ধ্যান একটি প্রাচীন সাধনা, যার মাধ্যমে মানুষ মনের গভীর স্তরে প্রবেশ করে শান্তি খুঁজে পায়। তবে ধ্যানের শক্তি কেবল শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি আনয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি এক বিপুল শক্তির উত্স, যা জীবনকে নতুন আকার দিতে পারে। দীপা মা (ননীবালা বড়ুয়া) ছিলেন এমনই একজন মানুষ, যিনি শোকের মধ্য দিয়ে জীবনের প্রতিকূলতাকে জয় করে ধ্যানের মাধ্যমে নিজের এবং অন্যদের জন্য পথ তৈরি করেছিলেন। তিনি শুধুমাত্র ধ্যানশিক্ষকই ছিলেন না, ছিলেন এক জীবন্ত উদাহরণ, কীভাবে ধ্যান আমাদের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে।
শৈশব ও বিয়ে: জীবনের প্রথম সংগ্রাম
ননীবালা বড়ুয়ার জন্ম ১৯১১ সালের ২৫ মার্চ, চট্টগ্রামে। বাংলাদেশ তখনো ভারতীয় উপমহাদেশের অংশ, এবং বাঙালি সমাজে নারীদের শিক্ষার সুযোগ সীমিত ছিল। ফলে, ননীবালার জীবনে পড়াশোনার সুযোগ সেভাবে আসেনি। মাত্র ১২ বছর বয়সে তার বিয়ে হয় রজনী বড়ুয়ার সঙ্গে, যিনি একজন প্রকৌশলী ছিলেন এবং কর্মসূত্রে বার্মায় (বর্তমান মিয়ানমার) থাকতেন। এ সময়ে নারীর জীবনে বিয়ে ছিল একটি সাধারণ প্রবণতা, যেখানে একটি মেয়ের জীবন শুরুর আগেই সংসার আর পারিবারিক দায়িত্বের ভার তাকে বহন করতে হতো।
বিয়ের কিছুদিন পর, ননীবালার জীবনে শোকের মেঘ জমে। মাত্র ছয় বছর বিবাহিত জীবন কাটানোর পর, তার মা মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই বিজয় বড়ুয়ার দায়িত্ব তার ওপর পড়ে, যা তার জীবনের প্রথম বড় সংগ্রাম ছিল। মায়ের অভাব, সংসারের চাপ, এবং ভ্রাতৃত্বের দায়িত্ব—এসবের মধ্যে ননীবালা তার জীবনের প্রথম দুঃখকে সামাল দিতে শুরু করেন।
মাতৃত্ব ও সন্তানহারা মায়ের বেদনা
ননীবালার জীবন আরেক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় যখন তিনি প্রথম সন্তান জন্ম দেন। কোলজুড়ে আসা কন্যা সন্তানটি মাত্র তিন মাস বয়সেই মারা যায়। সন্তানহারা এক মায়ের এই অভিজ্ঞতা তাকে গভীরভাবে আঘাত করে। এর কিছু বছর পর, ৩৯ বছর বয়সে তিনি একটি কন্যা সন্তানের মা হন, যার নাম রাখা হয় দীপা। এই সময় থেকে সমাজে তিনি ‘দীপা মা’ নামে পরিচিত হতে থাকেন, এবং তার আসল নাম ননীবালা বড়ুয়া ক্রমে আড়ালে চলে যায়।
তবে শোক যেন তাকে পিছু ছাড়তে নারাজ ছিল। দীপার জন্মের দুই বছর পর তিনি আবারও সন্তানের মা হন, তবে তার ছেলে সন্তানও জন্মের কিছুদিন পর মৃত্যুবরণ করে। এর পরেই তার স্বামী রজনী বড়ুয়া মারা যান। স্বামী ও দুই সন্তানের মৃত্যুর শোকে দীপা মা একেবারে ভেঙে পড়েন। একদিকে স্বামীর মৃত্যু, অন্যদিকে ছেলেহারা মায়ের বেদনা—এই দুই শোক তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ করে তোলে। দীপা মা এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে হাঁটার শক্তিও হারিয়ে ফেলেন।
ধ্যানের দিকে পদক্ষেপ: শোক থেকে শান্তিতে
এই অসহায় মুহূর্তে দীপা মায়ের জীবনে আশার আলো নিয়ে আসেন অনাগারিক মুনিন্দ্রজী, যিনি তখন বার্মায় ধ্যান শিক্ষা দিচ্ছিলেন। মুনিন্দ্রজী জানতে পারেন দীপা মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা এবং তাকে বার্মার মহাসী সেয়াড বৌদ্ধবিহারে গিয়ে ধ্যান শেখার পরামর্শ দেন। দীপা মা মুনিন্দ্রজীর পরামর্শ মেনে ধ্যানচর্চার মাধ্যমে নিজের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে শুরু করেন। ধ্যানের মাধ্যমে তিনি শোক ও অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম হন। ধীরে ধীরে তিনি উপলব্ধি করতে পারেন যে, ধ্যান শুধু শারীরিক আরোগ্যের পথ নয়, এটি মানসিক প্রশান্তি এবং আধ্যাত্মিক মুক্তির একটি শক্তিশালী উপায়।
ধ্যানশিক্ষার যাত্রা ও আন্তর্জাতিক পরিচিতি
মহাসী সেয়াডর কাছ থেকে ধ্যানশিক্ষা নিয়ে দীপা মা ভারতে ফিরে আসেন এবং ধ্যান শেখানোর মাধ্যমে তার শিক্ষাদান শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে তিনি তার প্রতিবেশীদের ধ্যান শেখাতেন, কিন্তু তার ধ্যানশিক্ষার খ্যাতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ তার কাছে এসে ধ্যানশিক্ষা নিতে শুরু করে। ইউরোপ এবং আমেরিকার অনেক শিক্ষার্থী তার কাছ থেকে ধ্যান শেখার জন্য ভারতে আসতেন।
দীপা মায়ের অন্যতম প্রধান শিষ্য ছিলেন ড. রাষ্ট্রপাল মহাথের, যিনি তাকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করে তোলেন। রাষ্ট্রপাল মহাথের, যিনি পিএইচডি করার পর যোগ্য ধ্যানগুরুর সন্ধান করছিলেন, দীপা মায়ের কাছে এসে ধ্যানশিক্ষা গ্রহণ করেন এবং তাকে নিজের গুরু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ড. মহাথের বুদ্ধগয়ার আন্তর্জাতিক সাধনাকেন্দ্রে দীপা মায়ের নামে একটি ভবন প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার জীবন ও শিক্ষার ওপর একটি বই রচনা করেন। দীপা মা ইংরেজি না জানলেও, তার ধ্যানের বাণী বাংলায় বলতেন এবং অন্য কেউ তা ইংরেজিতে অনুবাদ করত।
বিশ্বখ্যাত শিষ্য ও শিক্ষার প্রভাব
দীপা মায়ের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক ছিল তার শিক্ষার বিস্তার, যা তিনি শুধু ভারত ও মিয়ানমারে সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং তার শিষ্যরা তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ধ্যানের মাধ্যমে ব্যক্তিগত মুক্তি এবং মনোযোগ বৃদ্ধির যে শক্তি রয়েছে, তা দীপা মায়ের শিক্ষার কেন্দ্রে ছিল। এই শিক্ষাগুলোকে গ্রহণ করে তার শিষ্যরা পৃথিবীর নানা প্রান্তে ধ্যানচর্চার মশাল বহন করেছেন, এবং তার মধ্যে কয়েকজন বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাদের মাধ্যমে দীপা মায়ের শিক্ষা শুধু আধ্যাত্মিক চর্চা নয়, বরং মানসিক প্রশান্তি এবং জীবনধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই শিষ্যরা দীপা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে তাকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করেছেন।
ড. রাষ্ট্রপাল মহাথের
ড. রাষ্ট্রপাল মহাথের দীপা মায়ের অন্যতম প্রধান শিষ্য এবং তার ধ্যানশিক্ষার বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জনে বড় ভূমিকা পালনকারী। ড. রাষ্ট্রপাল মহাথের ১৯৬৯ সালে পিএইচডি অর্জনের পর নিজেকে একজন যোগ্য ধ্যানগুরুর সন্ধানে ভারত ও বার্মার বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়েছিলেন। ধ্যানের জ্ঞান লাভের জন্য বিভিন্ন বিখ্যাত ধ্যানগুরুদের সঙ্গে তিনি সময় কাটান, কিন্তু তার কাছে দীপা মা ছিলেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী শিক্ষক। রাষ্ট্রপাল মহাথের অকপটে স্বীকার করেছিলেন যে, তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান ধ্যানের শিক্ষা তিনি দীপা মায়ের কাছ থেকেই পেয়েছিলেন। দীপা মা তার জীবনের শোক, বেদনা, এবং ধ্যানের অভিজ্ঞতা দিয়ে রাষ্ট্রপাল মহাথেরকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেন।
ড. রাষ্ট্রপাল মহাথের শুধু দীপা মায়ের কাছ থেকে ধ্যান শিক্ষা নেননি, তিনি নিজেও দীপা মায়ের শিক্ষাকে বিশ্বের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে পরিচিত করার কাজ করেন। তিনি দীপা মাকে গুরু বলে প্রচার করে ধ্যানের এই আচার্য্যাকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে আসেন। দীপা মায়ের সম্মানে বুদ্ধগয়ার আন্তর্জাতিক সাধনাকেন্দ্রে ‘বিদর্শনাচার্য্যা ননীবালা বড়ুয়া ভবন’ নামে একটি ভবনের নামকরণ করেন। এই ভবনটি আজও দীপা মায়ের শিক্ষার গুরুত্ব ও তার শিষ্যদের প্রতি তার গভীর প্রভাবের সাক্ষ্য বহন করে।
জোসেফ গোল্ডস্টাইন
জোসেফ গোল্ডস্টাইন ছিলেন আমেরিকার অন্যতম প্রথম ‘বিপাস্সনা’ ধ্যান শিক্ষক এবং ইনসাইট মেডিটেশন সোসাইটির (Insight Meditation Society) সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ধ্যানের ওপর তার ব্যতিক্রমী দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার জন্য তাকে আমেরিকায় ধ্যানচর্চার অগ্রদূত হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯৭৪ সালে, তিনি ও তার সহকর্মীরা আমেরিকায় ধ্যানকে একটি প্রতিষ্ঠিত ধ্যান পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সক্ষম হন।
জোসেফ গোল্ডস্টাইন দীপা মায়ের কাছ থেকে ধ্যানের মূল্যবান শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং তার শিক্ষা আমেরিকায় ছড়িয়ে দেন। গোল্ডস্টাইনের মতে, দীপা মায়ের ধ্যানের শিক্ষা ছিল একেবারে সরল এবং অত্যন্ত গভীর, যা ধ্যানচর্চাকে সহজ করে তোলে এবং প্রত্যেক মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলতে সক্ষম। তার ধ্যানের প্রভাব আজও আমেরিকান এবং ইউরোপিয়ান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাধান্য পেয়ে আসছে। জোসেফ গোল্ডস্টাইন বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন, যা সমকালীন বৌদ্ধধর্ম এবং ধ্যানের গুরুত্বকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে।
জ্যাক কর্নফিল্ড
জ্যাক কর্নফিল্ড ছিলেন একজন আমেরিকান লেখক ও শিক্ষক, যিনি থেরাভাদা বৌদ্ধধর্মের অধীনে ‘বিপাস্সনা’ ধ্যানচর্চার ওপর প্রচুর কাজ করেছেন। তিনি থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভারত ঘুরে ধ্যানশিক্ষা অর্জন করেন এবং ধ্যানের মাধ্যমে তার জীবনধারাকে পাল্টে ফেলেন। জ্যাক কর্নফিল্ড দীপা মায়ের কাছ থেকে তার ধ্যানশিক্ষার বড় একটি অংশ লাভ করেন এবং আমেরিকায় থেরাভাদা বৌদ্ধধর্ম ও বিপাস্সনা ধ্যানচর্চার প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
জ্যাক কর্নফিল্ডের নেতৃত্বে আমেরিকায় বিপাস্সনা আন্দোলন বিকশিত হয়, এবং তিনি এটি একটি প্রতিষ্ঠানিক ধ্যানশিক্ষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার কাজ ও লেখনী আমেরিকায় ধ্যানচর্চার গুরুত্ব ও উপকারিতা তুলে ধরতে সহায়তা করেছে। তিনি দীপা মায়ের শিক্ষাকে তার ধ্যানশিক্ষার মূল অনুপ্রেরণা হিসেবে বর্ণনা করেন এবং তার ধ্যানপদ্ধতি বিশ্বের বহু মানুষকে মানসিক এবং আধ্যাত্মিক প্রশান্তি লাভে সহায়তা করে চলেছে।
শ্যারন সাল্জবার্গ
শ্যারন সাল্জবার্গ নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলার লেখক এবং বিশ্বজুড়ে পরিচিত ধ্যান শিক্ষক। তিনি ইনসাইট মেডিটেশন সোসাইটির সহপ্রতিষ্ঠাতাদের একজন এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে ধ্যানচর্চা এবং বৌদ্ধ আধ্যাত্মিকতার প্রচারে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। শ্যারন সাল্জবার্গ দীপা মায়ের কাছ থেকে ধ্যানের গভীর জ্ঞান অর্জন করেন এবং তার জীবনধারা পরিবর্তন করেন।
শ্যারন সাল্জবার্গ তার নিজের জীবনে এবং তার শিক্ষার্থীদের জীবনে ধ্যানের গভীর প্রভাবের উদাহরণ হিসাবে দীপা মায়ের শিক্ষাকে বর্ণনা করেছেন। ধ্যানের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি, দুঃখ থেকে মুক্তি, এবং আত্ম-অন্বেষণ—এসব দীপা মায়ের শিক্ষারই ফল। শ্যারন সাল্জবার্গ বহু জায়গায় ধ্যান কর্মশালা পরিচালনা করেন এবং তার শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ধ্যানের প্রসার ঘটিয়েছেন।
দীপা মায়ের শিক্ষার বৈশ্বিক প্রভাব
দীপা মায়ের শিষ্যরা শুধু তার শিক্ষা নিয়ে নিজেরা ধ্যানচর্চা করেননি; তারা সেই শিক্ষা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছেন, বিশেষ করে পাশ্চাত্যে। তার শিষ্যরা দীপা মায়ের ধ্যানের শিক্ষা অনুসরণ করে আমেরিকা, ইউরোপ, এবং অন্যান্য দেশে ধ্যানচর্চা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তারা প্রতিটি শিক্ষার্থীকে দীপা মায়ের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা ও প্রজ্ঞা শিখিয়েছেন, যা কেবল আধ্যাত্মিক উন্নতির মাধ্যম নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শান্তি ও সমাধানের পথ হিসেবে কাজ করেছে।
ধ্যানকে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে দীপা মায়ের এই শিষ্যরা অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন। তারা ধ্যানকে শুধুমাত্র একটি আধ্যাত্মিক কার্যকলাপ হিসেবে নয়, বরং মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তির জন্য অপরিহার্য একটি মাধ্যম হিসেবে প্রচার করেছেন। দীপা মায়ের শিক্ষা আজও বিশ্বজুড়ে বহু মানুষের জীবনে শান্তি, আনন্দ, এবং মানসিক শক্তি এনে দিচ্ছে, এবং তার শিক্ষার প্রভাব পরবর্তী প্রজন্মের ধ্যান শিক্ষকদের মাধ্যমে অব্যাহত রয়েছে।
দীপা মায়ের শিক্ষা: ধ্যানের শক্তি ও গুরুত্ব
দীপা মা মনে করতেন যে ধ্যান কেবল আধ্যাত্মিক মুক্তির একটি পথ নয়, এটি শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তিরও একটি উপায়। তার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি জানতেন, ধ্যান মানুষকে শোক এবং দুঃখ থেকে মুক্তি দিতে পারে। দীপা মা বলতেন, “তুমি যদি মেডিটেশন করো, তুমিও সুখী হবে।” তিনি বিশ্বাস করতেন যে প্রতিদিনের ধ্যানচর্চা আমাদের মনের অব্যক্ত শক্তিকে মুক্ত করে এবং আমাদের জীবনকে পরিবর্তিত করতে সক্ষম।
দীপা মায়ের শিক্ষার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল:
1. ধ্যান হলো প্রতিদিনের অনুশীলন: তিনি তার শিষ্যদের সবসময় বলতেন যে ধ্যানচর্চা কোনো দেরির ব্যাপার নয়। “এখনই করো”—এটাই ছিল তার প্রধান পরামর্শ।
2. মনের ক্ষমতা: দীপা মা বিশ্বাস করতেন যে আমাদের মনের মধ্যেই সব কিছু আছে, এবং মনের শক্তি ব্যবহার করে আমরা জীবনকে নতুনভাবে দেখতে পারি।
3. নারী ও ধ্যান: তার মতে, নারীদের মনের স্বভাবত কোমলতা ধ্যানচর্চায় তাদের অগ্রগতি দ্রুততর করতে পারে। এ কারণে তিনি নারীদের ধ্যানচর্চায় বিশেষভাবে উৎসাহ দিতেন।
জীবনের শেষ দিন ও উত্তরাধিকার
দীপা মা তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ধ্যান ও ধ্যানশিক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৮৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর, তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার জীবন ছিল শোক, সংগ্রাম এবং ধ্যানের মধ্য দিয়ে একটি অভূতপূর্ব যাত্রা। তার শিক্ষা আজও ধ্যানচর্চাকারীদের জন্য প্রেরণার উৎস। দীপা মা প্রমাণ করে গেছেন যে, শোকের মধ্যেও আমরা শক্তি খুঁজে পেতে পারি, যদি আমরা মনের শক্তি কাজে লাগাই।
তার জীবন ও শিক্ষা আজও বৌদ্ধ ধ্যানচর্চা এবং আধ্যাত্মিক জগতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
তথ্য সূত্র:
প্রকাশক ও সম্পাদক, ধম্মইনফো-ডট-কম