সাম্প্রতিক সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার এক ভিডিওতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিতর্কিত ভূমিকার কারণে দেশের বিচার ব্যবস্থা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় নতুন শঙ্কার কারণ দেখা দিয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চারজন সদস্য হৃদয়পাল নামের কলেজ পড়ুয়া কিশোর কে কাঁধে তুলে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। পেছনে উত্তেজিত মুসলিম জনতা।
ভিডিওগুলো থেকে দেখা যায়, জনস্রোত থেকে চিৎকার করে সেনাবাহিনীকে বলা হচ্ছে, “পায়ে মারেন!” কিংবা, “পাঁচ মিনিটের জন্য আমাদের হাতে দেন।”এসময় একজন সেনাসদস্য এলোপাথাড়িভাবে হৃদয় পালের কোমরে-পায়ে মোটা লাঠি দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর আঘাত করছিলেন। সেই তীব্র আঘাতে হৃদয় পাল চিৎকার করছিলেন।
কিছুদূর এগিয়ে তারা কলেজ পড়ুয়া কিশোর হৃদয় পাল কে গাড়িতে তোলে। গাড়িতে তোলার পর একজন সেনা সদস্যকে বুট দিয়ে লাথি দিতে ও পায়ের তলায় ফের বাড়ি দিতে দেখা যায়। এক কিশোরের উপর হওয়া ঘটনার কারণে দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। হৃদয় পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসলামের নবীকে নিয়ে করেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে তার কলেজে সহপাঠীরা মারধরের করেছে এবং সেনা সদস্যরাও ইসলামে নবীর ইমান রক্ষায় ভূমিকা পালনকারী রুপে কিশোর কে আটক করে প্রকাশ্য নির্যাতন করেছে।
তবে, কিশোরটির পরিবারসহ স্থানীয়রা বলছেন, ইসলামের নবীকে অবমাননার ওই মন্তব্য সে করেনি এবং তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছে।
এই ঘটনাটি প্রশাসন এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা সম্পর্কে একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের ভূমিকা
এই ঘটনার সময়ে কলেজের অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান মোল্যা ও স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। তারা কিশোরকে সেনাবাহিনীর হাতে সোপর্দ করেন। এ সময় উত্তেজিত ইসলামী জনতা তাদের তিনটি শর্ত প্রদান করে, যার মধ্যে কিশোরটির বহিষ্কার, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া এবং একজন ধর্মীয় ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করার দাবি ছিল।
এসময় কিশোরটিকে নিয়ে যাওয়ার সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছি। সেনাবাহিনী কিশোরটিকে নিয়ে যাওয়ার সময় সেনা সদস্যরা কিশোরটিকে ব্যাপক পিঠুনি দেয় যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে এবং সংখ্যালগু সম্প্রদায় নিজেদের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী কে বিশ্বাস করতে পারছে না। এ বিষয়ে ফরিদপুরের সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য পাওয়া যায় নি।
পূর্ববর্তী ঘটনার সাথে সাদৃশ্য
কিশোরটি এর আগে একই অভিযোগে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। পাঁচ মাস আগে কিশোরটিকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। তখন কিশোরটির মোবাইলটা সিআইডি চেক করেছিলো। তখন অভিযোগের সাথে কিশোরটি কোন প্রকার সম্পৃক্ততার প্রমান না পেয়ে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। এবং অজানা কারণে তৎকালীন থানার ওসি পুরা ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছিলেন।
সামাজিক প্রভাব ও ধর্মীয় অনুভূতির বিষয়
এই ঘটনা বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মীয় অনুভূতির প্রভাব কতটা প্রবল তা স্পষ্ট করে তোলে। বাংলাদেশে ধর্মীয় সহনশীলতার কতটা অভাব তা এই ঘটনা স্পষ্ট প্রমাণ করে।
কিশোরটি দাবি করেছে যে, সে এই কটূক্তি করেনি, তবু ইসলামী উগ্র জনতা তার বক্তব্যকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেরাই বিচারের দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছিল। মুসলিমদের এই উগ্র আচরণ বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনের অভাব প্রমাণিত হয়।
ঘটনাটির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কিশোরটির বিরুদ্ধে ৫৪ ধারা প্রয়োগ করায় প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষ তদন্তের দরকার। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রশ্নে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব কতটা নিরপেক্ষ এবং শক্তিশালী তা দেকা দরকার।
ফরিদপুর জেলার এই ঘটনা দেশের সাম্প্রতিক ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও প্রশাসনের ভূমিকা নতুন করে সামনে এনেছে। এমন ঘটনা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব এবং প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে সমাজকে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক, ধম্মইনফো-ডট-কম