বুড্ডিস্টডোর এবং এপিনিউজ অবলম্বনেঃ নিউ জার্সির ফ্রাঙ্কলিন টাউনশিপে প্রিন্সটনের কাছে অবস্থিত নয় মিটার উঁচু বুদ্ধ মূর্তি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ বৌদ্ধ মূর্তিগুলোর একটি। প্রায় এক দশক আগে নিউ জার্সি বৌদ্ধ বিহার ও ধ্যান কেন্দ্রের প্রাঙ্গণে স্থাপিত এই মূর্তিটি শুধুমাত্র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য নয়, বরং অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের জন্যও এখন এটি একটি ধর্ম ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। শ্রীলঙ্কান বৌদ্ধ ভিক্ষু ভদন্ত হুংগামপোলা সিরিরথানা নাকায় থেরোর তত্ত্বাবধানে নির্মিত এই মূর্তিটি এখন আমেরিকার ধর্মীয় সংহতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সহযোগিতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
মূর্তির ইতিহাস ও নির্মাণ
স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক দাতাদের সহায়তায় ২০১২ সালে স্থাপিত এই বুদ্ধ মূর্তি নিউ জার্সি বৌদ্ধ বিহার ও ধ্যান কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠা করা হয়। শ্রীলঙ্কার ঐতিহ্যবাহী থেরবাদ বৌদ্ধ চেতনার ভিত্তিতে এটি নির্মিত হলেও বর্তমান এটি অন্যান্য সব ধর্মের মানুষদের জন্য উন্মুক্ত।
শ্রীলঙ্কা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা ভদন্ত হুংগামপোলা সিরিরথানা নাকায় থেরো,এই বুদ্ধ মূর্তি প্রতিষ্ঠা প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি স্থান তৈরি করা যেখানে বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ একত্রিত হয়ে ধর্ম এবং সংলাপ চর্চা করতে পারে।
অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য
মূর্তিটি ফ্রাঙ্কলিন টাউনশিপে রুট ২৭-এর পাশে, প্রিন্সটনের কাছাকাছি একটি শান্ত গ্রামীণ পরিবেশে স্থাপিত। এর অবস্থান যাতাযাত যেমন সহজ, তেমনি প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকার কারণে এটি ধ্যান ও আত্মসংযম অনুশীলনের জন্য আদর্শ স্থান। মূর্তিটির চারপাশে রয়েছে সুশৃঙ্খল বাগান, ধ্যানের কক্ষ, এবং একটি ছোট পুকুর, যা পরিবেশকে আরো মনোরম করে তুলেছে।
এই বুদ্ধ মূর্তিটি এবং এর প্রাঙ্গণ কেবল থেরবাদ বৌদ্ধদের জন্য নয়, বরং মহাযান, বজ্রযানসহ অন্যান্য বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যও উন্মুক্ত। মূর্তিটির পাশে মহাযান বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রিয় গুয়ান ইনের মূর্তিও রয়েছে, যা বিভিন্ন বৌদ্ধ মতবাদকে একত্রিত করার প্রয়াসের একটি অংশ।
বিহারের প্রাঙ্গণে স্থানীয় নেপালি সম্প্রদায়ের উদ্যোগে একটি আন্তঃধর্মীয় ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। এই ম্যুরালে বিভিন্ন ধর্মের প্রতীক স্থান পেয়েছে, যা এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে তুলে ধরে।
প্রতিদিন এখানে দেশি-বিদেশি বহু দর্শনার্থী আসেন। শ্রীলঙ্কা, কোরিয়া, ভারত, নেপাল, চীন এবং জাপান থেকে আসা বৌদ্ধরা এখানে ধ্যান করেন। একই সঙ্গে হিন্দু, খ্রিস্টান, এবং অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও এখানে আসেন। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির লেখক ড্যানিয়েল চোই এই মূর্তিকে একটি “সংযোগের কেন্দ্রবিন্দু” হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “এখানে বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ একত্রিত হয়। এটি একটি উন্মুক্ত মন্দিরের মতো।”
স্থানীয় সম্প্রদায়ের উপর প্রভাব
নিউ জার্সি বৌদ্ধ বিহার স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। ৭৬ বছর বয়সী ক্যারল কুহন, যিনি বিহারের প্রতিবেশী, জানান যে বিহারের উপস্থিতি তার জীবন বদলে দিয়েছে। প্রেসবিটারিয়ান হিসেবে বেড়ে ওঠা কুহন ধ্যানের মাধ্যমে নিজের জীবনের শোক এবং দুঃখ মোকাবিলা করতে শিখেছেন। তিনি বলেন, “ধ্যান আমাকে বর্তমান মুহূর্তে বাঁচতে শিখিয়েছে। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন।”
বৌদ্ধ বিহারের পরিবেশে কেবল ধর্মীয় আচার নয়, বরং স্থানীয় সংস্কৃতি এবং শিল্পও গুরুত্ব পেয়েছে। নেপালি সম্প্রদায়ের সদস্য তুলসি মাজারজান জানান যে তিনি এখানে একটি আন্তঃধর্মীয় ম্যুরাল প্রকল্পে কাজ করেছেন। এই ম্যুরালে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্মের প্রতীক স্থান পেয়েছে। “আমাদের সোমারসেট কাউন্টি এখন পৃথিবীর ক্ষুদ্র প্রতিরূপ,” তিনি বলেন।
প্রশান্তির প্রতীক এই বুদ্ধ মূর্তি
এই নয় মিটার উঁচু বুদ্ধ মূর্তি কেবল একটি ভাস্কর্য নয়, বরং শান্তি, করুণা, এবং সংহতির প্রতীক। এটি দেখলে মানুষ শান্তি এবং ইতিবাচকতা অনুভব করেন। এখানকার পরিবেশ দর্শনার্থীদের আত্মমগ্নতা এবং চিন্তাশীলতায় উদ্বুদ্ধ করে।
নিউ জার্সির এই বৌদ্ধ বিহার ও ধ্যান কেন্দ্রটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি এবং সংহতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ। এটি একটি প্রমাণ যে ধর্ম এবং সংস্কৃতি মানুষের মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে পারে।
প্রকাশক ও সম্পাদক, ধম্মইনফো-ডট-কম