পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরেরা ধর্মীয় উপসনালয়ে পর্যন্ত আক্রমণ করতে দ্বিধাবোধ করেনি। ১৯৭১ সালের ৬ মে মহেশখালী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন বৌদ্ধ বিহারে ধর্ম পিপাসুদের উদ্দেশ্যে দেশনারত অবস্থায় অতর্কিত হামলা করে হানাদার বাহিনী। এসময় হানাদাররা বিহারের প্রধান ও অধ্যক্ষ ভিক্ষু উ তেজিন্দা মহাথেরসহ আটজনকে এবং নির্যাতন করে হত্যা করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উ আদুং মং রাখাইন, উ মাদ্রা রাখাইন, উ মংটিন রাখাইন, উযেন চা রাখাইন, উ অং টি রাখাইন, উ ঞানা রাখাইনকে বিহারে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে।
পাকিস্তানি হায়েনাদের কবল থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া চচা মং রাখাইন ও চিং হ্লা মং রাখাইন (বাকপ্রতিবন্ধি, বোবা) আজো ঠাকুরতলায় রাখাইন পাড়ায় বসবাস করছে। একই দিন মহেশখালী লামার পাড়ায় আক্রমণ চালিয়ে বৌদ্ধ বিহারও তিন শিষ্যকে আগুনে পুড়িয়ে মারে। এ সর্ম্পকে রাখাইন গবেষক, মং ছেন মংচীন বলেন, ঝড়ে পড়ল কয়েকটি তাজা প্রাণ (গোলাম মোর্তজা সম্পাদিত, ভুলি নাই : স্বাধীনতার পঁচিশ বছর স্বাধীনতা অনন্তকালের, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭) নামক প্রবন্ধে লিখেন, মহেশখালী লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহারে আক্রমণ চালিয়ে উ ঞানা, উ যেন চা এবং নাম না জানা এক শিষ্যকে বৌদ্ধ বিহারে প্রাত:রাশ রন্ধনরত অবস্থায় তিনজন কুখ্যাত পাকিস্তানি সৈনিক বিহারের উপর হঠাৎ আক্রমণ করে বুদ্ধের মূর্তি লক্ষ করে গুলি ছুঁড়ে। যার ফলে মূর্তির বামবাহু আঘাতপ্রাপ্ত হয়। অতপর সৈনিকেরা ভিক্ষুদেরকে নিচে নেমে আসার আদেশ দেয় এবং ঐ রান্নাঘরে ভেতরে জোরপূর্বক আটক রেখে বাইরে তালাবদ্ধ করা হয়। এরপর বর্বর সৈনিকেরা বিহারের নিকটস্থ খড়ের চালা সংগ্রহ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এবাবে নির্মম শিকার হয়ে আগুনে পুড়ে জীবন দিতে হল নিরাপরাধ তিন বুদ্ধ শিষ্যকে।
আমেরিকা প্রবাসী উৎস বড়ুয়া জয়, বিএ (অনার্স), এমএ, পিজিডি, এমফিল, প্রাবন্ধিক, গবেষক।