দীর্ঘ ২২ বছর পর অবশেষে গ্রেপ্তার হলো চট্টগ্রামের রাউজান থানার একাধিক হত্যা এবং অস্ত্র মামলার অন্যতম আসামি আজিজুল হক (৫১)। দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকা এই কুখ্যাত অপরাধীকে র্যাব-৭ এর একটি বিশেষ দল চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালী থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
প্রেক্ষাপট: জ্ঞানজ্যোতি ভিক্ষুর নির্মম হত্যা
২০০২ সালের রাউজানের হিংগলা বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমে ঘটে যায় একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড। এই আশ্রমের পরিচালক জ্ঞানজ্যোতি ভিক্ষুকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এই বর্বর ঘটনার পর পুরো দেশ তখন স্তব্দ হয়েছিল। র্যাব-৭ এর প্রেস বিজ্ঞপ্তি জানায়, এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি আজিজুল হক দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে রাউজান থানার মামলা নং-৫(৫)২০০২ এবং জিআর-৯৩/০২ এর আওতায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
গ্রেপ্তার অভিযানের বিবরণ
রবিবার (২৪ নভেম্বর) গভীর রাতে চট্টগ্রামের লালদিঘি এলাকায় অভিযান চালিয়ে আজিজুল হককে গ্রেপ্তার করে র্যাব। একাধিক তথ্যসূত্রে জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছদ্মবেশে বসবাস করছিলেন এবং গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য একসময় বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছিলেন।
এ বছরের আগস্ট মাসে সরকার পরিবর্তনের পর তিনি দেশে ফিরে আসেন, যা শেষমেশ তার গ্রেপ্তারের পথ প্রশস্ত করে। র্যাবের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে কোতোয়ালী থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অপরাধী আজিজুল হকের পটভূমি
আজিজুল হক একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত, যার বিরুদ্ধে ১২টি মামলার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হত্যা, অস্ত্র পাচার, অপহরণ, চুরি এবং ডাকাতির মতো গুরুতর অপরাধ।
স্থানীয় সূত্রমতে, আজিজুল চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদেরের ঘনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তিনি রাউজান যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই রাজনৈতিক সংযোগ তাকে দীর্ঘদিন আইনের আওতার বাইরে থাকতে সাহায্য করেছে বলে ধারণা করা হয়।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মাহবুবুর রহমান বলেন, “আজিজুল হককে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”
স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া
জ্ঞানজ্যোতি ভিক্ষুর নির্মম হত্যাকাণ্ড আজও রাউজানের মানুষের হৃদয়ে গভীর দাগ রেখে গেছে। স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায় এই হত্যাকাণ্ডের সুবিচারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল। আজিজুল হকের গ্রেপ্তার সেই দাবির প্রতি একটি ইতিবাচক সাড়া বলে বিবেচিত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, এই গ্রেপ্তার শুধু একজন অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা যে অপরাধী যতই প্রভাবশালী হোক, শেষ পর্যন্ত আইনের আওতায় আসতেই হবে।
দীর্ঘ ২২ বছর পলাতক থাকার পর আজিজুল হকের গ্রেপ্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি শুধু একজন অপরাধীর বিচার নয়, বরং সমাজের প্রতি একটি বার্তা যে অপরাধীরা শেষ পর্যন্ত বিচার এড়াতে পারবে না। এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যার ন্যায়বিচার পাবে এমন আশা করছে।