বাংলাদেশের ৫৪ বছরের স্বাধীনতার ইতিহাসে আদিবাসী জনগণের অধিকার বার বার লঙ্ঘিত হয়েছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এলেও, আদিবাসী জনগণ এখনও সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। দেশের ৫১টি আদিবাসী সম্প্রদায় বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও, তাদের অধিকার প্রাপ্তি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বারবার উপেক্ষিত হয়েছে।
সম্প্রতি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দ অপসারণের সিদ্ধান্ত একটি বাংলাদেশ যে একটি ব্যর্থ রাস্ট্র তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন। এটি শুধুমাত্র একটি শব্দের পরিবর্তন নয়; এটি আদিবাসী জনগণের সাংস্কৃতিক স্বীকৃতি ও মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত। আদিবাসীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত তাদের অধিকারকে খর্ব করার পাশাপাশি বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চেতনার বিরোধী।
‘স্টুডেন্টস ফর সভেরনিটি’ নামক উগ্র বাঙালি সংগঠনের চাপে এনসিটিবি যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, তা রাষ্ট্রের দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক। তাদের এই পদক্ষেপ আদিবাসীদের প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রতিশ্রুতির অভাবের প্রতিফলন।
১৫ জানুয়ারি ঢাকায় আদিবাসী ছাত্র সংগঠনগুলোর শান্তিপূর্ণ মিছিলে সহিংস হামলা কেবল নিন্দনীয় নয়, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি দৃষ্টান্ত। আদিবাসী ছাত্রদের ওপর এমন নৃশংস হামলা তাদের আত্মপরিচয় ও নিরাপত্তাকে বিপন্ন করেছে। এই ঘটনা বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে যথেষ্ট।
এ ধরনের হামলা এবং বৈষম্যমূলক নীতিগুলো আমাদের জাতীয় ঐক্যকে দুর্বল করছে। আদিবাসী জনগণকে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে, তাদেরকে প্রান্তিককরণের প্রচেষ্টা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে একটি বড় বাধা।
বাংলাদেশকে একটি সফল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে, সব সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা করা। আদিবাসী জনগণের প্রতি অবহেলা ও বৈষম্যমূলক নীতি বাংলাদেশের জাতীয় মূল্যবোধের বিপরীত। এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের এখনই সময়। নতুবা, আদিবাসী জনগণকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য ইতিহাস ইউনূস তোমাকে ক্ষমা করবে না।
প্রকাশক ও সম্পাদক, ধম্মইনফো-ডট-কম