ছবিগুলো একবার দেখুন। তারপর ভেবে দেখুন এদেশে আমাদের বিহারগুলোতে অবস্থান করা সেই ছোট্ট শ্রামণদের জীবন। এই বয়সে মা-বাবার ভালবাসা আর ভাই-বোনদের আদর থেকে দূরে থেকে কিভাবে তারা একটি বিহারে বেড়ে উঠে?
বিশেষ করে আমাদের এদেশের বিহারে অলিখিত নিয়ম হচ্ছে একটি বিহারে একজন ভিক্ষু সাথে একজন শ্রমণ বা একজন সেবক।এই বয়সে সেই শ্রমণ বা সেবক ভোরে পাখি জাগার আগে জেগে উঠে। এই নিয়ম পরিবর্তন হয় না। কি মাঘের শীত বা ভাদ্রমাসের গরম।
তারপর বিহারে সব কাজ একা হাতে সম্পন্ন করে তারা। বিহার ঝাড় দেয়া, উঠোন পরিস্কার করা, বুদ্ধের আসনে ফুল ও পানি তোলা, দায়কের বাড়ীতে গিয়ে ছোয়াইং আনা, বুদ্ধকে পূজা তোলা, বিহারাধ্যক্ষ ভান্তেকে আসন দিয়ে পরিবেশন করা, নিজে খেয়ে সব তালা-বাসন পরিস্কার করা আরো কতো ধরনের কাজ যে করতে হয় এদেশের একজন ছোট্ট শ্রমণ বা সেবককে সে খবর আমরা যেমন হিসাবে রাখি না। তাদের কোমল হাতের একাজের এই সমাজও মূল্যায়ন করে না। অনেকে মনে করে তারা বিহারের শ্রমণ বা সেবক হয়েছে এসব করার জন্য।
তারপর আরো আছে যে বিহারে চা পানের প্রচলন আছে সেখানে দিনে কয়েকবার করে চুলায় আগুন জ্বালাতে আর চা দিতে দিতে শ্রামণ বা সেবকের পরিদেয় পোশাক হয়ে যায় কয়লার কালিতে মাখামাখি।
তাপর নিজের স্কুলের পড়া তৈরী করতে হয়। সেই সময় কোথায়? নিজে নিজে তৈরী হতে হয় স্কুলে যাওয়ার জন্য। শুধু নিজের কাপড় কাচতে হয় না, তাকে কাচতে হয় বিহারের কাপড়, বেডসহ বিহারাধ্যক্ষের পরিদেয় চীবর।
তারপরও আমাদের এদেশের বিহারগুলোতে বেড়ে উঠা এই ছোট্ট শ্রামণ বা সেবকেরা আমাদের ক’জনের প্রিয় পাত্র হয়? বিহারের দায়ক-দায়িকারা ক’জনে তাদের ক্ষুদ্র ভুল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে? আমাদের শ্রদ্ধেয় বিহারাধ্যক্ষ ভান্তেরা ক’জনে এদের এজন বড় ভাই, পিতা বা দাদুর স্নেহ বন্ধনে জড়িয়ে রাখে?
সেদিন ফেইসবুকে এক ভন্তের দেয়া স্ট্যাটাসে দেখলাম, বেশী হলে ৫ বছরের সামান্য বেশী হবে এক ছোট্ট শ্রামণ ইট বহন করছে। একটি না; নিয়েছে চার-চারটি ইটি। ডান কাদে ২টি, বাম কাদে দুটি। স্ট্যাটাসে ভন্তে মহোদয় লিখেছেন, ‘কর্মই ধর্ম, ধর্মই কর্ম। এ মহৎ মন্ত্রে উজ্জীবিত হোক সকল মানব জাতি।’
কর্মই ধর্ম, ধর্মই কর্ম আমাদের মনে থাকলেও আমরা কি করে ভুলে যায় কর্মের শ্রেণী বিন্যাস। বয়স বা ক্ষমতা/যোগ্যতার নিরিকে কর্ম সম্পাদনের কথা।
যেখানে বর্তমান শিশু শ্রম আইনগত ভাবে বন্ধ করে বিদ্যা অর্জনে স্কুলের ব্যাগ বহণেও করা হচ্ছে ওজন নির্ধারণের কঠোর নিয়মাবলী। সেখানে আমরা একটা ছোট্ট শ্রামণের কোমল শরীরে চার-চারটি ইট তুলে দিয়ে কি করে মহৎ কর্ম সম্পাদনের দৃষ্টান্ত হিসাবে দেখাতে পারি? এটা আমাদের রুচি বোধ বা বিবেকে পচন যে ধরেছে তার প্রমান নয় কি?
এখন বা আজকে যারা শ্রামণ বা সেবক তারা আগামীতে আমাদের সদ্ধর্ম ও সমাজের ভবিষ্যৎ একথা আমাদের মনে রাখা দরকার। তাঁর দৃষ্টান্ত আমাদের বর্তমান এই বৌদ্ধ সমাজ। অতীতে যারা কোন বিহারে শ্রমণ ছিল তারা বর্তমানে থের, মহাথের, সংঘরাজ, সংঘনায়ক। সর্বজন পূজ্য নন্দিত সাধক এবং সদ্ধর্ম দেশক।
আসুন আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন করি….।
স্বপ্ন এবং দায়িত্ববোধ থেকে ধম্মইনফো-ডট-কম এর সূচনা। ২০১১ সালে বাংলায় প্রথম অনলাইন বৌদ্ধ সংবাদ পোর্টাল হিসেবে ধম্মইনফো যাত্রা শুরু করে, যা বৌদ্ধধর্ম, ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং নীতিমালা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রচারে পাঠকের ব্যাপক গ্রহণ যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা লাভ করে। ২০১২ সালে রামুতে মৌলবাদী হামলার পর এটি একটি শক্তিশালী সংবাদ মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তর বাংলা ভাষী বৌদ্ধদের কাছে পরিচিতি লাভ করে। যদিও নিরাপত্তাজনিত কারণে ২০১৮ সালে সাইটটি প্রকাশনা বন্ধ করা হয়, ২০২৪ সালে ধম্মবিরীয় ভিক্ষুর নেতৃত্বে এটি আবার চালু হলে ধম্মইনফো বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার, বাংলাদেশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে সংবাদ, ঐতিহাসিক নিদর্শন, মণিষীদের জীবনী প্রকাশ, এবং ধর্মীয় উন্নয়নে কাজ করছে