বৌদ্ধ শাস্ত্র বলে, বোধিসন্ধানীগণ নাকি এই সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা ধরণীতেই বারংবার জন্ম নেন, তাঁদের পারমী পরিপূরণের জন্য। হয়তো তেমনি অভিলাষ নিয়েই এই ধরামাঝে জন্মেছিলেন তথাগত সম্বুদ্ধের সার্থক অনুগামী আলোর দিশারী সদ্ধর্মকীর্তি সংঘরাজ অভয়তিষ্য মহাস্থবির।
আবির্ভাব ও বালককাল:
বাঁশখালী, প্রাচ্যের রাণী খ্যাত চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণে অবস্থিত একটি ধর্মে ও সংস্কৃতিতে, শিক্ষায় ও কৃষ্টিতে, সঙ্ঘসদস্য উৎপত্তিতে অত্যন্ত উর্বর স্বনামধন্য এক জনপদ। সেই জনপদের অন্তর্গত তৎকালীন সময়ের ছয়টি বৌদ্ধ পল্লীর (শীলকূপ, জলদী, দক্ষিণ জলদী, পুুইঁছড়ি, কাহারঘোনা-মিন্জিরীতলা ও অধুনালুপ্ত চাম্বল) অন্যতম কাহারঘোনা-মিন্জিরীতলা গ্রামে ২১ এপ্রিল ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২৪৭ মঘীসন, ১২৯১ বাংলা ৮ বৈশাখ সোমবার ভাবী মহাভিক্ষু অভয়তিষ্য মহাস্থবির জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হলেন তৎকালীন সময়ের বহু গুণের অনুসারী অঢেল বিত্ত বৈভব সম্পন্ন জমিদার, বিশিষ্ট ফার্সি ভাষাবিজ্ঞ, কবিরাজ নবীন চন্দ্র বড়ুয়া এবং মাতা হলেন পার্শ্ববর্তী শীলকূপ গ্রামের আরেক জমিদার কন্যা কুলেশ্বরী বড়ুয়া। ক্রমে এই দেবদূততুল্য শিশু বড় হতে থাকেন। নাম রাখা হয় রামচন্দ্র বড়ুয়া। বাল্যাবস্থায় তিনি ছিলেন অতি মেধাবী ও নম্র স্বভাবের। বয়সকালে তাঁকে তৎকালের গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি করানো হল। গ্রাম্য পাঠশালার শিক্ষা সমাপনান্তে তাঁর লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে অভিভাবকরা তাঁকে ভর্তি করিয়ে দিলেন পাশের গ্রাম জলদীর সার্কেল বিদ্যালয়ে। বালক রামচন্দ্রের যখন বয়েস সাত তখনই তিনি হারান তাঁর পিতাকে। পিতার মৃত্যুর তাঁর মা তাঁকে ও তাঁর ছোট বোন নয়নতারা বড়ুয়াকে নিয়ে চলে যান পিত্রালয় শীলকূপ গ্রামে। পিছনে ফেলে গেলেন বিপুল জমিদারী সম্পত্তি। বন্ধ হয়ে গেল বালক রামচন্দ্রের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। শোকে মুহ্যমান হয়ে গেলেন পিতার বিয়োগ বিরহে। এই সমস্ত বিয়োগ দুঃখের কথা চিন্তা করেই মনে হয় করুণার মহা আকর শাক্যসিংহ বুদ্ধ তাঁর প্রথম দেশনাতেই “পিয়েহি বিপ্পয়োগো দুক্খ” প্রিয় বিয়োগকে দুঃখ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। আর তাই ক্ষুদ্রক নিকায়ের ধর্মপদের প্রিয় বর্গে উক্ত হয়েছে,
“পিয়তো জায়তে সোকো পিয়তো জায়তে ভয়ং
পিয়তো বিপ্পমুত্তস্স নত্তি সোকো কুতো ভয়ং?” গাথা নং-২১২
অর্থাৎ, প্রিয় হতেই শোকের উদ্ভব, প্রিয় হতেই ভয়ের উদ্ভব। যিনি প্রিয়মুক্ত(আসক্তি বিহীন) তার শোক থাকে না ভয়ই বা কোত্থেকে উৎপন্ন হবে?
সুতরাং ‘কাল ঘসতি ভূতানি’ কাল সকল কিছুকেই হরণ করে এবং ‘সব্বে ধম্মা অনিচ্চ ও অনাত্ম’ এই সত্যকে মেনে বালক রামচন্দ্র ও তার পরিবারের দিন গুজরান হতে লাগল।
প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা:
জমিদার পুত্র হয়েও বালক রামচন্দ্র ছিলেন অমায়িক, ভদ্র, বিনয়ী ও সহানুভূতি তথা সংবেদনশীল। বাড়ির পাশের বৌদ্ধ বিহারে ছিল তাঁর নিত্য আনাগোনা। হয়তো বা তথাগতের বিমলকান্তি, করুণানির্ঝর সৌম্য প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতেন, হে মুক্তির আলোক দাতা, হে জগৎগুরু, হে করুণাসিন্ধু, হে শতপুণ্যলক্ষণ বিমন্ডিত মহাজীবন আমিও আসছি আপনার সুমহান সদ্ধর্মের হীরন্ময় পবিত্র গৈরিক ছায়াতলে।
যিনি জন্মান্তরের ব্রহ্মচারী সত্তা তাঁকে হয়তো পৃথিবীর কোন দৌলতই আটকে রাখতে সমর্থ হয় না। কামিনী-কাঞ্চন মোহ বা ধনসম্পদের মোহনীয় হাতছানি সেই সমস্ত বোধিসন্ধানী মানবগণের নিকট হালে পানি পায় না। তাঁরা যেন সর্বদাই জীবন প্রগতির সঞ্জীবনী কল্লোল ডাক শুনতে পান। পিতৃবিয়োগের বছর পরে ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে মাতার অনুমতি নিয়ে তিনি চট্টলার ঐতিহাসিক পুণ্যতীর্থ ঠেগরপুনি বুড়াগোসাঁই মন্দিরে তদানীন্তন জলদী ধর্মরত্ন বিহারের অধ্যক্ষ, সাতকানিয়া থানার ঢেমশা গ্রামজাত ভদন্ত বৈষ্ণব ভিক্ষুর নিকট দীক্ষা নিয়ে প্রবেশ করলেন আগার ছেড়ে অনাগারিক জীবনে। সূচনা হল ভাবী মহাজীবনের উজানের পানে ধেয়ে চলা। উদ্দাম, উচ্ছল স্রোতস্বিনীর মতোন নতুন প্রব্রজ্যিত শ্রামণের জীবনেও বারেবারে অনির্বচনীয় পরশ দিতে লাগল বুদ্ধের অমৃত ধর্মের (শিক্ষার) বিরাগী সুধা। তিনি সদ্ধর্মের বাণীকে জানার ও বুঝার জন্য শিক্ষা নিতে ছুটলেন জলদী, কক্সবাজার, রামু, মাতুলালয় শীলকূপ প্রভৃতি স্থানের পণ্ডিতবর্গ ও জ্ঞানী ভিক্ষুদের কাছে।
১২৫৯ মঘীসন, ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৩০৩ বাংলার ৮ কার্তিক রবিবার সমগ্র পূর্ববাংলার (অধুনা বাংলাদেশ) উপর দিয়ে বয়ে গেল মর্মান্তিক ঘূর্ণিঝড়। অনেকের বিপুল জীবন ও ধনসম্পদ ক্ষতির সাথে শ্রামণ রামচন্দ্রের ফেলে আসা গৃহী বাড়িও পরিণত হল ধ্বংসস্তুপে। মা আহ্বান করলেন আকুল ভাবে বাড়িতে ফিরে এসে জমিদারীর দায়িত্ব ও ঘরদোর মেরামতের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য। মায়ের বারংবার পীড়াপীড়ির জন্য টিকতে না পেরে চীবর ত্যাগ করলেন সত্য, কিন্তু মনের মাঝে রেখে দিলেন পুনঃপ্রব্রজ্যিত হবার বাসনা।
সত্যিই, মুক্তির ইচ্ছা যাকে পেয়ে বসে, বৈরাগ্যের সাধ যার অন্তরে নিয়ত বিরাজমান তিনি কী আর গৃহবাসী হতে পারেন? এবং পারেন না বলেই তিনি আবার সংসার ত্যাগ করলেন এবং দীক্ষা নিলেন আরাকানিজ (মিয়ানমারের একটি প্রদেশের নাম ) একজন গুণী ভিক্ষুর নিকট। বিনয়ানুগ জীবন যাপন করে শিক্ষা নিতে লাগলেন তথাগতের বিভিন্ন উপদেশাবলী। শ্রামণ রামচন্দ্র, অতীত জন্মের পারমিতা ও বর্তমান জীবনের উদগ্র কুশলেচ্ছায় ধীরে ধীরে বিজ্ঞ হতে বিজ্ঞতর হতে লাগলেন। অতঃপর এলো আরেক মাহেন্দ্রকাল। শ্রামণ রামচন্দ্রের সাথে সাক্ষাৎ ঘটল সেকালের ধীমান সংঘপুরুষ বর্তমান চন্দনাইশ থানার সাতবাড়িয়া শান্তি বিহারের শান্তির তাপস পটিয়া থানার করল গ্রামজাত সূর্যসন্তান মহাগুরু প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরের। ১৩০৫ বাংলার মাঘ মাসে শ্রামণ রামচন্দ্র চলে এলেন সাতবাড়িয়ার শান্তির উৎসস্থল শান্তি বিহারে প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরের সুশীতল সান্নিধ্যে। শ্রামণের জ্ঞানস্পৃহা, বিনয় গারবতা, গুরুভক্তি প্রভৃতি প্রত্যক্ষ করে মহাস্থবির প্রজ্ঞালংকার শ্রামণের প্রতি হয়ে পড়লেন অতীব মৈত্রীসম্পন্ন। এবং নিজের তত্ত্বাবধানে রেখেই শ্রামণকে শিক্ষা দিতে শুরু করলেন ধর্ম ও বিনয়। সুদক্ষ কুমোরের হাতে উপযুক্ত মাটি যেমন বিবিধ আকারে রমণীয়তা পায় তদ্রুপ গুরু প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরের সান্নিধ্যেও শ্রামণ রামচন্দ্র পরিণত হতে লাগলেন ভাবী মহামানবের রূপে।
১৯০৩ ইংরেজী সন, রামচন্দ্র শ্রামণের জীবনে অতীব শুভ বছর, সাথে সমগ্র বাঙালি বৌদ্ধদের জীবনেও। গুরু প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির তাঁকে এবং তাঁর আরেক সতীর্থ চন্দনাইশ থানার হাশিমপুর বিজয়ারাম বিহারের শ্রামণ ইন্দ্রজ্যোতিকে নিয়ে রওনা দিলেন বৌদ্ধ প্রতিরূপ দেশ বার্মায়(মিয়ানমার), উদ্দেশ্য শ্রামণদ্বয়কে পরিশুদ্ধভাবে থেরবাদ বিনয়মতে উপসম্পদা প্রদান। অতঃপর সেই ১৯০৩ ইংরেজী, ১৪৪৬ বাংলায় ২০ বছর বয়সে শ্রামণ রামচন্দ্র লাভ করলেন অতি সুদূর্লভ মহামহিম উপসম্পদা(ভিক্ষুত্ব), উপসম্পদার স্থান(সীমা) ছিল আরাকানের বিখ্যাত কেয়ারু সীমা, উপাধ্যায় বা সীমার বয়োজ্যেষ্ঠ ভিক্ষু ছিলেন সুপণ্ডিত কেয়ারু ছেয়াদ ভন্তে, আচার্য ছিলেন মহাগুরু প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। শ্রামণ রামচন্দ্রের নতুন নাম হল ভিক্ষু অভয়তিষ্য।
বহুজন হিতায়ে:
নবীন ভিক্ষু অভয়তিষ্য বহুজনের হিত মানসে গুরুর সম্মতিক্রমে ১৯০৪ ইংরেজীতে চলে এলেন স্বর্গাদর্পি গরীয়সী জন্মভূমি চট্টগ্রামে। অতঃপর, বাঙালির আরেক সূর্যপুরুষ, বাঙালি প্রথম সংঘরাজ, মহাচার্য ধর্মাধারী চন্দ্রমোহন মহাস্থবিরের নিকট পটিয়া থানার ঊনাইনপুরা লঙ্কারামে শ্রবণ করেন দ্বিতীয় কর্মবাচা (ভিক্ষুত্বের নিবিড় শুদ্ধিতামূলক বিনয় কাজ)। ১৯০৫ ইংরেজী সনে নিজের মাতুলালয় শীলকূপ গ্রামের স্বজনদের সকাতর প্রার্থনায় গুরুর নির্দেশক্রমে তিনি বর্ষাবাস করতে আরম্ভ করলেন তদ্ঞ্চলের প্রাচীনতম বৌদ্ধ বিহার শীলকূপ জ্ঞানোদয় বিহারে। সেখানে দায়ক-দায়িকাদের উদ্বুদ্ধ করলেন সদ্ধর্মের সুমহান আচরণে এবং তৎসঙ্গে শীলকূপ জ্ঞানোদয় বিহারের অবকাঠামোতে এনেছিলেন অভিনব রূপান্তর।
১৯১৭ ইংরেজীতে শান্তি বিহারাধিপতি বয়োবৃদ্ধ মহাগুরু প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির অভিপ্রায় করলেন তদীয় জন্মভূমি করল গ্রামে চলে যাবার। এবং তজ্জন্য শান্তি বিহারের দায়কদের প্রার্থনা ও গুরুর নির্দেশে দীর্ঘ একযুগ শীলকূপে অবস্থানের পর শীলকূপ জ্ঞানোদয় বিহারের দায়িত্ব তৎশিষ্য শীলকূপজাত আরেক বৈভবশালী পরিবারের সুসন্তান ধর্মকীর্তি ভিক্ষুকে প্রদান করে অভয়তিষ্য ভন্তে গ্রহণ করলেন গুরুতীর্থ সাতবাড়িয়া শান্তি বিহারের অধ্যক্ষের পদ। উল্লেখ্য, সেই শান্তি বিহারেই তিনি জীবনের বাকি ৫৮ বছর অতিবাহিত করেন।
তিনি নীরব সাধনায় নিমগ্ন থাকতেন। সর্বদা নাকি একটা পাথরের সাথে আরেকটা পাথর ঘর্ষণ করে করে তিনি স্মৃতি সাধনা করতেন। তাঁর অনেক অলৌকিক শক্তির কথা এখনো লোকমুখে ঘুরে ফিরে। এবং তাই জন্য তিনি স্বীয় জন্ম জনপদ বাঁশখালী, অবস্থানস্থল চন্দনাইশ সহ পার্শ্ববর্তী থানা সাতকানিয়া, লোহাগাড়া প্রভৃতি স্থানে হিন্দু, মুসলিম বৌদ্ধ প্রত্যেকের কাছে শ্রদ্ধেয় ও বিনম্র অভিবাদনে স্মরণীয়। তিনি ঐ সমস্ত এলাকার বৌদ্ধদের নিকট আর্যপুরুষ, হিন্দুদের নিকট সিদ্ধপুরুষ এবং মুসলমানদের নিকট পীর হিসেবে সমাদৃত।
১৯২৭ ইংরেজী সনে বৌদ্ধ সমাজ সদ্ধর্মের প্রগতির ধারা বেগবান করার লক্ষ্যে, সদ্ধর্মের নৈতিক বোধ ও ‘সুখো সঙ্ঘস্স সমগ্গি, সমগ্গনং তপো সুখো’ অর্থাৎ সংঘবদ্ধগণের একতা ও সামগ্রিক তপস্যা(একতাবদ্ধভাবে কাজ করা) সুখকর, কল্যাণজনক এই চিন্তা করে তদীয় আবাসস্থল শান্তি বিহারে তদানীন্তন বিশিষ্ট জ্ঞানী ভিক্ষু সংঘ ও উল্লেখযোগ্য দায়কদের নিয়ে আয়োজন করেন বৌদ্ধ মহাসম্মেলনের। এই স্মরণযোগ্য ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে গৃহীত হয়েছিল বাঙালি বৌদ্ধ সমাজ ও সদ্ধর্মের শ্রীবৃদ্ধিমূলক বিবিধ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তথা পদক্ষেপ।
সাতবাড়িয়া শান্তি বিহারে মহাস্থবির অভয়তিষ্যের অবস্থানকালে বিহারে সর্বদা ৩০/৩৫ জন ভিক্ষু-শ্রামণ ও সেবক অবস্থান করতেন। তাঁর অতীত ও বর্তমান জীবনের দান-শীল ও প্রজ্ঞাগুণে তাঁদের লেখাপড়া ও আহার সংস্থানের অভাব হত না।
মঙ্গল সূত্রের ‘পূজনীয়ের পূজা উত্তম মঙ্গল’, এই বোধে প্রাণিত হয়ে স্বীয় গুরুর প্রতি সকাতর শ্রদ্ধাবোধ এবং পালি শিক্ষার সম্প্রসারণের জন্যে ১৯৩৮ ইংরেজীতে তিনি গুরুর নামে প্রতিষ্টা করেন ‘প্রজ্ঞালংকার পালিটোল’; ১৯৬৬ ইংরেজীতে সাতজন ত্রিপিটক পারদর্শী পণ্ডিতবর্গ নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘শাসনকল্যাণ পরিষদ’ নামে বৌদ্ধ ধর্মীয় পরীক্ষা বোর্ড।
এটা সুবিদিত যে, বার্মার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উ.নু’র উদ্যোগে ১৯৫৪ ইংরেজীতে বার্মায় সম্পন্ন হয় ষষ্ঠ বৌদ্ধ মহাসংঘায়ন বা সংগীতি। উক্ত সংঘায়নে বার্মা সরকার হতে অভয়তিষ্য মহাস্থবির আমন্ত্রণ পান সংঘায়নের সদস্য হিসেবে। কিন্তু, তাঁর শারীরিক অসুস্থতার দরুণ তিনি উপস্থিত থাকতে সমর্থ হন নি।
সংঘরাজ পদে অভিষেক:
কথায় বলে বহু জন্মের পুণ্যের ফলে, অপরিসীম পারমীর গুণে নাকি সংঘরাজ পদে অভিষিক্ত হওয়া যায়। মাননীয় অভয়তিষ্য মহাস্থবিরের সেই পারমী ছিল এবং তাই ১৯৫৭ ইংরেজী সনে ৬ষ্ঠ সংঘরাজ বিনাজুরী শ্মশান বিহারের মাননীয় অধ্যক্ষ, শাসনধ্বজ ধর্মানন্দ মহাস্থবিরের মহামৃত্যু ঘটলে, তাঁর দাহক্রিয়ার পূর্বরাত্রি ১৮ এপ্রিল সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার ১১তম সাধারণ অধিবেশনে, পূত পবিত্র ভিক্ষুসংঘের আহ্বানে ও স্বকীয় ধর্ম বিনয় গারবতায় তিনি অভিষিক্ত হন ‘সপ্তম সংঘরাজ’ পদে।
ত্যাগশীল ও মৈত্রীর প্রদীপ অভয়তিষ্য:
বাঙালি বৌদ্ধ ভিক্ষুগণের মধ্যে যাঁরা ধর্মদানের পাশাপাশি বস্তুগত দান করে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন তাঁদের মধ্যে সদ্ধর্মকীর্তি সংঘরাজ অভয়তিষ্য মহাস্থবির মহোদয়ের নাম বিশেষ উল্লেখনীয়। জমিদার পরিবারের একমাত্র পুত্র সন্তান হবার দরূণ তিনি ছিলেন বিশাল ভূ-সম্পত্তির (বলা হয় ৮০ দোণ, সম্ভবত ১৬ কানিতে ১ দোণ)। তাঁদের পরিবারের ছিল প্রচুর মুসলিম, হিন্দু ও বৌদ্ধ চাষা। মহামান্য সংঘরাজের শান্তি বিহারে চাষারা প্রতি কৃষি মৌসুমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায়-ভক্তিতে নিয়ে আসত তাদের আবাদের বিভিন্ন মৌসুমী ফসল। এবং মান্যবর উদারপ্রাণা সংঘরাজ নিজের জমি যারা যারা চাষাবাদ করত তাদেরকে একেবারেই তা দান করে দেন, কোন প্রকার বিনিময় ব্যতিরেখে। সুবিশাল মৈত্রীঋদ্ধ ত্যাগশীলতা না থাকলে অবৌদ্ধদের কাছে জমিদান করা কখনোই সম্ভব নয়। সংঘরাজ ভন্তে নাকি মৃত্যুর সময়ও বলে গেছেন ঐ জমিগুলোতে যাতে তাঁর কোন আত্মীয়-স্বজন কোন প্রকার দাবি নিয়ে না যান। তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূ-সম্পত্তি দানের অনন্য প্রমাণ হল বাঁশখালী কেন্দ্রীয় শীলকূপ চৈত্য বিহারের(পূর্বনাম, শীলকূপ সাধন কুটীর) ভূমি দান। উক্ত বিহারের সমুদয় ভূ-সম্পদ মহামান্য সপ্তম সংঘরাজের দানের উপর প্রতিষ্ঠিত। এছাড়া শীলকূপ বৌদ্ধ মহাশ্মশানেও তিনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভূমি দান করে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ সংগঠক অভয়তিষ্য:
মান্যবর সংঘরাজের জন্ম জয়ন্তী তাঁর ভক্ত অনুরাগী ও শিষ্যদের দ্বারা সম্পন্ন হয় ৭ এপ্রিল ১৯৬৩ ইংরেজীতে; যেটি স্মরণকালের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ ভিক্ষুর জন্ম জয়ন্তী হিসেবে লোকমুখে প্রচারিত। সেই জয়ন্তী অনুষ্ঠানে মহাস্থবির নিকায়ের নেতৃত্বসম্পন্ন ভিক্ষু প্রিয়ানন্দ মহাস্থবির ও ধর্মপাল মহাস্থবিরকে নিজের পাশে বসিয়ে অনুষ্ঠানে করেন, যেখানে সংঘরাজ ও মহাস্থবির নিকায়ের ভিক্ষুদের জন্য আলাদা আসনের ব্যবস্থা হয়েছিল (তৎসময়ে নিকায় বিভেদ এখনকার চাইতে প্রবল ছিল এবং এখনো যেটি বাঙালি বৌদ্ধদের সার্বিক উন্নয়নে বিষফোঁড়া সেটি হল এই নিকায় বিভেদ)। বাঙালি বৌদ্ধদের আরেক সিংহপুরুষ, বাঙালি বৌদ্ধদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের অগ্রনায়ক ও মুক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বহুলোকের প্রাণের রক্ষক মহাসংঘনায়ক কর্মবীর বিশুদ্ধানন্দ মহাথের যখন ঢাকার বুকে ধর্মরাজিক মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করছেন, সেই সময় সংঘরাজ অভয়তিষ্য মহাস্থবিরের নৈতিক সমর্থন ও উৎসাহ ছিল উল্লেখযোগ্য। কতিপয় ভিক্ষুরা যখন কোন একটা বিশেষ ব্যাপারে মহাসংঘনায়ক বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবিরের বিরোধিতা করছিল তখন নাকি মহামান্য অভয়তিষ্য মহাস্থবির বলেছিলেন, “এঁয়া, বিশুদ্ধানন্দর বিরোধিতা নগজ্জ্য, বিশুদ্ধানন্দর কোঁয়ালত রাজটীকা আছে”, অর্থাৎ, তোমরা বিশুদ্ধানন্দের বিরোধিতা করো না, ওর কপালে রাজটীকা আছে।
মহাস্থবির নিকায় ও সংঘরাজ নিকায়ের মিলনের পক্ষেও তিনি ছিলেন অগ্রগণ্যদের অন্যতম। তাঁর সংঘরাজত্বকালে সংঘরাজ নিকায়ের পক্ষে তাঁর ও মহাস্থবির নিকায়ের পক্ষেমহাসংঘনায়ক বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবিরের যৌথ স্বাক্ষরে ২৭ জানুয়ারী ১৯৬৬ ইংরেজীতে উভয় নিকায়ের মিলন সম্পর্কিত একটি চুক্তিও হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়, কিন্তু দুর্ভাগ্য কোন এক দুর্বোধ্য কারণে চুক্তিটি আলোর মুখ দেখেনি। ১৯৬৪ সালে তাঁর সুদৃঢ় নেতৃত্বে উদ্যাপন করেন সংঘরাজ নিকায়ের শত বার্ষিকী অনুষ্ঠান, যেটি ছিল সংঘরাজ নিকায়ের তথা বাঙালি বৌদ্ধদের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক সভা।
তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতাও ছিল বিস্ময়কর। তাঁর সংঘরাজত্বকালে সামাজিক ও সাংঘিক বিরোধের নিষ্পত্তিতে তিনি ছিলেন অনন্য। সংঘরাজ নিকায়ের সমস্ত ভিক্ষুদের বিভিন্ন বিহারে উপযুক্ততানুসারে তিনি বর্ষাযাপনের জন্য পাঠাতেন। ভিক্ষুদের বিভিন্ন সমস্যা ও ভিক্ষুদের ব্যাপারে দায়কদের অভিযোগের মীমাংসা দিতে তিনি যে ক্ষিপ্রতা ও প্রাজ্ঞতার পরিচয় দিতেন তা এখনো বয়োজ্যেষ্ঠ ভিক্ষু ও দায়কদের মুখে মুখে ফেরে। যে কোন সমস্যা নিরসনে তাঁর দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্তের কথা অদ্যাবধি কিংবদন্তীতুল্য। তাঁর সতের বছরের সংঘরাজত্বকাল সত্যিই সমাজ সদ্ধর্মের জন্য অত্যন্ত মঙ্গলপ্রদায়ক ও বহুজনের নিকট শিক্ষণীয়।
মহৎকর্মের স্বীকৃতি:
পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে, ১৯২৭ সালে সংঘরাজ অভয়তিষ্য মহাস্থবিরের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৌদ্ধ মহাসম্মেলনে মাননীয় অভয়তিষ্য মহাস্থবিরের দূরদর্শিতা, অতিথি পরায়ণতা, নেতৃত্ব দানের প্রাজ্ঞতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষিপ্রতা প্রভৃতি উপলব্ধি করে উপস্থিত মান্যবর ভিক্ষুসংঘ ও সদ্ধর্মানুরাগী দায়কদের পক্ষ হতে তাঁকে ‘সদ্ধর্মকীর্তি’ অভিধায় ভূষিত করা হয়। ১৯৬৩ সালে অনুষ্ঠিত তাঁর জন্মজয়ন্তীতে সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর কর্মব্যস্ততার দরূণ অনুষ্ঠানে আসতে না পারলে তাঁর শতায়ু কামনা করে পাঠিয়েছিলেন গভর্ণরের বাণী, বাণী পাঠিয়েছিলেন বিশ্ব বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সংঘের তদানীন্তন সভাপতিও। আলোচ্য জন্ম জয়ন্তী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভিক্ষুসংঘ ও সুবিশাল জনতার সর্বসম্মতিতে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘অভয়তিষ্য শিক্ষা ফান্ড’। ১৯৫৮ সালে তাঁর প্রিয় শিষ্য বাঁশখালী কেন্দ্রীয় শীলকূপ চৈত্য বিহারের অধ্যক্ষ, সব্যসাচী কর্মবীর জ্ঞানপাল মহাস্থবির সংঘরাজের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতিষ্ঠা করেন, ‘অভয়তিষ্য পালি টোল’; ১৯৮৪ সালে চৈত্য বিহারে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘অভয়তিষ্য স্মৃতি গ্রন্থাগার’। চৈত্য বিহারের বর্তমান অধ্যক্ষ, পুজ্য সংঘরাজেরই মাতুলালয়ের দিকের বংশধর, কর্মবীর, ধর্মদূত দেবমিত্র মহাস্থবিরের সুশীল চিন্তা ও কর্মের ফলে উক্ত গ্রন্থাগার বর্তমানে ৫,০০০ মত বইয়ে সমৃদ্ধ। কর্মবীর দেবমিত্র মহাস্থবিরের প্রচেষ্ঠায় শীলকূপ গ্রামে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় সংঘরাজ জন্মবার্ষিকী, গঠিত হয়েছে ‘সংঘরাজ অভয়তিষ্য কল্যাণ ট্রাস্ট’, ‘সংঘরাজ অভয়তিষ্য মেধাবৃত্তি সংসদ’; সাতবাড়িয়া শান্তি বিহারের দায়ক-দায়িকাদের উদ্যোগে সাতবাড়িয়া দেওয়ানজী পাড়ায় গঠিত হয়েছে ‘অভয়তিষ্য মহাস্থবির বৃত্তি পরিষদ’; চন্দনাইশ থানার বরমা গ্রামে ও ভারতের পশ্চিম বঙ্গের রিষঢ়া নামক এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘সংঘরাজ অভয়তিষ্য বিহার’ এবং সংঘরাজ অভয়তিষ্য মহাস্থবিরের জন্ম জনপদ কাহারঘোনা-মিন্জিরীতলা গ্রামের পারিজাতারাম বিহারের নাম পরিবর্ধন করে রাখা হয়েছে ‘সংঘরাজ অভয়তিষ্য পারিজাতারাম’।
শিষ্য সংগঠন:
বাঙালি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মাঝে সংঘরাজ অভয়তিষ্য ভন্তের শিষ্য-প্রশিষ্যরা অদ্যাবধি সংখ্যাগুরু বলা চলে নির্দ্ধিধায়। তাঁর শিষ্য গণের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, বিনয়াচার্য ধর্মকীর্তি মহাস্থবির(শীলকূপ, বাঁশখালী), নবম সংঘরাজ গণদেবতা নাগসেন মহাস্থবির (শীলকূপ, বাঁশখালী), জ্ঞানদীপ জ্ঞানবংশ স্থবির (শীলকূপ, বাঁশখালী), সাহিত্য বিনোদ ধর্মজ্যোতি মহাস্থবির (শীলকূপ, বাঁশখালী), কর্মবীর জ্ঞানপাল মহাস্থবির (রূপনগর, সাতকানিয়া), সংঘপুরুষ সুদর্শন মহাস্থবির (রূপনগর, সাতকানিয়া), সংঘপুরুষ অতুলসেন মহাস্থবির(-বড়হাতিয়া, সাতকানিয়া), মৈত্রীপ্রদীপ সংঘরক্ষিত মহাস্থবির (পূর্বজোয়ারা, চন্দনাইশ) সংঘপুরুষ ভারতীয় সঙ্ঘরাজ রতনজ্যোতি মহাস্থবির(সাতবাড়িয়া দেওয়ানজীপাড়া), অধ্যাপক ড.শাসনরক্ষিত মহাস্থবির (ঢাকাখালী, আবুরখীল, রাউজান), বিদর্শনাচার্য জ্ঞানজ্যোতি মহাস্থবির (দক্ষিণ জলদী, বাঁশখালী), সংঘপুরুষ শ্রদ্ধানন্দ মহাস্থবির (পূর্ব সাতবাড়িয়া, চন্দনাইশ), সংঘপুরুষ ধর্মদর্শী মহাস্থবির (কাহারঘোনা-মিন্জিরীতলা, বাঁশখালী), সংঘপুরুষ সদ্ধর্মপ্রিয় মহাস্থবির (গাছবাড়িয়া, চন্দনাইশ), সংঘপুরুষ শীলপ্রিয় ভিক্ষু (তেকোটা, পটিয়া), সংঘপুরুষ পরমানন্দ মহাস্থবির (পাহাড়তলী, রাউজান), সংঘপুরুষ প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাস্থবির (রূপনগর, সাতকানিয়া), সংঘপুরুষ ধর্মপাল ভিক্ষু (ফতেনগর, চন্দনাইশ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালি বিভাগ প্রতিষ্ঠাতা ও পালি সাহিত্যের ইতিহাস, মধ্যভারতীয় আর্যভাষা প্রভৃতি গ্রন্থের লেখক, অধ্যাপক ড. রবীন্দ্র বিজয় বড়ুয়া (শীলকূপ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুমঙ্গল বড়ুয়া (কাঞ্চনগর, চন্দনাইশ) প্রমুখ। তাঁর প্রশিষ্য সংখ্যাও হয়তো দু’তিন শতাধিক হবে। সত্যিই অনেকগুলো উপযুক্ত শিষ্যের গুরু হয়ে তিনি সশরীরে যেমন সদ্ধর্মের সেবা করেছেন তেমনি শিক্ষা দীক্ষা দিয়ে শিষ্য-প্রশিষ্যদের দ্বারাও সদ্ধর্ম-সমাজ সেবার যে ভিত পূজ্য ভন্তে করে গেছেন তা অতুলনীয়।
মহাপ্রয়াণ:
মহান সংঘপুরুষ, শাসনকান্ডারী, মহামৈত্রী সাধক, ত্যাগশীল, ক্ষমার মূর্ত প্রতীক, ধীমান সংগঠক সদ্ধর্মের অনুপম আলোকবর্তিকা মহাসংঘরাজ অভয়তিষ্য মহাস্থবির অনিত্যতার সত্যতায় তিন দিন যাবত ব্যাধি দুঃখ উপলব্ধি করে ১লা জুলাই ১৯৭৪ ইংরেজী, ১৬ আষাঢ় ১৩৮১ বাংলা সোমবার সকাল ৬টায় সুদীর্ঘ ৭১ বছর ভিক্ষু জীবন, ১৭ বছর সংঘরাজের দায়িত্ব পালন করে ৯১ বছর বয়সে সাতবাড়িয়া শান্তি বিহারের শান্ত ও গম্ভীর পরিবেশে আনাপান বায়ু ত্যাগ করেন (অনিচ্চ বত সঙ্খার)।
১৯৭৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী ভারতের রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার প্রাপ্ত, মহাপণ্ডিত, অনুবাদক, লেখক, গবেষক ধর্মাধার মহাস্থবিরের(পরবর্তীতে ভারতীয় সংঘরাজ) সভাপতিত্বে বিপুল জনতা ও বহু মান্যবর ভিক্ষুসংঘের উপস্থিতিতে সমাপন করা হয় তাঁর পূত দেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। তাঁর নশ্বর দেহ ধরণী হতে বিলীন হলেও তাঁর কর্মবিভা যুগ যুগান্তরে আমাদের দেখিয়ে চলেছে শান্তি, সৌম্যতা ও মৈত্রী প্রেমের প্রদীপ্ত মশালের দীপ্ত শিখা।
জয়তু সপ্তম সংঘরাজ
জয়তু সদ্ধর্মকীর্তি
জয়তু অভয়তিষ্য মহাস্থবির।
আকর :
১. ‘জিনরত্ন স্মারক’ – ১লা মে ২০০৮ ইংরেজী ও অভয়তিষ্য স্মারক, সম্পাদনায়- এস.জ্ঞানমিত্র ভিক্ষু (নিপুন বড়ুয়া) ও সুমনতিষ্য শ্রামণ।
২. ‘পরপারগত বাঁশখালীজাত মহামান্য সংঘরাজত্রয়, শীলকূপজাত সংঘমনীষা ও স্বনামধন্য গৃহীব্যক্তিত্বগণের সংক্ষিপ্ত তথ্যপঞ্জী’- সংগ্রাহক ও সংকলক, এস. জ্ঞানমিত্র ভিক্ষু (নিপুন বড়ুয়া); ১১ মার্চ ২০১১ ইংরেজী।
৩. ‘বাঁশখালী কেন্দ্রীয় শীলকূপ চৈত্য বিহার উৎসর্গ ও বিহারের নবরূপকার কর্মবীর দেবমিত্র মহাস্থবির বরণ উপলক্ষে প্রকাশিত পরপারগত বাঁশখালীজাত মহামান্য সংঘরাজত্রয়, শীলকূপজাত সংঘমনীষা ও স্বনামধন্য গৃহীব্যক্তিত্বগণের সংক্ষিপ্ত তথ্যপঞ্জী’- সংগ্রাহক ও সংকলক, এস. জ্ঞানমিত্র ভিক্ষু (নিপুন বড়ুয়া); ২৭ জানুয়ারি’ ২০১২ইং, শুক্রবার।
৪. সংঘনায়ক অভয়তিষ্য মহাস্থবির, লেখক- অতুলসেন মহাস্থবির
নিপুন বড়ুয়া চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানার অন্তর্গত বঙ্গীয় বৌদ্ধদের খ্যতিসম্পন্ন ও সুপরিচিত শীলকূপ গ্রামের জন্মজাত সন্তান। নিপুন বর্তমানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে PhD Degree অর্জনের জন্য গবেষণায় নিয়োজিত আছেন। অদ্যাবধি তাঁর বহু প্রবন্ধ ও গ্রন্থ পাঠক মহলে ব্যাপক নন্দিত হয়েছে।