চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী গলিতে সম্প্রতি সংঘটিত এক বিতর্কিত ফেসবুক পোস্টের পর স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ ও উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ বাহিনী সেখানে অভিযানে নামলে এলাকায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের মারধর, নিয়াতন ও গণ গ্রেপ্তার করেছে। যমুনা টিভির প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শীরা এই অভিযানের নির্মমতার সঙ্গে একাত্তরের পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার তুলনা করেছেন।
অভিযানের শুরু ও গ্রেপ্তার
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ফেসবুকে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) নিয়ে করা একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী গলিতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিতর্কিত এই পোস্টের জেরে কিছু স্থানীয় যুবক অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে গেলে মার্কেট কমিটির হস্তক্ষেপে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়। পরবর্তীতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী অভিযুক্তকে নিয়ে যায়। তবে এর পরপরই রাতের অন্ধকারে পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং বিডিআর সদস্যরা তিন দিক থেকে এলাকায় প্রবেশ করে নির্বিচারে স্থানীয়দের উপর হামলা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর সামান্য সময়ের মধ্যেই যৌথ বাহিনী এলাকায় এসে যাকে পেয়েছে তাকে আটক করেছে এবং মারধর করেছে। তিনি বলেন, “সারা রাত আমরা ঘর থেকে বের হতে পারিনি। এখন ছেলেকে খুঁজতে বের হয়েছি।”
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, অভিযুক্তকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর যৌথ বাহিনী এলাকা ঘিরে ফেলে এবং দোকান বন্ধ করতে দিচ্ছিল না। তিনি বলেন, “আমার রেস্টুরেন্টে ৮-১০ জন কাস্টমারসহ কোন মতে দরজা বন্ধ করে সারা রাত ভেতরে আটকা ছিলাম। বাহিনীর সদস্যরা অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছে, যাকে পেয়েছে তাকে পিটিয়েছে।”
একাত্তরের নির্মমতার প্রতিফলন
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, যৌথ বাহিনীর এই অভিযান একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মমতার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। একজন বলেন, “আমরা ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, কিন্তু আজ আমরা সেই ভয়ংকর অবস্থা অনুভব করেছি। আমাদের দোকানগুলো সিলগালা করা হয়েছে এবং রাতভর ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।”
আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা
এলাকার হিন্দু সম্প্রদায় এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। তাদের মধ্যে ভবিষ্যতে দোকানপাট খুলে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সন্দেহ ও শঙ্কা রয়েছে। একজন মন্তব্য করেন, “এখনও জানি না দোকান খুলতে পারব কি না, এদেশে নিরাপদে থাকতে পারব কি না।”
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে পুলিশের উপর সরাসরি হামলার কোনও ঘটনা ঘটেনি, তবে অভিযুক্তকে নিয়ে যাওয়ার পরে পরই এলাকা জুড়ে এই সহিংস অভিযান পরিচালনা করা হয়।
হাজারী গলির ঘটনায় ‘ইসকন সমর্থকদের’ দায় দিচ্ছে পুলিশ তবে পুলিশের এই অভিযোগ ইসকন অস্বীকার করছে।
চট্টগ্রামের এই ঘটনায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ভীতসন্ত্রস্ত। স্থানীয়দের দাবি, এমন অভিযানে তাদের নিরাপত্তা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সরকার ও প্রশাসনের এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপে তারা হতাশ ও আতঙ্কিত।