বন্দর নগরী চট্টগ্রামের চেরাগি মোড়ে গতকাল হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। শহরের কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় তিনজন হিন্দু যুবকের উপর আক্রমণের প্রতিবাদে এর বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা খুলনায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক কলেজ ছাত্রকে গণপিটুনির শিকার করার ঘটনারও বিচার দাবি করেন। শনিবার বিকালে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে বিশাল এই বিক্ষোভে অংশ নেয় হাজার হাজার মানুষ। বিকাল তিনটার পর থেকে নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে বিভিন্ন বয়সী, নারী, পুরুষ লোকজন জড়ো হতে শুরু করে সেখানে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে বাস, ট্রাক নিয়েও লোকজন আসতে থাকেন। জমায়েত চেরাগী পাহাড় মোড় ছড়িয়ে আন্দরকিল্লা, বৌদ্ধ মন্দির, জামালখান মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় দেড় বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে লোকজন জড়ো হতে থাকে। বিক্ষোভে ‘মঠ, মন্দিরে হামলা কেন প্রশাসন চুপ কেন’, ‘রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম নাই, ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘স্বাধীন দেশে হিন্দুদের ওপর হামলা কেন’- ইত্যাদি নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।
সংখ্যালঘু কমিশন গঠনসহ নানা দাবি সম্বলিত পোস্টার, ফেস্টুন নিয়েও বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন মানুষ।
একজন বিক্ষোভকারী জানান, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে শহরের ব্যাটারি গলির পাঁচজন ব্যক্তি হাজারী লেন থেকে একটি গণেশ মূর্তি রিকশা ভ্যানে নিয়ে যাচ্ছিলেন। যখন ভ্যানটি কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা এলাকায় পৌঁছায়, তখন কিছু মুসলিম দুর্বৃত্ত একটি ভবন থেকে তাদের উপর গরম পানি ঢেলে দেয়।
তারা প্রতিবাদ করলে মুসলিম দুর্বৃত্তরা তাদের বেঁধে মারধর শুরু করে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের উদ্ধার করে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশ ত্যাগ করার পর থেকে দেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি দেশের সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে।
এর প্রতিবাদে শুক্র ও শনিবার ঢাকার শাহবাগে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ হয়।
এছাড়া দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়ছে“চট্টগ্রামে গণেশপূজার মণ্ডপে ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম নগরের ফিরিঙ্গী বাজার সেবক কলোনিতে গণেশপূজার মণ্ডপে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে দুর্বৃত্তরা পূজামণ্ডপে ভাঙচুর চালায়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের গণেশপূজা ছিল শনিবার। সন্ধ্যায় ফিরিঙ্গী বাজার সেবক কলোনিতে পূজামণ্ডপে গিয়ে একদল দুর্বৃত্ত অতর্কিত ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় গণেশের মূর্তি সামনে থাকা পূজার ঘট ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়।
ঘটনার প্রতিবাদে ওই এলাকায় তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেন সনাতন ধর্মাবলম্বী বিক্ষুব্ধ নারী–পুরুষ। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, সেবক কলোনির মণ্ডপে পূজার ভাঙা ঘট, চেয়ার–টেবিল পড়ে আছে। নতুন করে সেখানে আরেকটি ঘট বসানোর প্রস্তুতি চলছে।
এক নারী পূজারি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘সন্ধ্যায় ৫০ থেকে ৬০ জনের একটা দল এসে ভাঙচুর করে। প্রতিমার ঘট ভেঙে দেয়। প্রতিমা লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে আমাদের বলে নতুন করে পূজা করতে। আমরা ভাঙা ঘট সরিয়ে নতুন করে পূজার আয়োজনের চেষ্টা করছি।’
ঘটনার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। সেনাসদস্যদের অন্তত চারটি দল মন্দিরের বাইরে পাহারা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক সাজেদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি শান্ত রয়েছে। তাঁদের বলেছি পূজার বাকি কাজ সম্পন্ন করতে। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে।’
স্বপ্ন এবং দায়িত্ববোধ থেকে ধম্মইনফো-ডট-কম এর সূচনা। ২০১১ সালে বাংলায় প্রথম অনলাইন বৌদ্ধ সংবাদ পোর্টাল হিসেবে ধম্মইনফো যাত্রা শুরু করে, যা বৌদ্ধধর্ম, ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং নীতিমালা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রচারে পাঠকের ব্যাপক গ্রহণ যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা লাভ করে। ২০১২ সালে রামুতে মৌলবাদী হামলার পর এটি একটি শক্তিশালী সংবাদ মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তর বাংলা ভাষী বৌদ্ধদের কাছে পরিচিতি লাভ করে। যদিও নিরাপত্তাজনিত কারণে ২০১৮ সালে সাইটটি প্রকাশনা বন্ধ করা হয়, ২০২৪ সালে ধম্মবিরীয় ভিক্ষুর নেতৃত্বে এটি আবার চালু হলে ধম্মইনফো বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার, বাংলাদেশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে সংবাদ, ঐতিহাসিক নিদর্শন, মণিষীদের জীবনী প্রকাশ, এবং ধর্মীয় উন্নয়নে কাজ করছে