১৯২৪ সাল।তখনও নিকায় মিলন নিয়ে সুধী মহল আশার মুখ দেখছেন।ধর্মাঙ্কুর সভায় সেই ঐতিহাসিক মিলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংঘরাজ নিকায়(তৎকালীন বিভিন্ন নিকায় যেমন জিন সমাগম,ভিক্ষু সম্মিলনী, জম্বুদ্বীপ ভিক্ষুমহামন্ডল,সংঘরাজ ভিক্ষু মহামন্ডল ইত্যাদি), মহাস্থবির নিকায়সহ চাকমা,আরাকানের বিভিন্ন নেতৃত্ব স্থানীয় প্রধানগণ উপস্থিত হয়েছিল সেই মিলনে।
সে বছরের ৬ই ডিসেম্বর। এই মহামিলনের প্রথম সংগীতি অনুষ্ঠিত হয়।সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আরাকানের রম্যবতী নগরেরর সুপ্রসিদ্ধ শ্রীমৎ উঃ চন্দ্রমালা মহাস্থবির।
আরাকানের সুইজাদি বিহারধ্যক্ষ শ্রীমৎ উঃ তেজরাম মহাস্থবির, রেঙ্গুন লীটাজ্জীর শ্রীমৎ উঃ জটিলা মহাস্থবির, কর্মযোগী কৃপাশরণ মহাস্থবির, চট্টগ্রাম কলেজের পালি বিভাগের শিক্ষক ও চট্টগ্রাম বৌদ্ধ সমিতির (বর্তমান বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি) সভাপতি শ্রীমৎ ধর্মবংশ মহাস্থবির, পাঁচুরিয়ার রামধন মহাস্থবির, কর্তলার গুরাধন মহাস্থবির, হোয়ারাপাড়ার দূর্য্যোধন মহাস্থবির(অগ্রসার), সাতবারিয়া নবরত্ন বিহারের বঙ্গচন্দ্র মহাস্থবির, শাকপুরা বৌদ্ধ বালক সমিতির সুমঙ্গল স্থবির( বিনয়সম্মত প্রথম কঠিন চীবর আয়োজনকারী ও ত্রিরত্নাংকুর সমিতি পরে বাংলাদেশ বৌদ্ধ ভিক্ষু মহাসভার সংবিধান রচয়িতা ),
পাঁচখাইনের শশীমোহন মহাস্থবির, চট্টগ্রামের বোমাং রাজগুরু শ্রীমৎ উঃ চান্দা মহাস্থবির, কলিকাতা(কলকাতা)বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি অধ্যাপক সমন পূর্ণানন্দ স্বামী, বঙ্গজোয়ারার শ্রীমৎ ধর্মানন্দ মহাস্থবির, রেঙ্গুন চট্টল বৌদ্ধ সমিতির সভাপতি শ্রীমৎ সোমানন্দ সহ বিভিন্ন সংগঠনের নায়ক ও তাঁদের দলের প্রায় ১৫০ ভিক্ষুর উপস্থিতিতে এই মহামিলন অনুষ্ঠিত হয়।১৯২৪ সালে ১৫০ ভিক্ষু মানে কী হয়তো সবাই অনুমান করতে পারছেন।
মোট সাতটি অধিবেশনে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে নিকায় মিলনে বিনয়গত কোন সমস্যা নেই।তাই উনারা একত্রিত হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ভিক্ষুসীমা(তবু আজও কেন ভিক্ষুরা পারস্পরিক কাঁদা ছুড়াছুঁড়ি করে তা বোধগম্য নয়)।নিশ্চয় কোন দল থেরবাদ আদর্শিক না হলে মিলিত হতো না!!
সেই মহামিলনে ভিক্ষু হন নিকুঞ্জবিহারী শ্রমণ।তাঁর নাম দেন ধর্মদর্শী। পরে উনি মহাস্থবির নিকায়ের সংঘনায়ক(বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি)।
২য় সংঘরাজ পূর্ণাচার ধর্মধারী মহাস্থবির মহোদয়ের মানসপুত্র(শিষ্য)কর্মযোগী কৃপাশরণ মহাস্থবির। উনার যোগ্য শিষ্য ২৩ তম সংঘনায়ক ধর্মদর্শী মহাস্থবির।
বিষয়টি সম্ভব হয়েছে কৃপাশরণ নামক এই যুগসন্ধিক্ষণিক মহাপ্রাণের জন্যই।
বৌদ্ধ সমাজকে মিলিত করেছেন কর্মযোগী কৃপাশরণ মহাস্থবির। এখনও বিনয় সম্পর্কিত কোন পার্থক্য থাকলে সেদিন বিদগ্ধ পণ্ডিত, বিনয়বিশারদ ভিক্ষুরা মিলিত হতেন?
আমরা মহাস্থবির নিকায়, সংঘরাজ নিকায় এসব নিয়ে মেতে আছি।মূলত উভয় নিকায়ের ভিক্ষুরা ব্যক্তিগত জীবনে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শন করে তবে সাংগঠনিক কী এমন বাঁধা?
১৯৪০ সালের আগে নিকায় এতোটা প্রকট ছিল না।এর পর থেকেই লিখিত ভাবে দুই নিকায়ের ভিক্ষুরা কাঁদা ছুড়াছুঁড়ি করতে থাকেন।তাঁরা কোর্ট পর্যন্ত গেছেন!!
বিষয়টি খুব ভাবায়।আমাদের গর্ভের ধন কেশরী মহাস্থবির, পূর্ণাচার ধর্মধারী মহাস্থবির, অগ্রসার মহাস্থবির, বংশদীপ মহাস্থবির, জ্ঞানীশ্বর মহাস্থবির,প্রজ্ঞালোক মহাস্থবির, ধর্মদর্শী মহাস্থবির পরম্পরায় আরও অনেক ভিক্ষুসংঘ নিকায় মানতেন না।উনারাই কালের পূজ্য হয়ে রক্ষিত হয়েছে ইতিহাসে।সম্প্রতি বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবির, জ্যোতিপাল মহাস্থবির সহ আরও অনেক ভিক্ষুসংঘ আছেন যারা কেবল সমাজকে রক্ষায় নিবেদিত হয়েছেন।কোন নিকায়কে নয়।
আসুন আমরা বিভিন্ন দল করলেও আদর্শে অভিন্ন হই।নিকায় বিভিন্ন বৌদ্ধ রাষ্ট্রেও আছে তবে তারা আমাদের মত বিভৎসতায় লিপ্ত কি-না জানা নেউ!
আজ ভারত-বাংলায় বৌদ্ধধর্ম-সংস্কৃতির পুনর্জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা,
বিহার ও জগজ্জ্যোতি পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা কর্মযোগী কৃপাশরণ মহাস্থবির (২২ জুন ১৮৬৫-৩০ এপ্রিল ১৯২৬)-এর ৯৫তম মহান প্রয়াণ দিবস।
আজ মহান এই পূর্ণ পুরুষ সাংগঠনিক প্রতিভাকে গভীর শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি।উনার মত এমন সাহসী দৃপ্তবানের জন্ম হযেছিল বলেই আমরা একত্রিত হয়েছি।সৃষ্টি হয়েছে এক পরম ঐতিহাসিক অস্তিত্ব।
নিগূঢ় দায়বদ্ধতার খাতিরে চলুন এক থাকি।সময়টা আমাদের প্রতিকূলে প্রবাহিত হচ্ছে। এমন সময়েও এতো হীনমন্যতা ব্যর্থতা ছাড়া আরকিছুই নয়….
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পালি বিভাগের অধ্যায়নরত জনি বড়ুয়ার জন্ম চট্টগ্রাম রাউজান থানার পূর্ব আধারমানিক গ্রামে। স্কুল জীবনেই তাঁর লেখালিখির হাতেখড়ি। ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় যৌথ কাব্যগ্রস্থ ‘দ্যুতির বিচ্ছুরণ’। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও পত্র-পত্রিকায় জনি বড়ুয়ার বহু কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।