হিমালয়ের পাদদেশে কপিলাবস্তু নামে এক শান্তিপূর্ণ রাজ্য ছিল। এখানে শাক্যরা বাস করতেন। রাজ্যের রাজা শুদ্ধোদন ও রানি মহামায়া। রাজ্য ছিল সুখী ও সমৃদ্ধ, কিন্তু রাজা-রানির মনে ছিল সন্তানহীনতার দুঃখ। তাঁরা সন্তানের জন্য প্রার্থনা করতেন।
একদিন, আষাঢ়ী পূর্ণিমার রাতে, রানি মহামায়া একটি অলৌকিক স্বপ্ন দেখলেন। চার দেবতা এসে তাঁকে স্বর্ণের পালঙ্কে নিয়ে গেলেন হিমালয়ের মানসসরোবরে। সেখানে দেবতাদের মহিষীরা তাঁকে স্নান করিয়ে সুবাসিত বস্ত্রে সাজিয়ে দিলেন। এরপর, একটি শুভ্র হাতি শুঁড়ে শ্বেতপত্র নিয়ে এসে রানির জঠরে প্রবেশ করল। রানি এই স্বপ্নে আনন্দে উদ্বেলিত হলেন।
পরদিন রানি রাজা শুদ্ধোদনকে স্বপ্নের কথা জানালে রাজা রাজ-জ্যোতিষীদের ডেকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চান। জ্যোতিষীরা জানান, রানির পুত্রসন্তান হবে, যিনি সর্বজীবের দুঃখহরণকারী মহাজ্ঞানী হবেন।
সময় গড়িয়ে বৈশাখী পূর্ণিমার তিথি এলো। রানি পিতৃগৃহে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে রাজা তাঁকে অনুমতি দেন। যাত্রাপথটি সজ্জিত করা হয়। পথে লুম্বিনী কাননে রানি কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। সেখানে এক শালগাছের নিচে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে একটি শাখা ধরার সময় তাঁর প্রসববেদনা শুরু হয়। সহচরীরা তাঁকে সাহায্য করেন।
লুম্বিনী কাননের সেই শুভ মুহূর্তে জগতের আলো হয়ে জন্ম নেন ভবিষ্যৎ বুদ্ধ, সিদ্ধার্থ। রাজা-রানির আশা পূর্ণ হলো, তাই ছেলের নাম রাখা হলো ‘সিদ্ধার্থ’। কথিত আছে, সিদ্ধার্থ জন্মেই সাতটি পদক্ষেপে এগিয়ে যান, প্রতিটি পদক্ষেপে পদ্মফুল ফুটেছিল। চারদিকে দেবতারা আনন্দধ্বনি করলেন।
সিদ্ধার্থের জন্মের সাথে গয়ার বোধিবৃক্ষ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও যুক্ত ছিল। শিশুকে নিয়ে রানি কপিলাবস্তু ফিরে আসেন। রাজ্যে খুশির বন্যা বয়ে যায়। তবে, আনন্দের মাঝেই বিষাদের ছায়া নেমে এলো। রানি মহামায়া সাত দিন পরে মারা যান। সিদ্ধার্থকে লালন-পালনের ভার নেন রানির সহোদরা মহাপ্রজাপতি গৌতমী। তিনি সিদ্ধার্থকে মাতৃস্নেহে লালন করেন, আর এই কারণেই সিদ্ধার্থ ‘গৌতম বুদ্ধ’ নামে পরিচিত হন।
প্রকাশক ও সম্পাদক, ধম্মইনফো-ডট-কম