তা উদ্বেগ : তিন পার্বত্য জেলায় এ বছর ‘কঠিন চীবর দান’ না করার সিদ্ধান্ত
নির্বাচিত সংবাদ
হেনেপলা গুনারত্ন মহাথেরে
শ্রীলংকার গ্রাম থেকে আমেরিকার মহাঅরণ্যে: হেনেপলা গুনারত্ন মহাথেরের জীবন, দর্শন এবং অবদান
জীবনী

আরো ইনফো পড়ুন

Father, save me
নির্বাচিতসম্পাদকীয়

Humanity Demands Justice: The Tragedy of Khagrachhari and the Chittagong Hill Tracts

For the past three days, I have been in deep shock. Words fail me. What protest can I make, where…

6 বার পাঠ করেছে
সংখ্যালঘু হামলা
সংবাদ

সংখ্যালঘু বৌদ্ধ পরিবারের বসতভিটা দখলের চেষ্টা ও হামলা

মহেশখালী, কক্সবাজার — কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার উত্তর নলবিলা গ্রামে এক সংখ্যালঘু বৌদ্ধ পরিবারের বসতভিটা দখলের উদ্দেশ্যে হামলা, চাঁদা দাবি…

3 বার পাঠ করেছে
বাংলাদেশ
নির্বাচিতসম্পাদকীয়

সাড়ে ৪ মাসে বাংলাদেশে ১৭৪ সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ২৩ সংখ্যালঘু: একটি ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট

বাংলাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর চলমান সহিংসতা এবং বৈষম্যমূলক আচরণ একটি গভীর মানবাধিকার সংকটের ইঙ্গিত। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র…

4 বার পাঠ করেছে
বাংলাদেশ
সম্পাদকীয়

ব্যর্থ রাষ্ট্র “বাংলাদেশ”: আদিবাসী জনগণের বৈষম্য এবং অবহেলা

বাংলাদেশের ৫৪ বছরের স্বাধীনতার ইতিহাসে আদিবাসী জনগণের অধিকার বার বার লঙ্ঘিত হয়েছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এলেও, আদিবাসী জনগণ এখনও…

2 বার পাঠ করেছে
Logo dark logo

আমাদের ইনফো

  • ধম্মইনফো সর্ম্পকে
  • যোগাযোগ
  • উপদেষ্টা
  • অর্থায়ন
  • ইনফো প্রেরণ করুন

গৌতম বুদ্ধের জীবনী

  • জন্ম
  • শৈশব কাল
  • বিবাহ
  • গৃহ ত্যাগ
  • বুদ্ধত্ব লাভ
  • ধর্ম প্রচার
  • মহাপরিনির্বাণ

বিশ্ব বৌদ্ধ ইনফো

  • এশিয়া
  • ইউরোপ
  • আফ্রিকা
  • উত্তর আমেরিকা
  • দক্ষিণ আমেরিকা

স্বদেশ ইনফো

  • জীবনী
  • ইতিহাস
  • সাহিত্য
  • ঐতিহ্য
  • সংস্কৃতি

আরো ইনফো

  • সম্পাদকীয়
  • গবেষণা
  • নির্বাচিত
  • সংবাদ

মিডিয়া ইনফো

  • ইউটিউব
  • ফেইসবুক
  • ইনস্টাগ্রাম
  • টুইটার

স্বত্ব © ২০১১-২০২৪ ধম্মইনফো সম্পাদক ও প্রকাশক: ধম্মবিরীয় ভিক্ষু

বৌদ্ধ
ধম্মইনফো তে আপনাকে স্বাগতম!

* ধম্মইনফো তে নিয়মিত লিখে আপনিও অবদান রাখুন। * ধম্মইনফো লেখা আপনার বন্ধু/পরিচিত জনের সাথে বেশী বেশী শেয়ার করুন।

Welcome Back!

Sign in to your account

পার্সওয়ার্ড ভুলে গেছেন?