বান্দরবান, পার্বত্য চট্টগ্রাম – পার্বত্য চট্টগ্রামে এনআইডি কার্ড থাকা সত্ত্বেও তার কার্যকারিতা প্রায় শূন্য। আদিবাসী জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে ভ্রমণকারী সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত চেকপোস্টে হয়রানির শিকার হন। সম্প্রতি বান্দরবানের এক আদিবাসী যুবক মং এ মার্মা সামাজিক মাধ্যমে তার একটি অভিনব প্রতিবাদ করেছেন। তিনি তার এনআইডি কার্ডের ছবি প্রিন্ট করা একটি টি-শার্ট পরে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। পোস্টের ক্যাপশনে মং এ মার্মা লিখেছেন, “থানছি টু বান্দরবান, বান্দরবান টু রুমা—যেকোনো জায়গায় এতবার এনআইডি কার্ড দেখাতে হয় কেন? আমরা কি বাংলাদেশি নই? এই হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে এবার এনআইডি কার্ড পকেটে না, টি-শার্টে।”
ছবিটি সোস্যাল মিডিয়াতে আদিবাসীরা ব্যাপক ভাবে শেয়ার করছে। এবং বলা হচ্ছে এর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসনের দ্বারা পাহাড়ি আদিবাসীদের পরিচয় নিয়ে যে হয়রানী করা হয় তার যথাযথ একটা প্রতিবাদের ভাষা প্রকাশ পেয়েছে।
এনআইডি কার্ড (জাতীয় পরিচয় পত্র) থাকা সত্ত্বেও পাহাড়ি জনগণ পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাবাহিনী চেকপোস্টে বার বার তল্লাশি ও প্রশ্নের সম্মুখীন হন। এনআইডি কার্ড জাতীয় পরিচয়ের প্রমাণ হলেও, এটি পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীদের চলাচলের কোনো সুরক্ষা বা স্বাধীনতা দিতে পারছে না । সেনা শাসনের কঠোর মনোভাব এবং স্থানীয় আদিবাসীদের প্রতি প্রশাসনিক অস্পৃশ্যতার কারণে এই পরিস্থিতি প্রকট হয়ে উঠেছে।
এই প্রসঙ্গে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি হিমেল চাকমার এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, “গত সপ্তাহে রাঙামাটি থেকে বিলাইছড়ির ফারুয়ার ধুপপানি যাওয়ার পথে তিনজন সাংবাদিক সরকারি দায়িত্বে যাওয়ার সময় সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে তল্লাশির শিকার হন। তাদের এনআইডি কার্ড থাকা সত্ত্বেও চেকপোস্টে তাদের আটক করা হয় এবং তাদের পরিচয় বারবার যাচাই করা হয়। সাংবাদিকদের সন্দেহভাজন করে তল্লাশি করা এবং তাদের চলাচলের উপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়। সেনা সদস্যরা তাদের নির্দেশ দেন, “২০ মিনিটের মধ্যে সদরে রিপোর্ট করতে হবে, দেরি করা যাবে না।”
এই সমস্যার মূল কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে যে, পার্বত্য অঞ্চলে এনআইডি কার্ড থাকলেও এটি কার্যত কোনো সুরক্ষা প্রদান করছে না। সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে আদিবাসী ও ভিনদেশি উভয়কেই হয়রানি করা হয় এবং তাদের পরিচয় বারবার যাচাই করা হয়। এই ব্যবস্থাপনা স্থায়ীভাবে পাহাড়ি জনগণের জীবনযাত্রাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং তাদের চলাচলের স্বাধীনতা রোধ করছে।
পাহাড়ে সেনা শাসনের তীব্র বাস্তবতা
পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসনের অধীনে স্থানীয় আদিবাসীরা নিয়মিতভাবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। সেনাবাহিনীর দাপট ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এক সাংবাদিক মন্তব্য করেন, “সেনা সদস্যদের আচরণ পাহাড়ি অঞ্চলে বনের রাজাদের মতো। তারা এখানকার সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী।” সেনাবাহিনীর অধীনে পাহাড়ি অঞ্চলে সামরিক শাসনের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী এবং অত্যন্ত শক্তিশালী, যা স্থানীয় জনগণের জীবনের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।
বান্দরবানের আদিবাসী যুবক মং এ মার্মা তার এনআইডি কার্ডের ছবি প্রিন্ট করা টি-শার্ট পরে প্রতিবাদ করেছেন, যাতে তিনি বারবার এনআইডি কার্ড দেখানোর থেকে মুক্তি পান। তার এই অভিনব প্রতিবাদ স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক শেয়ার হয়েছে। এটি পাহাড়ি আদিবাসীদের পরিচয় নিয়ে সেনাবাহিনীর হয়রানি এবং তাদের সঙ্গে করা দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদের চিত্র।
স্থানীয়দের মানসিক ও সামাজিক প্রভাব
চেকপোস্টে বারবার হয়রানি এবং সেনাবাহিনীর সন্দেহজনক আচরণের ফলে আদিবাসী পাহাড়ি জনগণ প্রতিনিয়ত মানসিক চাপের শিকার হচ্ছেন। থানছি থেকে বান্দরবান বা বান্দরবান থেকে রুমা যাওয়ার সময় প্রতিটি চেকপোস্টে তাদের এনআইডি কার্ড দেখাতে বাধ্য করা হয়। এই পরিস্থিতি এতটাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, স্থানীয়রা নিজেদের এলাকায় বন্দি বোধ করছেন। এক পাহাড়ি আদিবাসী মন্তব্য করেন, “রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত কতবার চেক করা হয় তার কোনো হিসাব নেই। আমরা পুরোপুরি কারাগারে আছি।”
এই পরিস্থিতি পাহাড়ি জনগণের স্বাধীনতাকে ক্রমাগতভাবে সংকুচিত করছে এবং তাদের মধ্যে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সেনাবাহিনীর চেকপোস্টগুলোতে এমন আচরণের কারণে পাহাড়ি জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রতিবাদের ধীর গতি
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী পাহাড়ি জনগণের উপর সেনা শাসনের চলমান নিপীড়নের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কায়কর কোন প্রতিবাদ হয়নি। বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু প্রতিবাদ দেখা গেলেও তা এখনও সংগঠিত আকারে প্রতিরোধে রূপ নেয়নি। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই এনিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। এছাড়া যারা প্রতিবাদ করছেন, তাদের অনেকেই নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন এবং অধিকাংশই নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিতে ভয় পাচ্ছেন।
সেনা শাসনের কঠোর নীতি এবং আদিবাসীদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি পাহাড়ি জনগণের জীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলছে। এক সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, “চুপ করে যতদিন থাকবে, ততদিন এই ভোগান্তির শিকার হতে হবে।”
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে এনআইডি কার্ড থাকার পরও সেনাবাহিনীর তল্লাশি, হয়রানি এবং সন্দেহজনক আচরণ একটি দৈনন্দিন সমস্যা। সেনা শাসনের অধীনে স্থানীয় আদিবাসীরা তাদের নিজস্ব পরিচয়ে এবং চলাচলের স্বাধীনতা হারাচ্ছেন। এনআইডি কার্ড থাকা সত্ত্বেও এই অঞ্চলে তা কার্যকরভাবে কোনো সুবিধা বা সুরক্ষা দিতে পারছে না। সেনা শাসনের কঠোর মনোভাব এবং প্রশাসনিক অনিয়মের কারণে স্থানীয় জনগণ প্রতিনিয়ত অসহায়তার মুখোমুখি হচ্ছেন, যা তাদের জীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলছে।
স্বপ্ন এবং দায়িত্ববোধ থেকে ধম্মইনফো-ডট-কম এর সূচনা। ২০১১ সালে বাংলায় প্রথম অনলাইন বৌদ্ধ সংবাদ পোর্টাল হিসেবে ধম্মইনফো যাত্রা শুরু করে, যা বৌদ্ধধর্ম, ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং নীতিমালা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রচারে পাঠকের ব্যাপক গ্রহণ যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা লাভ করে। ২০১২ সালে রামুতে মৌলবাদী হামলার পর এটি একটি শক্তিশালী সংবাদ মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তর বাংলা ভাষী বৌদ্ধদের কাছে পরিচিতি লাভ করে। যদিও নিরাপত্তাজনিত কারণে ২০১৮ সালে সাইটটি প্রকাশনা বন্ধ করা হয়, ২০২৪ সালে ধম্মবিরীয় ভিক্ষুর নেতৃত্বে এটি আবার চালু হলে ধম্মইনফো বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার, বাংলাদেশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে সংবাদ, ঐতিহাসিক নিদর্শন, মণিষীদের জীবনী প্রকাশ, এবং ধর্মীয় উন্নয়নে কাজ করছে