রাঙ্গামাটিতে সাম্প্রতিক সেটেলার ভূমি দস্যুদের দ্বারা সহিংসতার কারণে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী রাশেল চাকমা। তার দুটি দোকান —রাশেল স্টোর ও প্রিয় স্টোর— পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে, যার ফলে তার প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, এই অগ্নিকাণ্ডটি সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত ছিল, যা শুধুমাত্র তার দোকানগুলোকেই গ্রাস করেনি, পাশাপাশি দোকান থেকে বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস, বিশেষ করে বুদ্ধ মূর্তি চুরি করা হয়েছে। রাশেল স্টোরে প্রায় ৯২ লাখ টাকা এবং প্রিয় স্টোরে ৬২ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বর্তমানে রাশেল চাকমা তার উপর ঘটে যাওয়া এই বিশাল ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন এবং নিজের ব্যবসাকে আবার গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছেন। তিনি একটি ব্যাংক থেকে ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তার দোকানগুলোতে পুনরায় মালামাল মজুদ করার চেষ্টা করছেন। অগ্নিকাণ্ডের আগে তার দোকানগুলোতে ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র (চীবর), ভিক্ষাপাত্র (সাবক), কম্বল, বুদ্ধ মূর্তি এবং বিভিন্ন স্টেশনারি পণ্য বিক্রি করা হতো।
রাশেল চাকমা কিডনি রোগে ভুগছেন এবং গত এক বছর ধরে ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার মাসিক চিকিৎসার খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা, যা তার ব্যবসা থেকেই মেটানো হতো। কিন্তু তার দোকানগুলো ধ্বংস হওয়ায় সেই আয় বন্ধ হয়ে গেছে, এবং তার চিকিৎসার খরচও মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের পর তার মা উষা চাকমাকে এক পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে বুদ্ধ মূর্তির টুকরো ও ভিক্ষুদের পোশাক পরিষ্কার করতে দেখা যায়। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেদিনের সহিংসতার কথা স্মরণ করে বলেন, “আমি দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। পরে শুনি যে দোকানে আগুন লেগেছে।” উষা চাকমা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের আবেদন করেন এবং দোষীদের শাস্তির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ চান।
রাঙ্গামাটির সহকারী কমিশনার (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) রিফাত আসমা নিশ্চিত করেছেন যে, এই সহিংসতায় ১১টি বাড়ি ধ্বংস, ৭টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া এবং ২২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ বাড়ি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ছিল, যদিও ৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাঙালিদেরও ছিল। এতে এই হামলার উদ্দেশ্য ও টার্গেটিং সম্পর্কে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
এই সহিংসতা ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির দীঘিনালার একটি ঘটনার পর বৃদ্ধি পায়, যার জেরে রাঙ্গামাটিতে প্রতিবাদ শুরু হয়। প্রতিবাদের সময় প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় অনিক চাকমা নামের এক কলেজ পড়ুয়া আদিবাসী ছেলেকে। পরের দিন অনিকের বাবা রাঙ্গামাটি কোতোয়ালি থানায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
রাশেল চাকমার এই সংগ্রাম শুধু একটি ব্যক্তিগত গল্প নয়; এটি রাঙ্গামাটির পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বর্তমান দুঃখ-দুর্দশার প্রতিচ্ছবি। সহিংসতা, অর্থনৈতিক ক্ষতি ও পুনর্গঠনের এই কঠিন লড়াইটি এই অঞ্চলের মানুষদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
- –১০ অক্টোবর ২০২৪/ দি ডেইলি ম্যাসেঞ্জার অবলম্বনে নিজস্ব প্রতিবেদক।