ভারতে পথকুকুর নিধনের রায়ের প্রেক্ষাপটে সহমর্মিতা ও প্রাণীর অধিকারের এক অনন্য উদাহরণ
ধর্ম, দেশ বা ভাষার ভেদাভেদ ভুলে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান “Walk for Peace” পদযাত্রা এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের এই দীর্ঘ তীর্থযাত্রায় সম্প্রতি নতুন এক আকর্ষণের জন্ম হয়েছে—এক ভারতীয় দেশি কুকুর, যার নাম Alaka। তার শান্ত পদচারণা, নীরব বিশ্বস্ততা ও মানবিক উপস্থিতি এই আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
ভারতীয় পথ থেকে আমেরিকার পথ—Alaka-র যাত্রা

ভারতের রাস্তায় জন্ম নেওয়া সাধারণ দেশি কুকুরদের মতোই ছিল Alaka-র শৈশব। বংশহীন, পরিচয়হীন, কারো সঙ্গ ছাড়াই বড় হওয়া এই কুকুরটির জীবনে কোনো একদিন বিশেষত্ব আসবে—এটা কেউ ভাবতে পারেনি।
বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় ঘটে ভারতের এক তীর্থযাত্রায়। ভিক্ষুরা তাকে খাবার দেন, একটু স্নেহ দেন—আর সে আর তাদের ছেড়ে যায়নি। দিনদিন ঘিরে রাখতে থাকা এই সম্পর্ক পরে রূপ নেয় গভীর বন্ধনে।
দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষুদের সঙ্গে থেকে Alaka হয়ে ওঠে এক বিশ্বস্ত সঙ্গী। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হওয়া শান্তি–পদযাত্রা “Walk for Peace”-এর সঙ্গেও তাকে দেখা যায় একই অবিচল ছায়ার মতো।
একদল বৌদ্ধ ভিক্ষুর যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে ওয়াশিংটন ডিসি পর্যন্ত প্রায় ২,৩০০ মাইল পথ হাঁটছেন, বিশ্বে অহিংসা ও শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া, অসহিষ্ণুতা ও বিভাজনের বিপরীতে মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, সম্প্রদায়, জাতি ও সংস্কৃতি অতিক্রম করে ঐক্যের আহ্বানের উদ্দেশ্যে।
বিভিন্ন শহর ও অঙ্গরাজ্যে স্থানীয় মানুষ এই ভিক্ষুদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন, শান্তির এই নীরব পদচারণাকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তবে সবার নজর কাড়ছে একটি বিশেষ সঙ্গীর উপস্থিতি—Alaka।
তার শান্ত স্বভাব, কোমল চোখ এবং ভিক্ষুদের প্রতি নিঃস্বার্থ আনুগত্য দেখতে মানুষ প্রভাবিত হচ্ছে, ছবি তুলছে, খাবার দিচ্ছে, আবার কেউ কেউ নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন—“এত শান্ত কুকুর আগে দেখি নি।”
মানুষের হৃদয়ে নতুন আলো জ্বালাচ্ছে Alaka

যে প্রাণীটি হয়তো ভারতের পথে অবহেলা, অবজ্ঞা আর অনিশ্চয়তার মধ্যেই জীবন কাটাত, সেই Alaka আজ হাজার মানুষের হৃদয়ে মানবিকতার আলো জ্বালাচ্ছে। তার হাঁটা যেন নিছক পথচলা নয়—বরং এটি করুণার এক নীরব প্রতীক।
শন্তি পদযাত্রার বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বলছেন—
“Alaka আমাদের দলের সদস্য। সে শুধু কুকুর নয়—সে শান্তির পথে হাঁটা একজন সহযাত্রী।”
মানুষের প্রতি তার বিনয়ী আচরণ, ভিক্ষুদের প্রতি নিখাদ আনুগত্য এবং চারপাশের পরিবেশে তার শান্ত উপস্থিতি যেন এই বার্তাই দেয়— করুণা শুধু মানুষের জন্য নয়; সব জীবের জন্য।
ভারতে পথকুকুর নিধনের রায়ের প্রেক্ষাপটে Alaka এক প্রতিরোধের প্রতীক
সম্প্রতি ভারতের আদালত পথকুকুর নিধনের পক্ষে রায় দিয়েছে, যা দেশজুড়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। যেখানে বংশহীন ও নামহীন প্রাণীগুলোর একমাত্র অপরাধ—তারা রাস্তায় থাকে; সেখানে আইনগতভাবে তাদের জীবন কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত মানবিকতার আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এই প্রেক্ষাপটে Alaka-র গল্প হয়ে উঠেছে এক উজ্জ্বল পাল্টা উদাহরণ।
একটি পথকুকুর—
- মানুষকে ভালোবাসতে পারে
- সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে
- আধ্যাত্মিক আন্দোলনের অংশ হতে পারে
- এমনকি নিজ আচরণে হাজার মানুষের মন নরম করে দিতে পারে
Alaka যেন সেই প্রাণবন্ত প্রশ্নবোধক চিহ্ন— “যে প্রাণ মানুষকে রক্ষা করতে পারে, তার উপর মানুষের নিষ্ঠুরতা কেন?”
ভারতের লাখো পথকুকুরের মতো Alaka-ও হয়তো নিষ্ঠুরতা, নির্যাতন বা মৃত্যুর শিকার হতে পারত। কিন্তু ভিক্ষুদের স্নেহ ও আশ্রয় তাকে বাঁচিয়েছে—আর সেই বাঁচানো প্রাণ আজ বিশ্ব মানবিকতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বুদ্ধের মৈত্রী–বাণী হলো— “মা যেমন তাঁর একমাত্র সন্তানকে নিজের প্রাণের চেয়ে ভালবাসে সেরুপ সকল সকল জীবের প্রতি মৈত্রী পরায়ণ হও”
বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চোখে Alaka সেই দর্শনেরই জ্যান্ত প্রতিফলন। তার প্রতি তাদের যত্ন, তার প্রতি তাদের সমানাধিকার দেওয়া, এবং পদযাত্রায় তাকে সম্পূর্ণ সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা—সবই করুণার এক বাস্তব রূপ।
Alaka ভিক্ষুদের কাছে শুধুই এক প্রাণী নয়— সে প্রেরণা, সহযাত্রী এবং সহমর্মিতার প্রতীক।

প্রকাশক ও সম্পাদক, ধম্মইনফো-ডট-কম
