চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ – গতকাল (১৮ নভেম্বর) ভোর ৫টায় চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে ভয়াবহ এক ছিনতাইয়ের ঘটনায় কাতাল গঞ্জ নব পণ্ডিত বিহারে যাওয়ার পথে স্থানীয় এক ভিক্ষু ছিনতাইকারীদের হাতে গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। ছিনতাইকারীরা বৌদ্ধ ভিক্ষুকে ছুরিকাঘাত করে তার সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়। এই বর্বর হামলার সামাজিক মাধ্যমে শান্তিপ্রিয় সাধারণ বৌদ্ধরা তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়াসহ বর্তমান দেশের সাধারণ জনগণ ও শান্তির বার্তা প্রচারক বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নিরাপত্তা বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বাংলাদেশ বৌদ্ধ ভিক্ষু মহাসভার সংগঠনিক সম্পাদক বৌদ্ধ ভিক্ষু ভদন্ত সংঘানন্দ মহাথের রিকশাযোগে নব পণ্ডিত বিহারের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে ওআর নিজাম রোডের কালীবাড়ি মন্দিরের নিকট পৌঁছালে তিনজন ছিনতাইকারী একটি মোটরসাইকেলে এসে তাকে ছুরিকাঘাত করে। হামলাকারীরা তার সাথে থাকা সবকিছু নিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় সংঘানন্দ মহাথের কোনোরকমে নব পণ্ডিত বিহারে ফিরে আসেন। হামলার পর তার অবস্থা সংকটজনক হলেও তিনি সেখানকার লোকজনের সহায়তায় চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ভিক্ষুর প্রতি এই নৃশংস ঘটনার সাধারণ জনগণ, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
মানবাধিকার কর্মী রেহানুল ইসলাম তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “এই হামলা শুধু একজন ভিক্ষুর ওপর নয়, এটি আমাদের মানবিকতা এবং নিরাপত্তার প্রতি আঘাত। প্রশাসন কি ঘুমিয়ে আছে?”
বৌদ্ধ ভিক্ষু ভদন্ত সুমন প্রিয় মন্তব্য করেছেন, “ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের ওপর এমন হামলা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।”
সাধারণ মানুষও তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একজন ব্যবহারকারী টুইট করেছেন, “চট্টগ্রামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসনকে শ্রীঘ্রই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ গ্রহণের পর তদন্ত শুরু করা হয়েছে এবং ঘটনার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। হামলাকারীদের শনাক্ত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে, তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
একজন শান্তির বাণী প্রচারক বৌদ্ধ ভিক্ষুর উপর এমন হামলার ঘটনায়সামাজিক সংগঠনগুলো দ্রুত বিচার এবং নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানিয়েছে। তারা বলছে, একজন শান্তির বাণী প্রচারক বৌদ্ধ ভিক্ষুর ওপর এই নৃশংস হামলা শুধু ব্যক্তি আক্রমণ নয়, এটি সামাজিক নিরাপত্তার প্রতি এক বড় চ্যালেঞ্জ। সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদের যে ঢেউ উঠেছে, তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনসাধারণের আস্থার সংকটের প্রতিফলন। এখন সময় এসেছে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার, যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে এবং অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়।