কিছুদিন ধরে শরীরটা ভালো নেই—ঠান্ডা লেগে বুকে কফ, কাশি, সামান্য জ্বর; আর তার সাথে একাকীত্বের তীব্র যন্ত্রণাও। প্রবাসী জীবনের চিরন্তন সত্য হলো একাকীত্ব, কিন্তু যখন চারপাশে ভয় ও দুশ্চিন্তা আমাদের ঘিরে ধরে, তখন সেই নিঃসঙ্গতা আরও অসহনীয় হয়ে ওঠে।
আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পরপরই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ অবৈধ অভিবাসী বিতারণ অভিযান শুরু করেছে। এতে আমেরিকার বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের মতো বাংলাদেশি ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষও চরম উদ্বেগ ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকেই নতুন এসেছেন, কাগজপত্র নেই, ওয়ার্ক পারমিট হয়নি—ফলে কাজ করতে পারছেন না। কিন্তু ঘরভাড়া, সংসারের খরচ, ওষুধপত্র—এসব থেমে নেই। দিন কাটছে অজানা ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায়।
আমার পরিচয়ের সীমিত গণ্ডির মধ্যে ট্রাম্প সরকার ঘোষিত অবৈধ অভিবাসী নীতির মধ্যে পড়া এমন কাউকে না দেখলেও, বেশ কিছু ব্যাচেলর যুবক ও পরিবার এখন সম্পূর্ণ ঘরবন্দি হয়ে আছেন। ওয়ার্ক পারমিট না থাকায় তারা কাজ করতে পারছেন না, ফলে অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে চাকরি বা কাজের সুযোগ না থাকলে করণীয় কী? যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে নিজেদের রক্ষা কীভাবে করবেন? কীভাবে আইনি সহায়তা পাবেন? কীভাবে এই দুঃসময় কাটিয়ে উঠবেন? এসব প্রশ্নের উত্তর জানা ও প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল। তবে দুঃখজনকভাবে, এখনো বাংলাদেশি বৌদ্ধ সংগঠনগুলোর কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা আসেনি।
দেশের মতো আমেরিকাতেও বাংলাদেশি বৌদ্ধদের অনেক সংগঠন রয়েছে। কিন্তু এই সংকটময় সময়ে তাদের ভূমিকা কতটুকু? সংগঠনের মানবিক দায়বদ্ধতা এখন আর কোনও পর্যবেক্ষণের বিষয় নয়—এটি একটি বাস্তবিক, জরুরি দায়িত্ব। শুধু উৎসব বা আনুষ্ঠানিক সভা-সমাবেশ আয়োজনই সংগঠনের কাজ নয়; সংকটের সময়ে পাশে দাঁড়ানোই সংগঠনের প্রকৃত পরীক্ষা।
এখন সংগঠনগুলোর দরকার আশার বাণী শোনানো—
“ভয় পেও না, দরকার হলে জানাও, আমরা তোমার পাশে আছি। যতটুকু পারি, আমরা তোমার জন্য করবো।”
অবৈধভাবে যারা আছেন (বৌদ্ধদের মধ্যে তেমন কেউ আছেন কিনা জানা নেই), তাদের জন্য ব্যক্তি বা সাংগঠনিকভাবে খুব একটা কিছু এখানে করার নেই। তবে যাদের বৈধ কাগজপত্র আছে, কিন্তু ওয়ার্ক পারমিট নেই, তারা এখন কাজ করতে পারছেন না। সুতরাং, তাদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার আগ পর্যন্ত কীভাবে সহায়তা দেওয়া যায়, তা এখনই একটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
যদি সংগঠনগুলো এই ভয়, আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তার অন্ধকার সময়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়, তবে চিন্তিত প্রবাসীরা কিছুটা হলেও মানসিক শক্তি ফিরে পাবেন।
প্রবাস মানেই বিচ্ছিন্নতা নয়—এটি একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর, সংহতি গড়ে তোলার এবং এক হয়ে বেঁচে থাকার প্রতিজ্ঞা।
যদি সংগঠনগুলো এখনই এগিয়ে আসে, যদি এই মুহূর্তে কর্মহীনদের জন্য সহায়তা, দিকনির্দেশনা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারে—তাহলে তারা এই সংকটে এক নতুন শক্তি পাবে।
শেষ কথা, “জীবন কারোর থেমে থাকে না, কারোর জন্য থেমে যাওয়াও উচিত নয়!” আজ যদি আমি, আপনি, বা কোনো সংগঠন কারোর পাশে নাও দাঁড়াই এতে কারোর জীবন থেমে যাবে না। পরে, যখন সেই প্রবাসী সমাজে সফলতার সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, তখন কি সংগঠনগুলোর ভূমিকা লজ্জিত হবে না? জানি, লজ্জা হবে না—কারণ আজ আমাদের “নির্লজ্জ” শব্দের মৃত্যু হয়েছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক, ধম্মইনফো-ডট-কম