মিজোরাম সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের স্থানান্তর করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই শরণার্থীরা মূলত বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দা, যারা কয়েক বছর ধরে মিজোরামের বিভিন্ন অঞ্চলে আশ্রয় নিয়ে আছেন। ২৭ নভেম্বর ২০২৪-এ বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন তাদের চারটি নির্দিষ্ট গ্রামে স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশি শরণার্থীদের অবস্থা
পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পালিয়ে আসা প্রায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষ বর্তমানে মিজোরামের লংৎলাই জেলার বিভিন্ন গ্রামে বসবাস করছেন। এদের মধ্যে বম এবং তংচঙ্গিয়া জাতিগোষ্ঠীর মানুষরা রয়েছেন, যারা বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী সাম্প্রদায়িক সংঘাত এবং ভূমি দখলের শিকার।
শরণার্থীদের জন্য খাদ্য, আশ্রয়, এবং চিকিৎসার মতো মৌলিক সুবিধা অপ্রতুল থাকায় তাদের জীবনধারা ক্রমেই সংকটময় হয়ে উঠেছে। স্থানান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার এই সংকট সমাধানের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বিশেষ উদ্বেগ
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আসা শরণার্থীরা সাম্প্রদায়িক সংঘাত, ভূমি দখল এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে বাংলাদেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। তাদের অনেকেই জানান, স্থানীয় প্রশাসন তাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল।
বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, কারণ এই অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বারা নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার। এই শরণার্থীদের জীবন রক্ষার জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যা আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মিজোরাম সরকারের অবস্থান
মিজোরাম সরকার শরণার্থীদের স্থানান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের জন্য একটি নিরাপদ এবং সংগঠিত পরিবেশ তৈরি করতে চায়। তবে, স্থানীয় জনগণের ওপর শরণার্থীদের চাপ কমানো এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম সহজ করাও এই উদ্যোগের অন্যতম কারণ।
মানবাধিকার সংস্থার প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ থেকে আসা এই শরণার্থীদের স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, স্থানান্তরের আগে শরণার্থীদের সম্মতি ও দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন পরিকল্পনা জরুরি।
বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের জন্য এই সংকট শুধু একটি মানবিক সমস্যা নয়, বরং এটি বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় ব্যর্থতারও প্রমাণ। মিজোরাম সরকারের উদ্যোগ আশাব্যঞ্জক হলেও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই সংকট সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে এবং বাংলাদেশের সরকারেরও দায়িত্ব নিতে হবে। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া পাহাড়ের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে তাদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।