কিশোরগঞ্জ, বাংলাদেশ – করিমগঞ্জে গত শনিবার ভোরে হৃদয় রবি দাস নামে এক তরুণের মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া এবং বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ২১ বছর বয়সী হৃদয় রবি দাস, যিনি জয়কা বারুক বাজার এলাকার রিকশাচালক জুগেস রবি দাসের ছেলে, করিমগঞ্জের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
ঘটনাটি কীভাবে ঘটল?
হৃদয় রবি দাস কিছুদিন ধরে নোয়াবাদ ভূঁইয়া বাজারের একটি সেলুনে নরসুন্দর হিসেবে কাজ করতেন। সেখানেই তার পরিচয় হয় একটি মুসলিম কিশোরীর (১৬) সঙ্গে এবং দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্ক নিয়ে কিশোরীর পরিবারে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় হৃদয় ও তার চাচাতো ভাই শাকিল রবি দাসকে বাজারের ক্লাবঘরে ডেকে নিয়ে যায় কিশোরীর পরিবার। সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, বাজার কমিটির সভাপতি মঞ্জিল মিয়া এবং আরও কিছু ব্যক্তি।
জিজ্ঞাসাবাদ এবং মারধরের ঘটনা
শাকিল রবি দাস জানিয়েছেন, তাঁদের মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ক্লাবে আটকে রাখা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে, তাঁদের মারধর করা হয় এবং অটোরিকশায় করে সেনাক্যাম্পে পাঠানো হয়। সেখানে হৃদয়কে এক কক্ষে এবং শাকিলকে অন্য কক্ষে রাখা হয়। পরবর্তীতে, হৃদয় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তবে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
চেয়ারম্যানের দাবি
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, তারা শুধু হৃদয়ের মুঠোফোন চেক করেছিলেন এবং তাকে শুধুমাত্র জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তার ফোনে কিশোরীর ব্যাপারে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। পরে, তিনজন চৌকিদার এবং কয়েকজন স্থানীয় লোক তাঁদের সেনাক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়।
হৃদয়ের বাবা ও পরিবারের অভিযোগ
হৃদয়ের বাবা, জুগেস রবি দাস, জানিয়েছেন যে, তিনি সন্ধ্যার সময় বাজারে গিয়ে শুনেছিলেন যে, তার ছেলেকে সেনাক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে তিনি তার স্ত্রীসহ সেনাক্যাম্পে গিয়ে ছেলেকে দেখতে চান, কিন্তু সেনাসদস্যরা তাকে দেখাতে দেননি। সকাল ৬টার দিকে এক কর্মকর্তার ফোনে খবর পান যে, হৃদয় গুরুতর অসুস্থ, এবং হাসপাতালে গিয়ে তার মৃতদেহ দেখতে পান।
সেনাক্যাম্পের বিবৃতি
কিশোরগঞ্জের সেনাক্যাম্পের লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজুল করিম প্রথম আলোকে জানান, হৃদয়কে স্থানীয়রা গণপিটুনি দিয়ে তাঁদের কাছে হস্তান্তর করে। তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন, যেখানে হৃদয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয় বলে দাবি করা হয়েছে। তবে, সেনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হৃদয় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কিছু মানুষ এই ঘটনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় নেতাদের দোষারোপ করেছে, আবার অনেকে দাবি করেছে যে, এটি ধর্মীয় ও সামাজিক সহিষ্ণুতা সংক্রান্ত একটি বড় সংকট। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
হৃদয় রবি দাসের রহস্যজনক মৃত্যু এখনো এটি পুরোপুরি পরিষ্কার করেনি পুলিশ। পুলিশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এবং সেনাবাহিনীর বিবৃতি অপেক্ষায় রয়েছে। তবে, এ ঘটনার পর যে প্রশ্নগুলো উঠে এসেছে, তা হল স্থানীয় নেতৃত্বের ভূমিকা, সেনা ক্যাম্পের আচরণ, এবং সামাজিক নিরাপত্তার অভাব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তোলা হচ্ছে।