তথাগত গৌতম বুদ্ধ বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার প্রসার মানসে মহান বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । এই সব বৌদ্ধ ভিক্ষুদের একমাত্র আত্নশুদ্ধির পথ ভিক্ষু পরিবাস ব্রত বা ওয়াইক । বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিবাস ব্রত (ওয়াইক) কবে বাঙ্গালী বৌদ্ধরা শুরু করেছিলেন এই বিষয়ে গবেষণার প্রয়োজন আছে ।
১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে পটিয়া থানার কর্তালা ধুংশাং বৌদ্ধ বিহারে পবিত্র ভিক্ষু সীমা স্থাপন উপলক্ষে চট্টগ্রাম বৌদ্ধ সমিতির সভাপতি দ্বিতীয় সংঘরাজ ঊনাইনপুরা নিবাসী পূন্নাচার ধর্মধারী চন্দ্রমোহন মহাস্থবির (১৮৩৪-১৯০৯) মহোদয়ের সভাপতিত্বে একমাস ব্যাপি পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত (ওয়াইক) ও বূহ্যচক্র উৎসবের আয়োজন করা হয় । উক্ত উৎসব উপলক্ষে অপুত্রক সাইর কুমারী চৌধুরী (সাইরার মাতা) এই অনুষ্ঠানের সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করেন । পবিত্র পরিবাস ব্রত পরিচালনা করেন বেলখাইন নিবাসী সাধক প্রবর কৈলাশ চন্দ্র মহাস্থবির মহোদয় । কথিত আছে, ধুংশাং বৌদ্ধ বিহার বন্যায় প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভিক্ষু সীমার পাষান স্তম্ভগুলি কোন এক ভিক্ষু অন্যত্র গ্রামে নিয়ে ভিক্ষু সীমা স্থাপন করেন ।
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে রাউজান থানার বিনাজুরী গ্রামে প্রজ্ঞাজ্যােতি মহাস্থবির (প্রসন্ন ভিক্ষু) ব্যবস্থাপনায় গ্রামবাসীদের সার্বিক সহযোগিতায় ও অর্থ সাহার্য্যে পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় ।
১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে এপ্রিল মাসে রাউজান থানার বাগোয়ান ফরাচিং বৌদ্ধ বিহারে বাণীকান্ত বড়ুয়া মাতৃদেবীর বদান্যতায় পক্ষকাল (১৫ দিন) ব্যাপি পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । উক্ত অনুষ্টানে আরাকানের সূবর্ণ বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ উ. তেজবন্ত মহাস্থবির মহোদয় ও তাঁহার স্বশিষ্য সহ উপস্থিত ছিলেন । প্রত্যেকদিন বুদ্ধের ধর্ম দর্শনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হত । ভারতীয় সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার মহামান্য সংঘরাজ ধর্মপুর নিবাসী ধর্মাধার মহাস্থবির (১৯০১-২০০০), বৈদ্যপাড়া নিবাসী অগমহাপণ্ডিত প্রজ্ঞালোক মহাস্থবির (১৮৭৯-১৯৭১), আলোচনায় অংশগ্রহণ করে যতেষ্ট জ্ঞানের পরিচয় প্রদান করেন । তখন উক্ত বিহারের অধ্যক্ষ ছিলেন অরুনালোক ভিক্ষু মহোদয় । এছাড়া প্রায় ১২০ জন ভিক্ষু পরিবাস ব্রত গ্রহন করেন ।
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে রাউজান থানার আবুরখীল অজান্তা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ আঁধারমানিক নিবাসী চণ্ডীচরণ মহাস্থবির মহোদয়ের দাহক্রিয়া উপলক্ষে পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় ।
১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ১২ ই জানুয়ারী চন্দনাইশ থানার কানাইমাদারী বিদর্শনারাম বৌদ্ধ বিহারে প্রজ্ঞালোক মহাস্থবির মহোদয়ের ব্যবস্থাপনায় পবিত্র পরিবাস ব্রত ও মহাভিক্ষু সমাগম অনুষ্ঠিত হয় । ২৮শে পৌষ থেকে ১২ই মাঘ পর্যন্ত এই উৎসব এবং শিল্প প্রদর্শনী মেলার আয়োজন করা হয় । উক্ত মহাভিক্ষু সমাগমে ১০৪ জন প্রাজ্ঞ ভিক্ষু সংঘ ও শ্রমন অংশ গ্রহন করেন । এছাড়া কলকাতা বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর বিহার সভার ভূতপূর্ব সাধারণ সম্পাদক ও ট্রাস্টি, নালন্দ বিদ্যাভবন এবং কর্তালা বেলখাইন মহাবোধি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা কর্তালা নিবাসী ডা. শান্ত কুমার চৌধুরী (১৮৮৩-১৯৩৬) মহোদয় উপস্থিত ছিলেন । প্রায় ১৬ হাজার লোক এতে অংশগ্রহণ করে আপ্যায়িত হয়েছিলেন । অষ্টম সংঘরাজ শীলালঙ্কার মহাস্থবির (১৯০০-২০০০), ছিলনীয়া নিবাসী জিনবংশ মহাস্থবির (১৯০০-১৯৯০) ও কানাইমাদারী নিবাসী ধর্মতিলক স্থবির (১৮৯০-১৯৪৩) অনুষ্ঠানের যাবতীয় কর্ম সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ।
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ফটিকছড়ি থানার ভূজপুর বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন মাঠে (বড় মঘের বাড়ী) গ্রামবাসী সার্বিক সহযোগিতায় ১৩ দিন ব্যাপি পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । ৭ই ফাল্গুন হতে ১৯শে ফাল্গুন পর্যন্ত বিনাজুরী, মির্জাপুর, আবদুল্লাহপুর, কোঠেরপাড়, ছিলনীয়া, জানারখীল, হাইদচকিয়া, হারুয়ালছড়ি, দমদমা প্রভৃতি গ্রামের লোকেরা বিভিন্ন ভাবে সাহার্য্য সহযোগিতা করেন । ১৬ই ফাল্গুন সংঘ সমিতির উদ্যোগে এক সাধারণ অধিবেশন আরম্ব হয় । উক্ত সভায় সর্বসন্মতিক্রমে আর্যবংশ মহাস্থবির (১৮৯৪-১৯৬৮), মহোদয় সভাপতির আসন গ্রহন করেন । সভার প্রারম্ভে কুমিল্লা নুরপুর নিবাসী পূণানন্দ মহাস্থবির (১৯১২-১৯৯১) উপসম্পাদা লাভ করেন । গহিরা নিবাসী মহামান্য তৃতীয় সংঘরাজ বরজ্ঞান মহাস্থবির (১৮৬৭-১৯৩৬) মহোদয়কে “শাসনকীত্তি”, হারবাং বন বিহারের অধ্যক্ষ কেতুমালা মহাস্থবির (১৮৭৮-১৯৬৭) মহোদয়কে “শীলাচার্য্য”, ঊনাইনপুরা লঙ্কারাম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ মুকুটনাইট নিবাসী জ্ঞানীশ্বর মহাস্থবির (১৮৮৭-১৯৭৪) মহোদয়কে “বিনয়াচার্য”, মহামান্য ষষ্ঠ সংঘরাজ ধর্মানন্দ মহাস্থবির (১৮৭৩-১৯৫৭) “ধর্মকথিকো” উপাধিতে ভূষিত করা হয় । সংঘশক্তি পত্রিকার তরুন সম্পাদক ধর্মপ্রিয় ভিক্ষু, জোবরা নিবাসী গুনালঙ্কার মহাস্থবির (১৮৯৩-১৯৬২), চেঁদিরপুনী নিবাসী বুদ্ধরক্ষিত মহাস্থিবর (১৯০২-১৯৯৮), বিমলতিষ্য মহাস্থবির, বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার ভূতপূর্ব সাধারণ সম্পাদক শান্তপদ মহাস্থবির (১৯১৫-১৯৮৭) প্রমুখ ভিক্ষু সংঘকে গ্রামবাসীর পক্ষ হতে অভিনন্দন করা হয় । বিবেকানন্দ মহাস্থবির (১৯০৬-১৯৯৩), ডা. যামিনী রঞ্জন বড়ুয়া, ষষ্ঠীচরণ বড়ুয়া ও শরৎ চন্দ্র বড়ুয়া (সদাগর) প্রমুখ পবিত্র পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠানে যথেষ্ট ত্যাগ স্বীকার করে পরিশ্রম করেন ।
১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ৫ই মার্চ রাউজান থানার হোয়ারাপাড়া সুদর্শন বৌদ্ধ বিহারে মান্যবর অগ্রসার মহাস্থবির (১৮৬০-১৯৪৫) মহোদয়ের জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে দশদিন ব্যাপি পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । উক্ত অনুষ্টানে ধর্মজ্যােতি মহাস্থবির মহোদয়কে সভাপতি ও পাহাড়তলী নিবাসী উকিল উমেশ চন্দ্র মুৎসুদ্দি (১৮৮১-১৯৬৫) মহোদয়কে সাধারণ সম্পাদক নিবার্চিত হন ।
১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে বাঁশখালী থানার জলদী ধর্মরত্ন বৌদ্ধ বিহারে প্রিয়রত্ন মহাস্থবির (১৮৯৪-১৯৬০) মহোদয়ের উদ্যোগে পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । উক্ত অনুষ্টান উপলক্ষে ব্যূহচক্র উৎসব আয়োজন করা হয় । প্রায় ২০ দিন ব্যাপি এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিনয়াচার্য আর্যবংশ মহাস্থবির (১৮৯৪-১৯৬৮) মহোদয় । তিনি এই উৎসবের উপদেষ্টা ও ছিলেন । তাঁহার সুনিয়ন্ত্রণে পরিবাস ও ব্যূহচক্রমেলা সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ ভাবে সুসম্পাদিত হয় । আর্যশ্রাবক জ্ঞানীশ্বর মহাস্থবির (১৮৮৭-১৯৭৪), বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্থবির (১৮৮০-১৯৭০), জলদী নিবাসী সুমঙ্গল স্থবির, মোক্ষদানন্দ স্থবির এবং শীলকূপ জ্ঞানোদয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ধর্মকীর্তি মহাস্থবির প্রমুখ পরিবাস ব্রতে অংশগ্রহণ করেন ।
১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জোয়ারা খান খানাবাদ বৌদ্ধ বিহারে প্রজ্ঞালোক মহাস্থবির (১৮৭৯-১৯৭১) মহোদয়ের উদ্দ্যােগে পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । এই উপলক্ষে অত্র গ্রামে হাজার লোক অংশগ্রহন করেন । উক্ত পরিবাস ব্রত অনুষ্টানের সাধারণ সম্পাদক নিবার্চিত হন মহিম বড়ুয়া মহোদয় । গ্রামবাসীগনের আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠান শেষ হয় ।
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে উখিয়া থানার পাতাবাড়ী বৌদ্ধ বিহারে পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । উক্ত পরিবাস ব্রত পরিচালনা করেন আর্যবংশ মহাস্থবির মহোদয় । ১৫ দিন ব্যাপি অনুষ্ঠানে মির্জাপুর নিবাসী ষষ্ঠ সংঘরাজ ধর্মানন্দ মহাস্থবির (১৮৭৩-১৯৫৭), বুদ্ধরক্ষিত মহাস্থবির প্রমুখ মহান ভিক্ষু সংঘ অংশগ্রহণ করেন ।
১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে রাঙ্গুনিয়া থানার রাজানগর শাক্যমুমি বৌদ্ধ বিহারে কুলকুরমাই নিবাসী রাজগুরু ধর্মরত্ন মহাস্থবির (১৮৯৪-১৯৬৭) মহোদয় ব্যবস্থাপনায় পক্ষকাল ব্যাপি (১৫ দিন) পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় ।
১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ১৭ই এপ্রিল রাউজান থানার খৈয়াখালী রত্নাঙ্কুর বৌদ্ধ বিহারে মহামান্য সংঘনায়ক চন্দ্রজ্যাতি মহাস্থবির (১৮৮৩-১৯৬৬) মহোদয়ের পরিচলনায় পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস অনুষ্ঠিত হয় । উক্ত পরিবাস ব্রতে আঁধারমানিক নিবাসী কবিরত্ন ধর্মানন্দ মহাস্থবির (১৮৯০-১৯৭৫) উপসম্পদা প্রাপ্ত হন । পরবর্তী কালে তিনি সংঘরাজ নিকায়ে যোগদান করে বিনাজুরী বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করেন ।
১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে পটিয়া থানার গৈরলা বৌদ্ধ সেবাসদনে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার উদ্যোগে পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয়৷ ১৩ই চৈত্র থেকে ২২শে চৈত্র উক্ত অনুষ্টান অনুষ্ঠিত হয় । এছাড়া সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার ১২তম অধিবেশন ২৪ ও ২৫ শে চৈত্র অনুষ্ঠিত হয় । কর্তালা বেলখাইন মহাবোধি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক ও জঙ্গলখাইন ইউনিয়ন বোর্ডে প্রেসিডেন্ট অতিন্দ্র লাল চৌধুরী (১৮৮৫-১৯৬৭) মহোদয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন ।
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ২৫শে ফেব্রুয়ারী রাঙ্গুনিয়া থানার শিলক সুধম্মানন্দ ধাতুচৈত্য বৌদ্ধ বিহারে পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । উক্ত পরিবাস ব্রত অনুষ্টানের অর্ভ্যথনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন অধ্যাপক মুনীন্দ্র লাল বড়ুয়া (১৮৯৭-১৯৮৬) মহোদয় ।
১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে ২৪৯৯ বুদ্ধাব্দ রাউজান থানার মধ্য আঁধারমানিক সুরৎসিং বৌদ্ধ বিহারে কর্মবীর গিরিমানন্দ মহাস্থবির (১৯২৪-১৯৯৪) মহোদয়ের সহযোগিতায় ও জিনবংশ মহাস্থবির কর্তৃক অনুষ্ঠিত ও পরিচালিত হয় পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠান ।
১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে রাউজান জ্ঞানানন্দ বৌদ্ধ বিহারে চরনদ্বীপ নিবাসী আর্যলঙ্কার মহাস্থবির মহোদয়ের অন্ত্যােষ্টিক্রীয়া উপলক্ষে পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় ।
১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ১৩৬৬ বাংলা রাউজান থানার পূর্ব বিনাজুরী রত্নাঙ্কুর বৌদ্ধ বিহারে কুমুদ রঞ্জন বড়ুয়া অর্থব্যয়ে বদান্যতায় দুই সপ্তাহ ব্যাপি পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । মান্যবর জিনবংশ মহাস্থবির মহোদয় উক্ত পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা করেন ।
১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে মার্চ মাসে কর্তালা সার্বজনীন ধাতুচৈত্য লক্ষী বিহারের অধ্যক্ষ মহামান্য সংঘনায়ক আঁধারমানিক নিবাসী বিনয়াচার্য প্রজ্ঞালঙ্কার মহাস্থবির (১৮৮৩-১৯৬০) মহোদয়ের অন্ত্যােষ্টিক্রীয়া উপলক্ষে ৯দিন ব্যাপি পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । উক্ত অনুষ্টানে সভাপতিত্ব করেন কর্তালা বেলখাইন সদ্ধর্মালঙ্কার বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ নাইখাইন নিবাসী বিনয়াচার্য বংশদীপ মহাস্থবির (১৮৮০-১৯৭০) মহোদয়।
১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে মার্চ মাসে জোবরা সুগত বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ গুণালঙ্কার মহাস্থবির (১৮৯৩-১৯৬২) মহোদয়ের অন্ত্যােষ্টিক্রীয়া উপলক্ষে পক্ষকাল ব্যাপি পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । পরিবাস ব্রত সম্পাদনের মানসে একশত ঘর নির্মিত । ৭৫ জন বৌদ্ধ ভিক্ষু পরিবাস ব্রতে অংশগ্রহন করেন । জিনবংশ মহাস্থবির মহোদয় পরিবাস ব্রত পরিচালনা করেন । বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার ভূতপূর্ব সাধারণ সম্পাদক শান্তপদ মহাস্থবির (১৯১৫-১৯৮৭) মহোদয় অক্লান্ত পরিশ্রম করেন ।
১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে ২৭শে মার্চ ২৫০৯ বুদ্ধাব্দ ঘাটচেক ধর্মামৃত বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধমূর্তির জীবন্যাস ও বিহার উৎসর্গ, ভিক্ষু সীমা প্রতিষ্ঠা, মহাস্থবিরবরণ উপলক্ষে পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা উপসংঘরাজ সুগতবংশ মহাস্থবির (১৯১২-১৯৯৮) মহোদয় পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠান পরিচালনা ও অক্লান্ত পরিশ্রম করেন ।
১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে ১৩৭৪ বাংলা রাউজান বিমলানন্দ বৌদ্ধ বিহারে পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত গিরিমানন্দ মহাস্থবির ও মির্জাপুর নিবাসী ধর্মপ্রিয় মহাস্থবির মহোদয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় । মান্যবর জিনবংশ মহাস্থবির মহোদয় পরিবাস ব্রত পরিচালনা করেন । মিঞ্জিতলা নিবাসী মহামান্য সপ্তম সংঘরাজ অভয়তিষ্য মহাস্থবির (১৮৮৫-১৯৭৪) মহোদয় সভাপতিত্ব করে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন । প্রধান অতিথি ছিলেন তদানীন্তন গর্নপূর্ত মন্ত্রী অংশুপ্রু চৌধুরী মহোদয় ।
১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে ২৫ শে ফেব্রুয়ারী রাউজান থানার কদলপুর সুর্ধামানন্দ বৌদ্ধ বিহারে ভারতীয় সংঘরাজ পণ্ডিত ধর্মাধার মহাস্থবির দ্বিসপ্ততিতম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে পক্ষকাল ব্যাপি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হেমেন্দু বিকাশ বড়ুয়া ও তাঁহার সহধর্মিনী পৃষ্ঠপোষকতায় পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । উক্ত অনুষ্টানে সভাপতিত্ব করেন মহামান্য অষ্টম সংঘরাজ শীলালঙ্কার মহাস্থবির মহোদয় । প্রধান অতিথি ছিলেন থাইল্যান্ডের মহামান্য রাজগুরু ফরা দেববরবীতি মহাস্থবির ও অখিল ভারতীয় সংঘনায়ক আঁধারমানিক নিবাসী আনন্দ মিত্র মহাস্থবির (১৯০৮-১৯৯৯) মহোদয় ।
১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে রাউজান বিমলানন্দ বৌদ্ধ বিহারে পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় । একই বছর বিমলানন্দ পালি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ।
১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারী মাসে ভারতের দত্তপুকুর জেতবন বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ ধর্মদর্শী মহাস্থবির মহোদয়ের উদ্দ্যােগে পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । পরিবাস ব্রতে পরিশুদ্ধির কাজ পরিচালনা করেন মহামান্য সংঘনায়ক আনন্দ মিত্র মহাস্থবির মহোদয় ।
১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে ১৪ই মার্চ ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার বিনাগুড়িতে “ডুয়াস বৌদ্ধ মৈত্রী সংঘ” উদ্যোগে পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । ১২ দিন ব্যাপি অনুষ্ঠানে পরিচালনা করেন ভারতীয় সংঘরাজ ধর্মাধার মহাস্থবির মহোদয় । এই উপলক্ষে বড়হাতিয়া নিবাসী অতুলসেন মহাস্থবির (১৯১০-১৯৮৫) মহোদয়ের সুর্বন জয়ন্তী পালন করা হয় । শীলকূপ নিবাসী মহামান্য নবম সংঘরাজ নাগসেন মহাস্থবির (১৯০৮-১৯৯২) মহোদয় অনুষ্ঠানে যোগদান করেন ।
১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে পটিয়া থানার মৈতলা সদ্ধর্মজ্যােতি বৌদ্ধ বিহারে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার উপসংঘরাজ শাসনপ্রিয় মহাস্থবির উদ্যোগে পক্ষকাল ব্যাপি পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় ।
১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ডাবুয়া লাঠিছড়ি চুলামনি বৌদ্ধ বিহারে পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনমোহন বড়ুয়ার পৃষ্টপোষকতায় অনুষ্টান উদ্বোধন করেছিলেন ভারতীয় সংঘরাজ পণ্ডিত ধর্মাধার মহাস্থবির মহোদয় । প্রধান অতিথি ছিলেন ড. রাষ্ট্রপাল মহাস্থবির (১৯৩০-২০১০) মহোদয় ।
১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে রাউজান থানার বিনাজুরী শান্তিনিকেতন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ গিরিমানন্দ স্থবিরের মহাস্থবির বরণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । মির্জাপুর নিবাসী ধর্মপ্রিয় মহাস্থবির মহোদয় পরিবাস ব্রত পরিচালনা করেন । এছাড়া একি বছর লাঠিছড়ি চুলামনি বৌদ্ধ বিহারে পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় ।
১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে ২রা ফেব্রুয়ারী রাউজান আনন্দ বৌদ্ধ বিহারে ১২ দিন ব্যাপি পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । উক্ত অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন অষ্টম সংঘরাজ শীলালঙ্কার মহাস্থবির মহোদয় । পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডা. সীতাংশু বিকাশ বড়ুয়া (১৯৪৪-২০০৪) মহোদয় । মির্জাপুর নিবাসী ধর্মপ্রিয় মহাস্থবির সভাপতি এবং সরিৎ কান্তি বড়ুয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন । প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন তদানীন্তন সরকারের শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু মহোদয় । এছাড়া ১২ দিন ব্যাপি পরিবাস ব্রতে যারা সভাপতিত্ব করে ধর্মদেশনা দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে বুদ্ধরক্ষিত মহাস্থবির, জিনবংশ মহাস্থবির, সুগতবংশ মহাস্থবির, নবম সংঘরাজ নাগসেন মহাস্থবির, দশম সংঘরাজ জ্যােতপাল মহাস্থবির, পুটিবিলা নিবাসী শীলাচার শাত্রী (১৯১৩-১৯৭৯), শান্তপদ মহাস্থবির, ধর্মাধার মহাস্থবির মহোদয় প্রমুখ ।
১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে ৪ই এপ্রিল ভারতীয় সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার উদ্যোগে কলকাতা বিদর্শন শিক্ষা কেন্দ্রে পবিত্র ভিক্ষু পরিবাস ব্রত অনুষ্ঠিত হয় । ভারত বাংলাদেশের ২৫ জন ভিক্ষু অংশগ্রহণ করেন । পরিবাস ব্রত উদ্বোধন করেন ধর্মাধার মহাস্থবির মহোদয় । প্রতিদিন বৌদ্ধ ধর্ম এবং সমাজ সংস্কৃতি বিষযে সভা আহবান করা হয় । সুগতবংশ মহাস্থবির, বড়হাতিয়া নিবাসী সংঘরাজ প্রজ্ঞাজ্যােতি মহাস্থবির (১৯১৯-২০১৭), জ্ঞানালোক মহাস্থবির, সাতবাড়ীয়া নিবাসী রতনজ্যােতি মহাস্থবির, ভারতীয় সংঘরাজ অধ্যাপক সত্যপাল মহাস্থবির, নজরেরটিলা নিবাসী সম্বোধি মহাস্থবির, বিপুলসেন মহাস্থবির, জ্ঞানজ্যেতি মহাস্থবির, দমদমা নিবাসী বিবেকানন্দ মহাস্থবির (১৯০৬-১৯৯৩), সুবিমল মহাস্থবির, জিনবোধি মহাস্থবির, ড. মহেশ তেওয়ারী, ডেমসা নিবাসী অনাগারিক মুনীন্দ্র লাল বড়ুয়া (১৯১৫-২০০৩), ড. দীপক কুমার বড়ুয়া (১৯৩৮-২০২২), ড. অমল বড়ুয়া, ড. বিনয়েন্দ্রনাথ চৌধুরী, রথীন্দ্র বিজয় বড়ুয়া, অজয় কুমার বড়ুয়া, মিলন কান্তি চৌধুরী প্রমুখ আলোচনায় অংশগ্রহন করেন ।
১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে জলদী ধর্মরত্ন বিহারাধ্যক্ষ ও প্রিয়রত্ন পালি টোলের অধ্যক্ষ সঙ্ঘরক্ষিত মহাস্থবির এর ৬৮ তম জয়ন্তী এবং গ্রামের দ্বিতীয় পরিবাসব্রতে আনুষ্ঠানিক পরিচালক বর্তমান উপসঙ্ঘরাজ শাসনভাস্বর শাসনপ্রিয় মহাস্হবির এবং বিনয় সন্মত পরিচালক, রামু সীমা বিহার অধিপতি বিনয়ধর, একুশে পদকপ্রাপ্ত উপসঙ্ঘরাজ সত্য প্রিয় মহাস্হবির । পুণ্যতায় অংশগ্রহণ করেন, মহামান্য দশম সঙ্ঘরাজ জ্যোতিপাল মহাথেরো (১৯১৪-২০০২) , মহামান্য একাদশ সঙ্ঘরাজ শাসনশ্রী মহাস্হবির (১৯২১-২০০৩), বিনয়ধর কোর্টবাজার পঃ রত্না পালং এর শাসনবংশ মহাস্হবির, উঃ মিটাছড়ি বনবিহারে নীরব সাধক প্রয়াত প্রজ্ঞামিত্র মহাস্হবির, বাথুয়া সঙ্ঘরক্ষিত মহাস্হবির, প্রমুখ ।
প্রায় ১৪ দিন ভিক্ষু সঙ্ঘ ও দায়ক সুধী বৃন্দ শীল দান সমাধি প্রজ্ঞার পারমী, কর্মফল, প্রভৃতি বিষয়ে ধর্মসভা অনুষ্ঠিত হয়। তদুপলক্ষে এক অনন্য স্মারক “উপালী” নামে প্রকাশিত হয়। সম্পাদক কবি মণিন্দ্র লাল বড়ুয়া, অধ্যাপক অনোমদর্শী, ছড়াকার অমিত বড়ুয়া, প্রধান শিক্ষক ডা: শান্ত কুমার বড়ুয়া, শিক্ষানুরাগী সোমেশ চন্দ্র বড়ুয়া (১৯২৫-২০১৬), কৃষি কর্মকর্তা নির্মল চন্দ্র বড়ুয় প্রমুখ ।
তথ্যসূত্র:
- ১| সংঘশক্তি পত্রিকা, ৭ম বর্ষ ৩য় সংখ্যা, ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ, ২৪৭৮ বুদ্ধাব্দ, চৈত্র পূর্ণিমা, পৃ: ২৩৯, ২৪০, সম্পাদক- ধর্মপ্রিয় ভিক্ষু ।
- ২| জগজ্যােতি পত্রিকা, নবপর্য্যায়, ১ম বর্ষ ৩য় সংখ্যা, ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ, ১৩৫৭ বাংলা, ২৪৯৪ বুদ্ধাব্দ, পৃষ্ঠা ৯০, সম্পাদক- শীলানন্দ ব্রহ্মচারী ।
- ৩| পরিবাস, ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ, ১৩৯৩ বাংলা, ২৫৩০ বুদ্ধাব্দ, পৃ: ৭,৮,৯,১০,১১,১২, সম্পাদক- ডা. সিতাংশু বিকাশ বড়ুয়া ।
- ৪| সংঘশক্তি পত্রিকা, ৩য় বর্ষ ৩য় সংখ্যা, ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ, ২৪৭৫ বুদ্ধাব্দ, পৃষ্ঠা: ১৩৩, চৈত্র পূর্ণিমা ।
- ৫| নালন্দা পত্রিকা, ২৪ বর্ষ ১ম সংখ্যা, ১৩৯৬ বাংলা, ২৫৩৩ বুদ্ধাব্দ, পৃ: ২৫, সম্পাদক- অমল বড়ুয়া ।
কর্তালা, পটিয়া, চট্টগ্রাম ।