বাংলাদেশ নতুন এক ইতিহাস রচনা করেছে। যেই দেশে মাত্র কিছু দিন আগে জেলার ফরিদপুরে হৃদয় পাল নামের এক যুবককে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সেনাবাহিনী কাধে করে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় সেনাসদস্য এলোপাথাড়িভাবে হৃদয় পালের কোমরে-পায়ে মোটা লাঠি দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর আঘাত করে নিয়ে গিয়েছিল সেই বাংলাদেশে ধর্ম অবমানার প্রতিবাদ করাতে বৃহস্পতিবার আটক করে ৫৩ জন কারাগারে পাঠিয়েছে।
এই ঘটনা বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ধর্ম অবমাননার প্রতিবাদ করায় তাদের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন এবং আইনের শাসনের অপব্যবহার নিয়ে এক ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। চট্টগ্রামের টেরিবাজারের হাজারী গলিতে ঘটনার সূত্রপাত হয়, যেখানে মুসলিম ব্যবসায়ী ওসমান আলী হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র সংগঠন ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। এই পোস্টে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ বাহিনী তাদের উপর কঠোর পদক্ষেপ নেয়। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপব্যবহারের আরেকটি উদাহরণ তৈরি হলো।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের মতে, বিতর্কিত পোস্টের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে হিন্দু ব্যবসায়ীরা একত্রিত হলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদের প্রতি নির্মম আচরণ করে। মধ্যরাতে যৌথ বাহিনীর হামলায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের মারধর ও গণহারে গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে। এতে ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। আদালতে তাঁদের জামিন আবেদনও বাতিল করা হয়, যা সংখ্যালঘুদের প্রতি রাষ্ট্রের বিদ্বেষমূলক আচরণের গভীরভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, বিতর্কিত এই পোস্টের জেরে কিছু স্থানীয় যুবক অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে গেলে মার্কেট কমিটির হস্তক্ষেপে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়। পরবর্তীতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী অভিযুক্তকে নিয়ে যায়। তবে এর পরপরই রাতের অন্ধকারে পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং বিডিআর সদস্যরা তিন দিক থেকে এলাকায় প্রবেশ করে নির্বিচারে স্থানীয়দের উপর হামলা করে। সেই ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ৫৩ জনকে যৌথ বাহিনীর পাহারায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাঁদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী জানিয়েছেন।
এই ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বলেছেন, “সংখ্যালঘুদের প্রতি এমন নির্যাতন ও হয়রানি শুধুমাত্র তাদের অধিকার হরণ করছে না, বরং দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে ভেঙে দিচ্ছে।” সংখ্যালঘুদের প্রতি এভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর আচরণ ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের চরম অবমাননা। এই ধরনের ঘটনাগুলি শুধু সংখ্যালঘুদের দুর্দশা বাড়াচ্ছে না, বরং দেশের আইনের শাসন এবং সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নির্যাতন এবং আইনের শাসনের অপব্যবহার রোধে সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দেশের প্রতিটি নাগরিকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় কার্যকরী প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নির্যাতন এবং আইনের শাসনের অপব্যবহার এক ভয়াবহ সংকটের সূচনা করেছে। এ জাতীয় ঘটনাগুলো দেশের শান্তি ও সমতা প্রতিষ্ঠার পথে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং আইনের শাসনকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করা, যাতে দেশের সকল নাগরিকের ন্যায্য অধিকার সুরক্ষিত থাকে।
স্বপ্ন এবং দায়িত্ববোধ থেকে ধম্মইনফো-ডট-কম এর সূচনা। ২০১১ সালে বাংলায় প্রথম অনলাইন বৌদ্ধ সংবাদ পোর্টাল হিসেবে ধম্মইনফো যাত্রা শুরু করে, যা বৌদ্ধধর্ম, ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং নীতিমালা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রচারে পাঠকের ব্যাপক গ্রহণ যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা লাভ করে। ২০১২ সালে রামুতে মৌলবাদী হামলার পর এটি একটি শক্তিশালী সংবাদ মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তর বাংলা ভাষী বৌদ্ধদের কাছে পরিচিতি লাভ করে। যদিও নিরাপত্তাজনিত কারণে ২০১৮ সালে সাইটটি প্রকাশনা বন্ধ করা হয়, ২০২৪ সালে ধম্মবিরীয় ভিক্ষুর নেতৃত্বে এটি আবার চালু হলে ধম্মইনফো বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার, বাংলাদেশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে সংবাদ, ঐতিহাসিক নিদর্শন, মণিষীদের জীবনী প্রকাশ, এবং ধর্মীয় উন্নয়নে কাজ করছে