খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. তাজুল ইসলাম ১৮ বছর বয়সী হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও পরে তা অজানা কারণে মুছে ফেলা হচ্ছে।
বাংলাদেশের খুলনায়, উত্সব মণ্ডল নামে এক হিন্দু ছেলেকে মহানবী মুহাম্মদকে সামাজিক মাধ্যমে ‘অপমান’ করার অভিযোগে মুসলিম জনতা নির্মমভাবে হত্যা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ৪ সেপ্টেম্বর, শহরের সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায়।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. তাজুল ইসলাম ১৮ বছর বয়সী এই হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি গুরুতর আহত অবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, আর সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে টহল দিচ্ছেন। ভিডিওতে পেছন থেকে একজনকে বলতে শোনা যায়, “হিন্দু… নাস্তিক।”
প্রতিবেদন অনুসারে, খুলনার আজম খান সরকারি কমার্স কলেজের কিছু ছাত্র ফেসবুকে মহানবী মুহাম্মদ সম্পর্কে পোস্ট শেয়ার করেছিল। বিকেলে কয়েকজন ছাত্র হিন্দু ছেলেটিকে খুলনা মেট্রোপলিটন উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) তাজুল ইসলামের অফিসে নিয়ে যায়। এরপর মুসলিম জনতা প্রায় ৩ ঘণ্টা উপ-কমিশনারের অফিস ঘেরাও করে এবং ওই হিন্দু ছেলের শাস্তির দাবি জানায়।
প্রতিবেদনগুলো অনুযায়ী, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সেনা ও নৌবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে যখন ছেলেটিকে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন ক্ষুব্ধ জনতা তাকে নির্মমভাবে প্রহার করে, যার ফলে তার মৃত্যু ঘটে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও এই পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, ক্ষুব্ধ মুসলিমরা বিক্ষোভ করছে, আর সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে। ভিডিওগুলো এবং প্রাথমিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্পষ্ট যে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড সেনাবাহিনী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই ঘটেছে।
‘তারা আমার ধর্মকে অপমান করেছে’: ভাইরাল ভিডিওতে পুলিশের সামনে হিন্দু ছেলের বক্তব্য
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হিন্দু ছেলেটি, যাকে উত্সব মণ্ডল বলে মনে করা হচ্ছে, মুসলিম জনতার ঘিরে আছে এবং পুলিশ কর্মকর্তারা বসে আছেন। ভিডিওতে একজন ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করেন, কেন সে এমন কাজ করল। জবাবে ছেলেটি বলে, “আমি খেলা দেখছিলাম। সেখানে আমি কিছু লোককে আমার ধর্মকে (হিন্দু ধর্) অপমান করতে শুনেছি। এটা শুনে আমি মেজাজ হারিয়ে ফেলি।”
অন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, “আমি আমার মুসলিম ভাইদের পক্ষ থেকে আপনাদের অনুরোধ করছি। আমাদের ১০ মিনিট দিন, আমরা তাকে জুতার মালা পরাবো এবং ‘নাস্তিক’ লিখে শহর ঘোরাবো।” এ কথার পরে নিরাপত্তা কর্মীরা হাসতে থাকে।
অন্যদিকে, সেনা কর্মকর্তারা বলেন, তারা মুসলিম জনতাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে ছেলেটিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। তবুও, উত্তেজিত জনতা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে।
বাংলাদেশি গণমাধ্যমগুলো সংবাদ মুছে ফেলেছে
যেসব বাংলাদেশি গণমাধ্যম খুলনায় ঘটে যাওয়া হিন্দু ছেলেকে পিটিয়ে হত্যার খবর দিয়েছিল, তারা তাদের প্রতিবেদন মুছে ফেলেছে বলে জানা গেছে। ঢাকাপোস্ট, সখবর, এবং সমকালসহ একাধিক সংবাদমাধ্যম এই ঘটনার রিপোর্ট করলেও তাদের প্রতিবেদনগুলো মুছে ফেলা হয়েছে এবং লিঙ্কগুলোতে ‘Error 404: not found’ লেখা দেখাচ্ছে।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো এই সর্ম্পকীয় প্রতিবেদনের কথা কেন মুছে ফেলেছে তা স্পষ্ট নয়।
সংবাদ মুছে ফেলার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে সদ্য নির্বাচিত ইউনুস সরকার হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান সহিংসতা ও নির্যাতনের ঘটনাগুলো অস্বীকার ও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে, যেন তারা তাদের নিজস্ব ‘ধর্মনিরপেক্ষ, উদার’ ভাবমূর্তি রক্ষা করতে পারে।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গেছে, যেসব বাংলাদেশি গণমাধ্যম ছাত্র আন্দোলনে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং কিছু গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের প্রচার করা হচ্ছে যে এই সংবাদমাধ্যমগুলো শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষপাতী ছিল অথবা সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় ‘ভুল’ তথ্য প্রচার করেছিল। তবে, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতার ঘটনাগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছে বা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
নতুন বাংলাদেশ সরকারকেও মৌলবাদী ইসলামিক গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল এবং পরোক্ষভাবে সমর্থনশীল হিসেবে দেখা যাচ্ছে। ইউনুস সরকার ক্ষমতায় আসার পর নেওয়া প্রথম পদক্ষেপগুলোর একটি ছিল জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া, যা শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নিষিদ্ধ ছিল তাদের সহিংস কার্যক্রমের কারণে।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে অনেক হিন্দু কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন এবং অনেক হিন্দু নেতা নির্মমভাবে প্রহৃত বা নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে একটি প্রচলিত প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আন্তর্জাতিক ‘বাম-উদারপন্থী’ মিডিয়া সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনাগুলোকে এড়িয়ে যাচ্ছে বা ‘রাজনৈতিক বিষয়’ হিসেবে তুলে ধরছে।
নিভৃতচারী সদ্ধর্মানুরী বৌদ্ধ ভিক্ষু ব্যক্তিত্ব।