চট্টগ্রাম, ২০২৪: চট্টগ্রামের জে এম সেন হল পূজামণ্ডপে ইসলামি গান পরিবেশনের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক পূজামঞ্চে ইসলামি গান পরিবেশন করছেন, যা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। ঘটনার প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন, এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করার আশ্বাসও দেন।
ঘটনার বিবরণ
ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে, চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জের জে এম সেন হল পূজামঞ্চে। চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এই পূজামণ্ডপ চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পূজামঞ্চ হিসেবে পরিচিত। উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিস্ময় প্রকাশ করেন যখন পূজামঞ্চে ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম/বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’ গানটি পরিবেশিত হয়।
ভিডিওটি দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কিছু মানুষ গানটিকে সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে দেখলেও, অধিকাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বী এটিকে তাদের ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত হিসেবে বিবেচনা করেছেন। পূজার মঞ্চে ইসলামি গান পরিবেশন করাকে তারা অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেছেন।
বিভ্রান্তি ও মতবিরোধ
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি নিয়ে দুই ধরনের মত প্রকাশ পায়। একপক্ষ ভিডিওটি এডিটেড বলে দাবি করলেও, আরেকপক্ষ ভিডিওটিকে আসল ও সম্পূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানারও জানায়, ভিডিওটি এডিটেড নয়, এবং ঘটনা আসল।
কারা ছিলেন গান পরিবেশনে?
ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ছয় সদস্য মঞ্চে উঠেছিলেন। প্রথমে তারা ‘গেরামের নওজোয়ান, হিন্দু মুসলান’ শীর্ষক একটি দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন। এরপর তারা ইসলামি গানটি পরিবেশন করলে উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। গানটির গীতিকার চৌধুরী আবদুল হালিম এবং এতে উল্লেখ ছিল, “বিশ্ব মানুষের মুক্তির শেষ পথ বিপ্লব, ইসলামী বিপ্লব।”
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম পূজামণ্ডপে গিয়ে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। তিনি জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে এবং তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথেও আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংগঠনের প্রতিক্রিয়া
চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামান দাবি করেছেন, তাদের সংগঠন শুধুমাত্র সম্প্রীতির বার্তা দিতে দুটি গান পরিবেশন করেছে এবং এটি কোনো উস্কানিমূলক কাজ নয়। তিনি অভিযোগ করেন, কিছু ব্যক্তি ভিডিওটি এডিট করে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তবে পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্ত, যিনি এই যুবকদের মঞ্চে ডাকেন, তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বহিষ্কার ও পদক্ষেপ
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ ভট্টাচার্য্য জানান, এই ঘটনার পর যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তকে পরিষদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা এবং এর পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর জন্য পরিষদ আরও সতর্কতা অবলম্বন করবে।
এই ঘটনার পর চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে প্রশাসন ও কমিটিগুলোর আরো সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা জরুরি মনে করছে সাধারণ জনগণ।