পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক সহিংসতা, বিশেষ করে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার ফলে পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ধর্মীয় এবং সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই সিদ্ধান্ত পার্বত্য অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে। এবং বর্তমান বৈষম্যহীন দেশ গঠনের অঙ্গিকারে দেশের ক্ষমতা গ্রহণকারী ইউনুস প্রশাসনের এটি একটি বড় ব্যর্থতা। বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক উত্তান পতন হয়েছে, অনেক সংগ্রাম হয়েছে কিন্তু কখন ধর্মীয় অধিকার হরণ হয়নি। যা এই প্রথমবারের মত ইউনুস প্রসাশনের সময়ে নিরাপত্তার কারণে পার্বত্য অঞ্চলের বৌদ্ধরা কঠিন চীবর দান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সহিংসতার পটভূমি এবং ভিক্ষু সংঘের সিদ্ধান্ত
খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির বৌদ্ধ মন্দিরে সাম্প্রতিক হামলার পর, বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায় গভীর নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। মূর্তি ভাঙচুর, দানবাক্স লুটপাট, এবং উপাসনালয়ে হামলা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর সরাসরি আঘাত হেনেছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, ভিক্ষু সংঘের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ৬ অক্টোবর কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান এ বছর না করার ঘোষণা আসে।
এই সিদ্ধান্ত ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি ভিক্ষুদের নিরাপত্তার বিষয়েও গুরুত্ব বহন করে। যেমনটি বান্দরবানের স্বর্ণজাদি বিহারাধ্যক্ষ গুনবর্ধণ মহাথের বলেন, ভিক্ষুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, এবং ধর্মীয় চেইন অব কমান্ডের নিয়ম মেনে চলার কারণে তাদের হাতে ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।
প্রশাসনের অনুরোধ এবং নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি
প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সুরক্ষা দিতে সচেষ্ট থাকলেও, ভিক্ষুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি জটিল বিষয়। বান্দরবানে প্রশাসনিক বৈঠকে জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং নিরাপত্তার আশ্বাস দিলেও, ভিক্ষু সংঘের নেতাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান বাতিলই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান বৌদ্ধ ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা বৌদ্ধ ধর্মালম্বী ও ভিক্ষুদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক তৈরি করে। বছর একটি বিহারে একবার মাত্র এই দান অনুষ্ঠান হতে পারে। এবার এই অনুষ্ঠান বাতিলের ফলে ধর্মীয় এবং সামাজিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ধর্মীয় ঐক্য এবং বর্তমান সংকট
পার্বত্য অঞ্চলে ধর্মীয় উত্তেজনা এবং সহিংসতা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর চাপ তৈরি করেছে। সভায় উপস্থিত নেতারা এবং ভিক্ষুরা এ সংকটের সময়ে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ থাকার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তবে, সবার কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে যে বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ভবিষ্যতে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান আয়োজন করা কঠিন হবে।
খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং এর ফলে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান বাতিল করার সিদ্ধান্ত পার্বত্য অঞ্চলের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বাতিলের মাধ্যমে বৌদ্ধ সম্প্রদায় একধরনের চাপের মধ্যে রয়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেকোনো ধরনের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, ভিক্ষু সংঘের নেতাদের সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত প্রাধান্য পাচ্ছে।
স্বপ্ন এবং দায়িত্ববোধ থেকে ধম্মইনফো-ডট-কম এর সূচনা। ২০১১ সালে বাংলায় প্রথম অনলাইন বৌদ্ধ সংবাদ পোর্টাল হিসেবে ধম্মইনফো যাত্রা শুরু করে, যা বৌদ্ধধর্ম, ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং নীতিমালা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রচারে পাঠকের ব্যাপক গ্রহণ যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা লাভ করে। ২০১২ সালে রামুতে মৌলবাদী হামলার পর এটি একটি শক্তিশালী সংবাদ মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তর বাংলা ভাষী বৌদ্ধদের কাছে পরিচিতি লাভ করে। যদিও নিরাপত্তাজনিত কারণে ২০১৮ সালে সাইটটি প্রকাশনা বন্ধ করা হয়, ২০২৪ সালে ধম্মবিরীয় ভিক্ষুর নেতৃত্বে এটি আবার চালু হলে ধম্মইনফো বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার, বাংলাদেশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে সংবাদ, ঐতিহাসিক নিদর্শন, মণিষীদের জীবনী প্রকাশ, এবং ধর্মীয় উন্নয়নে কাজ করছে