ধম্মইনফোধম্মইনফোধম্মইনফো
Font ResizerAa
  • গৌতম বুদ্ধের জীবনী
  • সর্দ্ধম নীতি ও শিক্ষা
  • ইতিহাস
  • সংস্কৃতি
  • সাহিত্য
  • জীবনী
  • প্রবন্ধ
  • সংবাদ
আপনি অধ্যায়ন করছেন: নিকায় ভেদ ও তার প্রভাব
Share
ধম্মইনফোধম্মইনফো
Font ResizerAa
Search
  • গৌতম বুদ্ধের জীবনী
  • সর্দ্ধম নীতি ও শিক্ষা
  • ইতিহাস
  • সংস্কৃতি
  • সাহিত্য
  • জীবনী
  • প্রবন্ধ
  • সংবাদ
Have an existing account? সাইন ইন
আমাদের অনুসরণ করুন
© 2022 Foxiz News Network. Ruby Design Company. All Rights Reserved.
ধম্মইনফো > Blog > সাহিত্য > প্রবন্ধ > নিকায় ভেদ ও তার প্রভাব
প্রবন্ধ

নিকায় ভেদ ও তার প্রভাব

আনন্দমিত্র মহাথের
সর্বশেষ আপডেট: December 3, 2024 5:05 pm
আনন্দমিত্র মহাথের
Share
SHARE

‘‘দুল্লভো মনুস্সত্তানং বুদ্ধপ্পাদো চ দুল্লভো দুল্লভা খণসম্পত্তি সদ্ধম্মো পরম দুল্লভো। সুদুল্লভো লভিত্বান পব্বজ্জং জিনসাসনে; সীলাদি সংগহয় খেমং এস মগ্গো বিসুদ্বিয়া।”

মানব জীবনে লাভ দুর্লভ, বুদ্ধোৎপত্তি দুর্লভ, ক্ষণ-সম্পতি দুর্লভ, সদ্ধর্ম পরম দুর্লভ। জিন-শাসনে সূদুর্লভ প্রব্রজ্যা লাভ করে নির্ভয় শীল-সমাধি প্রজ্ঞার পূরণই বিশুদ্ধির (নির্বাণের) মার্গ।

লোভাদি ক্লেশরাশি জন্ম-মৃত্যুর মাধ্যমে জীবগণকে দুঃখময় অপার সংসার-সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। এই ক্লেশরাশি বিনাশ করতে পারলেই সর্বদুঃখ হতে মুক্তি মিলে। অগ্নির তিন অবস্থার ন্যায় ক্লেশেরও তিন অবস্থা। অগ্নির জন্মাচ্ছন্ন অবস্থার ন্যায় ক্লেশের ‘অনুশয়’ অবস্থা। জ্বলন্ত অঙ্গারে শিখাহীন অগ্নির ন্যায় ক্লেশের ন্যায় ‘উত্থান’ অবস্থা এবং শিখাহীন জ্বলন্ত অগ্নির ন্যায় ক্লেশের ‘ব্যতিক্রম’ অবস্থা।

শীল পালনে ক্লেশ ‘ব্যতিক্রম’ অবস্থা প্রাপ্ত হতে পারে না, সমাধি প্রাপ্তিতে ক্লেশের ‘উত্থান’ অবস্থা বিদূরীত হয় এবং পূর্ণতায় ‘অনুশয়’ অবস্থা হতেও ক্লেশ বিনষ্ট হয়। তাতেই সর্বদুঃখ হতে মুক্তি লাভ হয়।

নির্বাণ– মার্গের প্রথম ধাপ শীল, দ্বিতীয় ধাপ সমাধি এবং তৃতীয় ধাপ প্রজ্ঞা। ‘‘পঞ্ঞায় পরিসুজ্ঝতি”- প্রজ্ঞা দ্বারাই পরিশুদ্ধি (নির্বাণ) অধিগত হয়। শীলকে বাদ দিলে সমাধি হয় না, সমাধি ব্যতিত আকাশ কুসুমবৎ কল্পনা মাত্র।

- Advertisement -

ভিক্ষু-ভিক্ষুণীর প্রতিপাল্য নিয়মের (শীল-সদাচারের) পরিপূর্ণ ব্যাখ্যাই ‘বিনয়-পিটক’ এবং সমাধি ও প্রজ্ঞার সুবিস্তৃত বিশ্লেষণই ‘সূত্র ও অভিধর্ম পিটক’। বিনয় এবং ধর্ম (সূত্র ও অভিধর্ম) উভয়ই এক একটি ক্রমগম্ভীর মহাসমুদ্রতুল্য। বিনয়ে সুপন্ডিত ব্যক্তিগণ ধর্মের সুব্যাখ্যাত ক্রম-গম্ভীর ধারা দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হন।

শরীর এবং মন নিয়ে মানুষ। শরীরকে রোগমুক্ত এবং মনকে ক্লেশ মুক্ত করতে পারলেই মানবের সর্বার্থ সিদ্ধ হয়। শরীরকে রোগমুক্ত করবার জন্য চিকিৎসাশাস্ত্র এবং মনকে ক্লেশমুক্ত করবার জন্যই ধর্মশাস্ত্রের আবিস্কার হয়েছে। চিকিৎসা শাস্ত্রে সুবিজ্ঞ চিকিৎসক প্রদত্ত ঔষধ সেবনে রোগী রোগমুক্ত হয়। সেই চিকিৎসকের অভাবে তাঁর সর্বরোগ বিনাশক সর্বৌষধ সম্পন্ন ঔষধালয় হতে রোগী যদি সেই চিকিৎসব ও তার ঔষধের প্রতি অন্ধ ভক্তিবিশ্বাষে সর্ববিধ ঔষধ সেবন করতে থাকে, তার রোগ ধ্বংস না হয়ে যেমন বর্ধিত হয়,সেরুপ সর্বজ্ঞ বুদ্ধের অভাবে তৎকর্তৃক দেশিত ও প্রজ্ঞাপ্ত সু-ব্যাখ্যাত ধর্ম বিনয় একান্ত মহামঙ্গঁলদায়ক মনে করে অন্ধ ভক্তি-বিশ্বাষে কোন ভিক্ষু যদি নিজের পক্ষে অনুপকারী ধর্ম-বিনয়ের নিয়ম পালন করতে যায়, তাতে তার নিজের ও সমাজের মহাক্ষতি হয়ে থাকে। মনে রাখতে হবে এক খাদ্যও সর্বশরীরে এমনকি একই শরীরে সব সময় সমান কাজ করেনা, শাস্ত্রে উক্ত হয়েছে ‘‘বেজ্জো বিয় বুদ্ধো, ভেসজ্জং বিয় ধম্মো, রোগমুত্তো পু¹লো বিয় সংঘো’’- বৈদ্যের মতো বুদ্ধ ভৈষজ্যের মত ধর্ম ও রোগমুক্ত ব্যক্তির মত সংঘ।

শরীরকে রোগমুক্ত করবার জন্যই ঔষধ সেবন; ঔষধ সেবন করবার জন্য শরীর নয়। সেরুপ জীবনকে ক্লেশমুক্ত করবার জন্য ধর্মের সেবা; ধর্মের সেবার জন্য জীবন নয়।

বিদ্যালয়ে যেমন শিশু শ্রেণী হতে মাষ্টার ডিগ্রী শ্রেণীর ছাত্র আছে, তেমনি বিশ্বে অতি নিন্মস্তর হতে অতি উচ্চস্তরের মানব বিদ্যমান, শিক্ষাপরিষদ কর্তৃক সকল শ্রেণীর ছাত্রের জন্য নির্বাচিত উৎকৃষ্ট পুস্তকগুলি যেমন সকল ছাত্রের উপকারী হতে পারে না,তেমন বুদ্ধ প্রজ্ঞাপ্ত ধর্ম বিনয়ের সব নিয়ম সকল ভিক্ষু ও গৃহীর উপকারী হতে পারে না। তদ্ধেতু প্রত্যেক ভিক্ষু এবং গৃহীকে আপন আপন উপযোগী ধর্ম-বিনয়ের নিয়মগুলি নির্বাচন করে সেভাবেই জীবনকে গঠন করতে হবে।

রবীন্দ্রনাথ ‘বিচিত্রা’র ৪১৫ পৃষ্টায় বলেছেন,-

‘‘ আর সব জিনিস পরের হাত হইতে লওয়া যায়; কিন্তু ধর্ম যদি নিজের না হয় তবে তাহা মারে- বাচাঁয় না।”

গাছের পাতা গাছ নয়, তেমন ধর্মীয় আচারও ধর্ম নয়। কিন্তু পাতা ব্যতিত গাছ বাচেঁনা। তেমনি ধর্মীয় আচার ব্যতিত ধর্ম্ লোপ পায়। গাছের সারান্বেষী যেমন গাছের পাতা, ছোট বড় শাখা এমন কি গাছের মূল এবং কান্ডের ছাল বাকলও ত্যাগ করে কান্ডের ভিতর হতেই সার গ্রহন করে, তেমনি ধর্মীয় আচার ব্যতিক্রম করেই ধর্মের সার পেতে হয়।

ধর্ম প্রবক্তাগণ দেশ-কাল-পাত্র ভেদে মানবের মঙ্গঁলের জন্য ধর্মীয় আচার-আচরনের নিয়ম প্রজ্ঞাপ্ত করেছেন। মানুষ বহুক্ষেত্রে সত্য বুঝতে না পেরে ঐ নিয়মের অপব্যবহার করে নিজের ও মানব সমাজের মহাক্ষতি করে থাকে। ধর্মের প্রতি অন্ধ শ্রদ্ধা বশতই ধর্মীয় আচারকে সার মনে করে ধর্ম নিয়ে এমন কি একই ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও কত তর্ক-বিতর্ক, বাদ-বিবাদ এবং ভাগাভাগী হয়। ধর্মের প্রতি অন্ধ বিশ্বাসবশতই ধর্মযুদ্ধ পৃথিবী বহুবার নররক্তে প্লাবিত হয়েছে। এজন্যই মনীষী কার্ল মার্কস বলেছেন- ‘‘ধর্ম মানব-সমাজের মহা অনিষ্টকারী আফিং”।

রবীন্দ্রনাথ ‘বিচিত্রা’র ৪৮৩ পৃষ্টায় বলেছেন, ‘‘আচারকে শক্ত করে তুললে বিচারকে ঢিলে করতে হয়। বাইরে থেকে মানুষকে বাধলে মানুষ আপনা আপনি বাঁধিবার শক্তি হারায়।”

স্বামী বিবেকান্দ বলেছেন, ‘‘অনেকের বাহ্য আচার ও বিধিনিষেধর জালেই সমষ্টি কেটে যায়; আত্মচিন্তা গম্ভীর মধ্যে থাকলে আত্মার প্রসারতা হবে কি করে। যেখানে যাই দেখি-উদ্দেশ্য বাদ দিয়ে ধর্মের আচার নিয়েই কেবল লাঠালাঠি। কামিনী কাঞ্চনের আসক্তি যেখানে দেখবি কমতি, সে যে মতের লোক হোক না কেন, তার জানবি শক্তি জাগ্রত হচ্ছে।”

বিনয় মতে চার ‘পারাজিকা’ ও তের ‘সংঘদিসেস’ এই সতেরটি ভিক্ষুর ‘শীল’। এদের যে কোন একটির লঙ্গনে ভিক্ষুকে ‘দুশীল’ বলা হয়।অন্যান্য শিক্ষাপদগুলি ‘আচার’। এদের লঙ্ঘনে ভিক্ষুকে বলা হয ‘অলজ্জী’। উন্নতকারী জ্ঞানী ভিক্ষুকে প্রয়োজনে বহু আচারশীল লঙ্ঘন করতে হয়। যেমন বুদ্ধকর্ত্তৃক সবচেয়ে বেশী দোষাবহ বলে নিন্দিত অর্থ বর্তমানের ভিক্ষুরা নিয়ত গ্রহণ করে তৎসম্বন্ধীয় বহু শিক্ষাপদ নিত্যই গ্রহণ লঙ্ঘন করছেন। তা ছাড়াও বিনয়ের সতের হাজার কোটি, পঞ্চাশ লক্ষ, ছত্রিশটি শিক্ষাপদের মধ্যে কত শিক্ষাপদ প্রত্যেক ভিক্ষু দৈনিক লঙ্ঘন করেছেন তার হিসার নেই। নতুবা তাদের যোগ্যতাসনুযায়ী তারা নিজের ও সমাজের হিত করতে পারছেন না। ধ্যানী ভিক্ষুদের নিয়ম শিক্ষার্থী এবং সমাজ কর্মী ভিক্ষুদের পক্ষে পালন করা সম্ভবও নয় এবং উপকারীও নয়। বিচারশীল জ্ঞানী ব্যতীত ধর্মান্ধরা এ সত্যের মূল্য বুঝতে পারবে না।

ভিক্ষুদের এবং বুদ্ধশাসনের হিতের জন্য মিলনের যেমন প্রয়োজন, ভেদেরও তোমন প্রয়োজন আছে। হিতের জন্যই বিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে শ্রেণীভেদ এবং এক শ্রেণীর ছাত্রদের মধ্যেও পরীক্ষায় অসমান নম্বর দিয়ে পার্থক্যের সৃষ্টি করা হয়। অতএব, ভেদ সর্বক্ষেত্রে অমঙ্গঁল জনক হতে পারে না। ভিক্ষু এবং বুদ্ধ শাসনের উন্নতির জন্য ভিক্ষুদের নিকায়ভেদের বিষয় বিনয়ে উক্ত হয়েছে। অজ্ঞানীরা সত্য না বুঝে উন্নতিমূলক ভেদকে অবনতির হেতু করে নিজের, সমাজের এবং বুদ্ধ শাসনের ক্ষতিই করে থাকে।

চট্টগ্রামের ভিক্ষুদের নিকায়-ভেদের কারণ অনেকেই অবগত আছেন। এ ভেদ সম্পাদিত হয় শতাব্দীরও পূর্বে, এ পর্যন্ত তা চলে এসেছে। এ ভেদের প্রধান কারণ দেখান হয় বিশ বৎসর বয়স পূর্ণ হবার আগে যাদের উপসম্পদা হয়েছে, বিনয় মতে তাঁদের উপসম্পদা অশুদ্ধ। বিনয় এ শিক্ষাপদ প্রজ্ঞাপ্তির পূর্বে বুদ্ধ বহু ব্যক্তিকে উপসম্পদা দিয়েছিলেন- সে পূর্ণ সত্যও অনেকের জানা। পরের প্রজ্ঞাপ্তিতে বয়সের অপূর্ণতা ব্যতীত আরও কয়েকটি কারণের যে কোন একটির অপূর্ণতায় উপসম্পদা অশুদ্ধ হয় বলে বিনয়ে উক্ত হয়েছে। উক্ত কারণ সমূহের পরিপূর্ণ তাতেই উপসম্পদা কেবল শুদ্ধ হয়।

বয়সের অপূর্ণতার জন্য যে নিকায় ভিক্ষুদের উপসম্পদা অশুদ্ধ বলা হয়, পরে সে নিকায়ের ধর্ম বিনয়ে অভিজ্ঞ ভিক্ষুগণ কর্তৃক বিনয়ের বিধানানুসারে যে উপসম্পদা দেওয়া হয়, তাও যদি যে অশুদ্ধ বলা হয় এবং কারণ দেখান যে অশুদ্ধ উপসম্পন্নগণ যে উপসম্পদা দেবেন তা শুদ্ধ হতে পারে না। এধারনাকে দৃঢ়ভাবে ধরে থাকলে কখনও ভিক্ষুদের নিকায় ভেদ দূর হওয়া সম্ভব নয়।

যে নিকায়ের ভিক্ষুগণ ভিক্ষুপরম্পরা বিশ বৎসর পর উপসম্পদা হয়েছেন বলে নিজেদের উপসম্পদা শুদ্ধ মনে করেন, বয়স ব্যতীত অন্য যে কয়টি অপূরর্ণতার উপসম্পদা অশুদ্ধ হয় বলে বিনয়ের উক্ত হয়েছে, তাঁদের এবং তাঁদের পূর্ববর্তী ভিক্ষুদের উপসম্পদার সময় উক্ত সব বিষয় পরিপূর্ণ ছিল বলে, অন্ধ বিশ্বাস ব্যতীত তাঁরা তা সঠিক ভাবে জানেন? অতএব, উপসম্পদা শুদ্ধতা অশুদ্ধতা নিয়ে এত গোলমাল করার সার্থকতা কোথায়?

অন্যপক্ষে, চট্টগ্রামের এক নিকায়ের কতেক ভিক্ষু অন্য নিকায়ের ভিক্ষুদের উপসম্পদা অশুদ্ধ মনে করে তাঁদের অভিক্ষু বললে ঐ ভিক্ষুদের কি আসে যায়, তাঁরা নিজে জানেন যে তাঁদের উপসম্পদা বিনয় সম্মত এবং তাঁরা পরিশুদ্ধ ভিক্ষু। শুধু তা নয়, জগতবাসী ভিক্ষু ও গর্ভণমেন্ট হতে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সকল গৃহী তাঁদের শুদ্ধ ভিক্ষু মনে করে পূজা সম্মান ও গৌরব করেন।

বিশেষতঃ বুদ্ধ স্বয়ং জন্মের দ্বারা কারো শুদ্ধি বা অশুদ্ধিকে সমর্থন করেন নি, উন্নতি লাভের পক্ষে তা অন্তরায়করও হয় না, সংঘে তাই অতি নীচ জাতেরও স্থান বিদ্যমান। বুদ্ধ ‘বসল সুত্তে’ বলেছেন, চন্ডাল পুত্র সোপক মাতঙ্গ ঋষি নামে বিখ্যাত ছিলেন। তাঁর হীনকুলে জন্ম তাঁর ব্রহ্মলোকোৎপত্তির অন্তরায় করতে পারেনি। বহু প্রসিদ্ধ ক্ষত্রিয় এবং ব্রাহ্মন তাঁর সেবা পুঁজা করতেন। জন্মের দ্বারা নয়, কর্মের দ্বারাই মানব ব্রাহ্মন বা চন্ডাল হয়।

ধর্ম-বিনয় স্বরুপ ব্যাখ্যা-প্রসঙ্গে বুদ্ধ গৌতমীকে বলেছেন, গৌতমী! তুমি একান্তই জানবে যে যা তৃষ্ণা-সংযোগ –গ্রহণ-সঞ্চয়-মহেচ্ছা-অন্তষ্টি-সংসর্গ-দুষ্পোষণীয়তা ও প্রমত্ততা বর্ধন করে তা ধর্মও নয়, বিনয়ও নয় এবং শাস্তার শাসনও নয়। তদ্বিপরীতই ধর্ম, বিনয় ও শাস্তা। অঙ্গুত্তর নিকায়।

মধ্যম নিকায়ের কুল্লপম সুত্তে বুদ্ধ বলেছেন-নদী অতিক্রমকারীর জন্য যেমন ভেলার মহোপকারী বলে পারগত ব্যক্তিকে যেমন তাকে বহন করে নিয়ে যায়না; তেমন ভবনদী অতিক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে মহোপকারী ধর্ম বিনয়ের আর প্রয়োজন হয় না।

ঐ গ্রন্থের অলগদ্দুপম সুত্তে বুদ্ধ বলেছেন ঘোরবিষ অলগদ্দকে (সর্প) যথাযথ ধরতে না পারলে তার দংশনে যেমন মহাযন্ত্রনা; এমন কি মৃত্যুও ভোগ করতে হয়; তেমন ধর্ম বিনয়কে যথাযথ গ্রহণ করতে না পারলে সেই ধর্ম-বিনয়ই নিজের ওপরের ইহ এবং পরজীবনের মহাদুঃখের কারণ হয়ে থাকে।

যে ক্ষেত্রে ভেদ থাকা উচিত সে সেক্ষেত্রে ভেদ না করলে এবং যে ক্ষেত্রে ভেদ করা উচিত নয়; সে ক্ষেত্রে ভেদ করলে কিছুতেই মানবের মঙ্গল হতে পারে না। বুদ্ধ বাক্য হচ্ছে-‘‘ কম্মং সত্তে বিভজিত যদিদং হীনপ্পণীততায়িত” কর্মই প্রাণীদের উচু-নিচু করে থাকে-জন্ম নয়। যে কোন নিকায়ের ভিক্ষু হোক না কেন, তাঁর হীন কর্মদ্বারা তিনি হীন হন এবং উত্তম কর্মদ্বারা উত্তম হন। অতএব, যে কোন নিকায়; জাতি বা দেশের ভিক্ষু হোক না কেন; আপন যোগ্যতানুসারে আত্ম-পরিহিত মূলক সৎকর্ম সম্পাদন দ্বারা শ্রেষ্ট ভিক্ষু-জীবনের সার্থকতা সম্পাদন করা উচিত।

চট্টগ্রামের কোনও নিকায়ের ভিক্ষুগণ গৃহীদের বাড়ীতে শ্রামণদের সাথে বসে খেতে দোষ মনে করেন না। অথচ ভিন্ন নিকায়ের ভিক্ষুদের সাথে সংঘদান গ্রহণ করতে ও খেতে বসেন না। এত কি তাদের শুদ্ধ উপসম্পদা অশুদ্ধ হয়ে যাবে। এবং নিষ্পাপ শুভ্র জীবন পাপ-কালিমালিপ্ত হয়ে কলুষিত হয়ে যাবে বলে মনে করেন, জানি না। অথচ চট্টগ্রাম ব্যতীত অন্য কোন স্থানে তাদের দ্বারা ঐ সব কাজ অনায়াসে করা হয়, তাতে কোনও দোষ মনে করা হয় না। এতে কি ঐ ভিক্ষুদের হীনতা এবং ধর্ম বিনয়ে অজ্ঞতা জনসাধারণের নিকট প্রকট হয় না? তারা আবার বক্তৃতা দেবার সময় বুদ্ধের বিশ্ব মৈত্রীর কাথা জোরগলায় বলে থাকেন এবং প্রতিদিন নিমন্ত্রিতদের বাড়িতে ‘ করনীয় মেত্তসুত্ত’ আবৃত্তি করে থাকেন। এই সূত্রের অর্থের প্রতি কি কখনও লক্ষ্য করা হয়? মৈত্রী ভাবনায় নিজ মিত্র, মধ্যস্থ ও শত্র“ এ চার জনের মধ্যে অভেদ দর্শন করতে না পারলে ‘‘সীমাসন্তেদ” হয় না। ‘সীমাসন্তেদ’ না হলে ‘উপাচার’ সমাধিও হয় না। আর অপনার কথাই বা কি।

ধর্ম ও বিনয়ে অনভিজ্ঞ, অল্পাভিজ্ঞ বা অভিজ্ঞ ভিক্ষুগণ ধর্ম-বিনয় প্রজ্ঞাপ্তির উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে নিজেদের স্বার্থান্ধতা বা অহমিকার বশীভূত হয়ে ধর্ম বিনয়কে অন্যায়ভাবে প্রয়োগ করে মানব সমাজের ও বুদ্ধশাসনের মহাক্ষতি করে থাকেন।

চলমান………………

আনন্দমিত্র মহাথের
আনন্দমিত্র মহাথের
Subscribe to Our Newsletter

Subscribe to our newsletter to get our newest articles instantly!

ধম্মইনফো এর সকল আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

এই ধম্মইনফোটি শেয়ার করুন
টুইটার ইমেইল লিং কপি করুন প্রিন্ট
পূর্বের ধম্মইনফো রাঙ্গামাটি রাঙামাটিতে বাস উল্টে ২৭ জন আহত
পরবর্তী ধম্মইনফো আজান সিরিপানিও আজান সিরিপানিও : বিলিয়ন ডলারের উত্তরাধিকারী থেকে বনবাসী সন্ন্যাসী
আপনার ভাবনা শেয়ার করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বাধিক পঠিত ইনফো

প্রবারণা ও ফানুস
ধর্মীয় বিষয়কে উৎসবে পরিণত করার নেতিবাচক প্রভাব: প্রবারণা পূর্ণিমা ও ফানুস উড়ানো
প্রবন্ধ
নিউইয়র্ক
নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসে বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিকাণ্ড: দুইজনের মৃত্যু
সংবাদ
বাংলাদেশ
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি: ধর্মনিরপেক্ষতার সংকট ও সহিংসতার পুনরাবৃত্তি
নির্বাচিত
লুম্বিনী হাতে আঁকা ম্যাপ
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান যেভাবে খুঁজে পান এক বাঙালি
ইতিহাস ঐতিহ্য নির্বাচিত
বৌদ্ধ ভিক্ষু
বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নিরাপত্তা উদ্বেগ : তিন পার্বত্য জেলায় এ বছর ‘কঠিন চীবর দান’ না করার সিদ্ধান্ত
নির্বাচিত সংবাদ
হেনেপলা গুনারত্ন মহাথেরে
শ্রীলংকার গ্রাম থেকে আমেরিকার মহাঅরণ্যে: হেনেপলা গুনারত্ন মহাথেরের জীবন, দর্শন এবং অবদান
জীবনী

আরো ইনফো পড়ুন

শ্রীবিশুদ্ধানন্দ মহাথের
ইতিহাস

রক্তঝরা দিনগুলোতে: শ্রীবিশুদ্ধানন্দ মহাথের

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অবস্থা এবং ভুমিকা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন। ২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর। মুখবন্ধ গিরিরাজ হিমালয়ের হিমবাহু…

37 বার পাঠ করেছে
বৈষম্যহীন রাষ্ট্র
প্রবন্ধ

বৈষম্যহীন রাষ্ট্র নির্মাণে বৌদ্ধ ধম্মের ভূমিকা

ব্রাহ্মণ্য পৌরহিত্যবাদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান করার ক্ষমতা রয়েছে কেবল বৌদ্ধ ধম্মের মধ্যেই। বৌদ্ধ ধম্মের তত্ব সমূহ ব্রাহ্মণ্যবাদের অলীক বিশ্বাস সমূহের…

5 বার পাঠ করেছে
স্বাধীনতা সংগ্রামে বৌদ্ধ
গবেষণা

স্বাধীনতা সংগ্রামে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অবদান : একটি সমীক্ষা

লেখক বড়ুয়া জয়ের এই প্রবন্ধে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অনন্য ভূমিকা ও অবদান বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রবন্ধটি মুক্তিযুদ্ধের…

1 বার পাঠ করেছে
মুক্তি যুদ্ধে বৌদ্ধদের অবদান
ইতিহাসনির্বাচিত

মুক্তি যুদ্ধে বৌদ্ধদের অবদান

রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসের সাথের এদেশের বৌদ্ধরাও জড়িত। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোরনের কর্ম ধারাকে অব্যাহত রেখে  রাঙালি বৌদ্ধসম্প্রদায় পাক…

9 বার পাঠ করেছে
Logo dark logo

আমাদের ইনফো

  • ধম্মইনফো সর্ম্পকে
  • যোগাযোগ
  • উপদেষ্টা
  • অর্থায়ন
  • ইনফো প্রেরণ করুন

গৌতম বুদ্ধের জীবনী

  • জন্ম
  • শৈশব কাল
  • বিবাহ
  • গৃহ ত্যাগ
  • বুদ্ধত্ব লাভ
  • ধর্ম প্রচার
  • মহাপরিনির্বাণ

বিশ্ব বৌদ্ধ ইনফো

  • এশিয়া
  • ইউরোপ
  • আফ্রিকা
  • উত্তর আমেরিকা
  • দক্ষিণ আমেরিকা

স্বদেশ ইনফো

  • জীবনী
  • ইতিহাস
  • সাহিত্য
  • ঐতিহ্য
  • সংস্কৃতি

আরো ইনফো

  • সম্পাদকীয়
  • গবেষণা
  • নির্বাচিত
  • সংবাদ

মিডিয়া ইনফো

  • ইউটিউব
  • ফেইসবুক
  • ইনস্টাগ্রাম
  • টুইটার

স্বত্ব © ২০১১-২০২৪ ধম্মইনফো সম্পাদক ও প্রকাশক: ধম্মবিরীয় ভিক্ষু

বৌদ্ধ
ধম্মইনফো তে আপনাকে স্বাগতম!

* ধম্মইনফো তে নিয়মিত লিখে আপনিও অবদান রাখুন। * ধম্মইনফো লেখা আপনার বন্ধু/পরিচিত জনের সাথে বেশী বেশী শেয়ার করুন।

Welcome Back!

Sign in to your account

পার্সওয়ার্ড ভুলে গেছেন?